• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

মোগল স্মৃতির নিদর্শন আরিফাইল মসজিদ

  • রায়হান উল্লাহ
  • প্রকাশিত ২৭ নভেম্বর ২০২০

১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন আরিফাইল মসজিদ। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্ব রোড অংশের কাছেই এর অবস্থান। সরাইল উপজেলা চত্বর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পশ্চিমে মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদটি ৮০ ফুট বাই ৩০ ফুট আয়তনের। দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো মনে হয়। ৩৫০ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন। বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীন মসজিদটি প্রত্ন সম্পদ হিসেবে ঘোষিত।

মসজিদটির মোট প্রবেশপথ পাঁচটি। যার তিনটি হলো পূর্বদিকে এবং বাকি দুটি যথাক্রমে উত্তর ও পূর্বদিকে। মসজিদের চার কোনায় চারটি বুরুজ রয়েছে। এটিতে মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলোর নিচে মসজিদের অভ্যন্তরভাগে তিনটি ‘বে’ রয়েছে যা ভেতরের অংশকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। গম্বুজগুলোতে পদ্মফুল অঙ্কিত রয়েছে। মসজিদের দেয়ালের বাইরের দিকটি চারকোনা খোপ দিয়ে সজ্জিত।

মসজিদটিকে নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আরিফাইল গ্রামে আসেন। মসজিদটির পাশেই বিশাল আয়তনের একটি দীঘি অবস্থিত। যার নাম সাগর দীঘি। মসজিদটির দক্ষিণে রয়েছে দুটি কবর, যা ‘জোড়া কবর’ বা ‘রহস্যময় কবর’ নামে পরিচিত। স্থাপত্য কলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর ক্ষেত্রে কবরদ্বয় মসজিদটির চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না। ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী সরাইল বারো ভূঁইয়ার একজন ঈশা খাঁর শাসনে ছিল। ওই সময় ঈশা খাঁ এ মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী জোড়া কবর নির্মাণ করেন। একাধিক ঐতিহাসিক এ মত প্রকাশ করেন। অন্য একটি অংশের মতে, ঈশা খাঁর দুই স্ত্রীর সমাধিসৌধ হলো ‘জোড়া কবর’। অবশ্য স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে দরবেশ শাহ আরিফ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং তার নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়। অনেকের ধারণা, কবর দুটির প্রকৃত তথ্য অনাবিষ্কৃত। নানা কারণে জোড়া কবর রহস্যাবৃত। এ রহস্যে অনেকটা প্রভাব রেখেছে কবর দুটি থেকে নিচে অনেক গভীরে যাওয়া একটি সুড়ঙ্গ। যার শেষ কোথায়- ধারণা নেই কারো।

মসজিদটিতে ঢুকে দেখা গেছে ভেতরকার যে কোনো শব্দ দেয়ালের অতিপুরুত্বের কারণে বাধা পেয়ে একটি ভৌতিক প্রতিধ্বনিত রূপে ফিরে আসে। এমন নানা রহস্য, দীঘি, ‘জোড়া কবর’ এবং স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি পুরুত্বের মসজিদটির ভেতরে উচ্চারিত যে কোনো শব্দের ভৌতিক আওয়াজের সুযোগে কিছু স্থানীয় অসাধু মসজিদ ও জোড়া কবরকে ঘিরে গড়ে তুলেছে মাজারসদৃশ ব্যবসা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের একটি অংশকে পুঁজি করে তারা মানত ও তাবিজ-কবচের ব্যবসা শুরু করেছে। অনেকেই নিজ আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যে এখানে মানত করে বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানতের অনেক কিছু বুঝে নেওয়া একজন বলেন, ব্যবসা এখন অনেক ভালো। দৈনিক হাজার হাজার টাকা আয় হয়। প্রায়ই মানত হিসেবে লোকজন দিয়ে যায় মোরগ ও খাসি। সরাইলের কিছু প্রভাবশালী লোক ভাগভাটোয়ারা করে এসব নিয়ে যান।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি মোহন্ত কাবেরী জানান, মোগল আমলের অপূর্ব স্থাপত্য এ আরিফাইল মসজিদ এবং পার্শ্ববর্তী জোড়া কবর। এটি বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ। এদিকে সুন্দর ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর সুযোগে কিছু ব্যক্তি এটিকে ঘিরে অনৈতিক এবং ইসলামবিরোধী কাজ করছেন। কিছু টাউট-বাটপাড় ধান্দাবাজির আশ্রয় নিয়ে নিজের পকেট ভরছেন বলেও জানান নব্বই দশকের বিশিষ্ট এ কবি। অন্যদিকে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ. এস. এম. মোসা এ অভিযোগ বিষয়ে বলেন, ‘অনিয়মের সঙ্গে কোনো আপস নেই। স্থানটি আমি দেখেছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

যেভাবে যাবেন : বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্ব রোড মোড়ে এসে যেকোনো যানবাহনে আরিফাইল মসজিদে যাওয়া যায়। অথবা উপজেলা চত্বরে এসে রিকশায় করে অথবা পায়ে হেঁটেও সেখানে যাওয়া যায়।

লেখক : কবি, সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads