• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইসলাম

  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর ২০২০

মুফতি কাজী সিকান্দার

 

 

 

 

জীবন ও বাঁচার প্রয়োজনে এবং দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে আমাদেরকে অর্থের চিন্তা করতেই হয়। মানুষ বলতেই এটি বাধ্যগত একটি বিষয়। আমাদেরকে বাঁচতে হবে। বাঁচতে হলে খেতে হবে। আর খাওয়ার জন্য উপার্জন করতে হবে। তাই আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তথা রিজিক তালাশ কর এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সুরা জুমা, আয়াত- ১০)। আল্লাহতায়ালা আমাদের এমন বিষয় চাপিয়ে দেননি যা আমরা করতে পারব না। নামাজ শেষে আমাদেরকে জমিনে ছড়িয়ে পড়ার জন্য বলেছেন। এ আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। এক. আমাদের উদ্দেশ্য কী থাকবে? দুই. কোন কাজ আগে করব, কোন কাজ পরে করব অর্থাৎ কাজের ধারাবাহিকতা। তিন. কাজের মধ্যে কাকে স্মরণ রাখব অর্থাৎ পন্থা কী হবে? চার. এগুলো অনুযায়ী কাজ করলে আমাদের লাভ বা অর্জন কী? প্রথমত আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন করা। আল্লাহকে রাজি-খুশি করা। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের কাজের ধারাবাহিকতা। সুতরাং আমাদের কাজ হলো- আল্লাহর হুকুম পালন করব, আগে নামাজ শেষ করব। তারপর দ্বিতীয় কাজ হলো জমিনে ছড়িয়ে পড়ব নিজের বাঁচার জন্য রিজিক তালাশ করব। আর তৃতীয়ত, কাজের মধ্যে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ রাখব। অর্থাৎ কোনো অন্যায় শরিয়তবহির্ভূত কোনো জিনিস শামিল যেন না হয়। হালাল ও হারামের দিকে নজর রাখা। এখানে অর্থ উপার্জনের নিয়ম ও নীতির দিকেই ইশারা করেছেন। উপার্জন করতে গিয়ে যেন আল্লাহকে ভুলে হারাম উপার্জন যেন না করা হয়। তাই আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে ইরশাদ, ‘আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে করেছেন হালাল। চতুর্থ হলো এ ধারাবাহিকতায় কাজ করলে আমাদের লাভ হলো- রিজিক তালাশ করা সহজ হবে এবং আমাদের কাজে আল্লাহ বরকত দেবেন।’

মোটকথা আমাদেরকে উপার্জন করতে হবে। তা হতে হবে কোরআন ও হাদিসের অনুযায়ী। হালাল পন্থায় হালাল জিনিস উপার্জন করা। আর বাঁচার জন্য এ হালাল জিনিস উপার্জন করা ফরজ। আর উপার্জন করার জন্য ইসলাম বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। ভিক্ষা, কর্মহীন থাকাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিচের হাত থেকে উপরের হাত উত্তম।’ মানুষ সাধারণত উত্তমটাই পছন্দ করে। আর উপরের হাত হওয়ার জন্য অর্থ প্রয়োজন। অর্থ হলে দান করতে পারবে। আর দান করাটিই হলো উপরের হাত। সুতরাং এর মাধ্যমেও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপার্জন করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

অন্য হাদিসে উল্লেখ্য রয়েছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির জমিন রয়েছে সে তাতে যেন চাষাবাদ করে। যদি সে চাষাবাদ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন তার মুসলিম ভাইকে জমিনটি দান করে দেয়। জমিনটি তাকে ভাড়া দেবে না (মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৩৬)। হাদিসে স্পষ্টভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাষাবাদ করার জন্য বলেছেন। আর জমিন যেন চাষাবাদ থেকে খালি না থাকে উপার্জন যেন হয়, তাই নিজে চাষাবাদ না করলে অন্য ভাই হলেও যেন করে। যার মাধ্যমে উপার্জন হয় এবং অর্থনীতির উন্নতি সাধিত হয়। এ অর্থনীতি উন্নতিকল্পে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভিক্ষা ও কর্মহীনতাকে নিষেধ করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে একজন ভিক্ষুক এসে সাহায্য চাইলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে যা আছে তা নিয়ে আসার কথা বললেন, ভিক্ষুকটি কথামতো একটি কম্বল নিয়ে আসেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বিক্রি করে একটি কুড়াল ক্রয় করে হাতে দিয়ে বললেন, যাও বন থেকে কাঠ কেটে বিক্রি করে দিনাতিপাত করো। ভিক্ষুক কথানুযায়ী তা-ই করল এবং অল্পদিনের মধ্যে সে স্বাবলম্বী হয়ে যায় (আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৬৪১)। হাদিসে যেমনিভাবে ভিক্ষাকে বাদ দিয়েছেন তেমনি সাথে সাথে কর্মের দিকে, অর্থ উপার্জনের দিকে এবং অর্থনীতি উন্নতির দিকে জোর দিয়েছেন। উক্ত ব্যক্তির কর্মের পন্থাও আবিষ্কার করে তার সফলতার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত করতে হবে। তবে তা বৈধ পন্থায় হতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে হতে হবে। হালাল পথ-পন্থা তৈরি করতে হবে। যদি কেউ চেষ্টা করে তখন আল্লাহ তার পথকে সহজ করে দেন। ইসলামে বৈরাগ্যতা নেই। কর্মহীনতা নেই। ইসলাম অর্থনীতি উন্নীত করার জন্য বাধা দেয় না। তবে হারাম উপার্জনে বাধা দেয় এবং বৈধ পন্থায় অর্থনীতি উন্নত করার কথা বলে।

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ  আশরাফাবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads