• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম ভালোবাসার বিধান

  • প্রকাশিত ২১ নভেম্বর ২০২০

মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

নারী-পুরুষের মধ্যকার প্রেম-ভালোবাসা মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম। যা গভীর অনুভূতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম-ভালোবাসা জায়েজ। তবে সেটা বৈধ পদ্ধতিতে হতে হবে। নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে হতে হবে। আর যদি এটা কোনো বেগানা যুবতী মেয়ের প্রতি যৌন উত্তেজিত প্রেম থাকে অর্থাৎ কোনো বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম-ভালোবাসা হারাম। স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত। আর অবৈধ প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করে বিতাড়িত শয়তান। শয়তান মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং মানুষের মনে মিথ্যা আশা-বাসনা সৃষ্টি করে। কোরআনে বর্ণিত আছে ‘সে (শয়তান) প্রতিশ্রুতি দেয় এবং মানুষের মনে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আসলে শয়তান তাদের যে ওয়াদা দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।’ (সুরা আননিসা-১২০)। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে কারীমে বলা হয়েছে  ‘স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না।’ (সুরা আল মায়িদা-৫)। অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, পুরুষেরা যেন তাদের চোখ নিচু করে রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাজত করে। (সুরা নূর-৩০)। কোরআনের অন্যত্র বর্ণিত আছে, ‘বেগানা নারী-পুরুষের গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহপূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কী করে? এটা হারাম। জিনা তথা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হারাম। (সুরা ইসরা-৩২)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো বেগানা নারীকে দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস-৬২৪৩)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের ব্যভিচার হলো,  বেগানা নারীর দিকে তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস-৮৬)

হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে কু-মতলবের ইচ্ছা নিয়ে স্পর্শ করবে, কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে আসবে যে তার হাত তার ঘাড়ের সাথে যুক্ত থাকবে। সে যদি এ নারীকে চুমু দিয়ে থাকে, তাহলে তার ঠোঁট দুটিকে আগুনের কাঁচি দিয়ে কেঁটে ফেলা হবে। আর যদি তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তাহলে তার দুই উরু সাক্ষী  দেবে, আমি অবৈধ কাজের জন্য আরোহণ করেছিলাম। তখন আল্লাহ তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাবেন এবং এতে সে অপমানবোধ করে গোয়ার্তুমি করে বলবে, ‘আমি এ কাজ করিনি।’ তখন তার জিহ্বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে বলবে, ‘আমি অবৈধ বিষয়ে কথা বলেছিলাম’। তার হাত সাক্ষী দেবে, ‘আমি অবৈধ বস্তু ধরেছিলাম’। এরপর চক্ষু বলবে, ‘ আমি অবৈধ বস্তুর দিকে তাকাতাম’। তার দু খানা পা বলবে, ‘আমি ব্যভিচার করেছি’। প্রহরী ফেরেশতারা বলবে, ‘আমি শুনেছি’। অন্য ফেরেশতা বলবে, ‘আর আমি লিখে রেখেছি’। আর আল্লাহ বলবেন, ‘আমি জেনেছি এবং লুকিয়ে রেখেছি’। এরপর আল্লাহ বলবেন, ‘হে ফেরেশতাগণ! একে পাকড়াও করে আমার আজাব ভোগ করাও। কেননা, যে ব্যক্তির লজ্জা কমে যায় তার ওপর আমার ক্রোধের অন্ত নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করার পর অবৈধভাবে কোনো মহিলার সাথে সহবাস করার মতো বড় পাপ আর নেই’। (আহমদ, তাবারানী)

তাই এই অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা না করে বিয়ের দিকেই সবার জোর দেওয়া উচিত। তবে সেক্ষেত্রে পছন্দের ছেলে বা মেয়েকে যেন বিয়ে করতে পারে অভিভাবকদের সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ছেলে-মেয়ে নিজের পছন্দে বিয়ে করার পূর্ণ অধিকার ইসলামে আছে।

 

 

লেখক : খতিব মসজিদে বায়তুন নূর

মাওনা, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads