• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবেন যারা

  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০২০

মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মাটি থেকে তোমার সৃষ্টি, এমাটিতেই তোমার পুনরুত্থান।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত-৫৫)। কাল কিয়ামতের দিন মানুষ যখন কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে যেতে থাকবেন তখন একেক মানুষের একেক অবস্থা হবে। অর্থাৎ কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ আবার দ্রুতগতিতে, কেউ সোজা হয়ে, আবার কেউ কেউ মুখ থুবড়ে গিয়ে পা উপরে আর মাথা নিচু করে। সেটা হবে মানুষের মৃত্যুর পর সবচেয়ে ভয়াবহ দ্বিতীয় ঘাটি। যেখানে সব মানুষ হয়ে যাবে পেরেশান। কেউ কাউকে চিনবে না সেদিন। বাবা তার ছেলেকে আর ছেলে বাবাকে দেখে দৌড়ে পালাবে। স্বামী তার স্ত্রীকে বলবে আমি তো দুনিয়াতে কোনো বিয়েই করিনি তাহলে বিবি আসবে কেমনে? প্রতিটি মানুষ সেদিন শুধু ‘ইয়া নাফসি’ ‘ইয়া নাফসি’ করতে থাকবে। সূর্যটা সেদিন মানুষের মাথার একদম নিকটে চলে আসবে। সূর্যের প্রখরতায় মানুষের মাথার মগজগুলো গরমে টগবগ টগবগ করতে থাকবে। কিয়ামতের ময়দানের সেই কঠিন মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন মানবজাতিকে লালশ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না। (বুখারি ও মুসলিম) কিয়ামতের দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নং-৪৮৩)

সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে মহান আল্লাহপাক কিছু মানুষকে তাঁর রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।

১. ন্যায়পরায়ণ শাসক : মহান আল্লাহ এই শ্রেণির লোকদের ভীষণ ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা হুজুরাত, আয়াত-৯)

২. যৌবন বয়সের ইবাদতকারী : যৌবন মহান আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তারাই সফল হয়। সাধারণত যৌবন মানুষকে বেপরোয়া বানিয়ে দেয়। যৌবনের তাড়নায় কেউ কেউ ডুবে যায় পাপের সাগরে। এই যৌবনকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তারা কঠিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে।

৩. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত : আল্লামা নববী (র.) বলেন, মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা দ্বারা উদ্দেশ্য, মসজিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে মসজিদে পড়া। সার্বক্ষণিক মসজিদে বসে থাকা নয়। (উমদাতুল কারী : ৫/২৬১)

৪. পরস্পর আল্লাহকে ভালোবাসাকারী: এমন ব্যক্তি যারা একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, সেসব মানুষ কোথায়, যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেব। আজকের দিনটা এমনই যে আজ আমার ছায়া ছাড়া কোথাও কোনো ছায়া নেই। (মুআত্তায়ে মালিক, হাদিস নং-১৭১৮)।

৫. ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষাকারী : ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। ওই মুত্তাকিদেরকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।

৬. গোপনে দান-সদকাকারী : ওই ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকাকারীকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।

৭. ওই ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে। ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।

 

লেখক : খতিব মসজিদে বায়তুন নূর মাওনা, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads