• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

বিয়ের গুরুত্ব ও স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব

  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০২১

মাহমুদুল হাসান

 

মানবজীবনে বিয়ে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারী-পুরুষের হূদয়ে প্রশান্তিলাভের নির্ভরযোগ্য এক আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিবাহবন্ধন। নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায় এবং চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। বিবাহের মাধ্যমে যেমন কোরআন-হাদিসের ওপর আমল হয়, তেমনি সামাজিক স্বীকৃতি ও শান্তিসমৃদ্ধি অর্জিত হয়। বিবাহের ফজিলত ও গুরুত্ব বুঝাতে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বস্তুত তোমার আগেও আমি বহু রাসুল পাঠিয়াছি এবং তাদেরকেও স্ত্রী ও সন্তানাদি দিয়েছি।’ (সুরা রাদ, আয়াত- ৩৮) অসংখ্যা হাদিস শরিফে বিবাহের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে বিবাহকে দীনের অর্ধেক বলা হয়েছে। ‘যখন কোনো বান্দা বিবাহ করে তখন সে ধর্মের অর্ধাংশকে পরিপূর্ণ করে নেয়। অতএব, সে যেন অবশিষ্ট অর্ধেকে আল্লাহকে ভয় করে।’ (তিরমিযি, হাদসি নং-১০৮০) অন্য হাদিসে এসেছে বিয়ে আমার সুন্নাত, অতএব যে আমার সুন্নাতকে পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১০৩৯০) এভাবে পবিত্র কোরআন এবং রাসুলে আরাবির অসংখ্য হাদিসে বিবাহের গুরুত্ব চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। একসাথে থাকার যাত্রা শুরু হয় বিয়ের মাধমেই। বিয়ের মাধ্যমেই দুটি মানুষ একসাথে যাত্রা শুরু করে। একে অপরের সাথে সব আবেগ, অনুভূতি, দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে থাকে। বিয়ের মাধ্যমেই একজন পুরুষ এবং একজন নারী একে অপরের সব কাজকর্মের সঙ্গী হয়ে যায়। তাদের মাঝে প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা গড়ে উঠে এবং সন্তান-সন্ততি লাভ করে। সামাজিক স্বীকৃতি পায়। সুতরাং বলা যায়, মানবজীবনে বংশরক্ষার ধারা বিবাহ বন্ধনে বাঁধা। এটি একটি পরিবারের মূলস্তম্ভ। এককজন অসম্পূর্ণ মানুষকে সম্পূর্ণ করে তোলে বিবাহ।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে স্বামীকর্তৃক স্ত্রী আবার স্ত্রীকর্তৃক স্বামীকে ডির্ভোস দেওয়ার প্রবণতা মহামারীর মতো বেড়েই চলেছে। যা ইসলাম নির্দেশিত সুখী পারিবারিক জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। করোনার এই সময়ে ঢাকায় তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে গেছে অনেক। ২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ঢাকায় বিবাহবিচ্ছেদ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে দৈনিক ৩৯টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ প্রতি ৩৭ মিনিটে একটি তালাক হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার পেছনে করোনার কারণে তৈরি হওয়া মানসিক, আর্থিকসহ নানামুখী চাপের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন এবং যোগাযোগ কমে যাওয়াকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ২২-১২-২০২০) প্রথম আলোর উল্লেখিত প্রতিবেদন থেকে সমাজের বাস্তব চিত্র খুব সহজেই অনুমেয়। এ বিবাহবিচ্ছেদ নামক গর্হিত কাজ থেকে নিষ্কৃতি, বৈবাহিক জীবন সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার পথ বাতলে দিয়েছে ইসলাম।

ইসলামে স্ত্রীর ওপর স্বামীর আর স্বামীর ওপর স্ত্রীর কিছু দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। যা যথাযথ পালন করলে দাম্পত্যজীবন হবে সুন্দর ও সুখকর। স্বামীর কিছু দায়িত্ব  হলো-

১. স্ত্রীর সাথে সবসময় ভালো আচরণ করা। ২. স্ত্রীর কোনো কথায় বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্যধারণ করা।

৩. উচ্ছৃঙ্খল, বেপর্দা চলাফেরা করতে থাকলে নম্রভাষায় তাকে বোঝানো।

৪. সামান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ না করা। কথায় কথায় ধমক না দেওয়া। রাগ না করা।

৫. স্ত্রীর আত্মমর্যাদায় আঘাত করে এমন বিষয়ে সংযত থাকা। শুধু শুধু স্ত্রীর প্রতি কু-ধারণা না করা। স্ত্রীর সম্পর্কে উদাসীন না থাকা।

৬. সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীর খোরপোষ দেওয়া। অপচয় না করা।

৭. নামাজ পড়া এবং দীনের আহকাম মেনে চলার জন্য উৎসাহ দিতে থাকা। শরীয়ত পরিপন্থি কাজ থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

৮. একান্ত নিরুপায় না হলে তালাক না দেওয়া এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শরীয়ত গৃহীত পদ্ধতি অবলম্বন করা।

৯. প্রয়োজনমাফিক থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা।

১০. মাঝে মাঝে স্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেওয়া। ১১. প্রয়োজনে স্ত্রীকে শাসন করা। সতর্ক করা।

স্ত্রীর কিছু দায়িত্ব বর্ণনা করা হলো-

১. সবসময় স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করা।

২. স্বামীর সাথে অসংযত আচরণ না করা। স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া।

৩. শরীয়তসম্মত প্রত্যেক কাজে স্বামীর আনুগত্য করা। গুনাহ এবং শরীয়তবিরোধী কাজে অপারগতা তুলে ধরা এবং স্বামীকে নরম ভাষায় বোঝানো।

৪. প্রয়োজনাতিরিক্ত ভরণ-পোষণ দাবি না করা।

৫. পরপুরুষের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখা।

৬. স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে ঢোকার অনুমতি না দেওয়া।

৭. অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। ৮. স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা। অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে কাউকে কোনো কিছু না দেওয়া।

৯. স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে অতিরিক্ত নফল নামাজে মশগুল না থাকা। অতিরিক্ত নফল রোজা না রাখা।

১০. স্বামীর আমানত হিসেবে নিজের ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করা। কোনো ধরনের খেয়ানত না করা।

১১. স্বামী দরিদ্র কিংবা অসুন্দর হওয়ার কারণে তাকে তুচ্ছ না করা।

১২. শ্বশুর-শাশুড়িকে সম্মানের পাত্র মনে করা। তাদেরকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। ঝগড়া-বিবাদ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া।

১৭. সন্তানদের লালন-পালনে অবহেলা না করা।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া, কিশোরগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads