• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কোরআনের সেবক

  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০২১

মুফতি উবায়দুল হক খান

 

 

 

পবিত্র কোরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ পথ-নির্দেশগ্রন্থ। একজন মানবসন্তানের সুন্দর চরিত্র গঠন ও তাকে সৎমানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কোরআন মাজিদই সবচেয়ে শক্তিশালী দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে পারে। কোরআন মাজিদের মূলকথা হলো, ‘দুনিয়াটা আল্লাহর একটি কঠিন পরীক্ষাগার। মানুষ এ পরীক্ষার ভালো-মন্দ উভয়ের চূড়ান্ত ফল ভোগ করবে আখেরাতে। এখানে ভোগ-দখলের অনৈতিক প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়া মানে এমন এক জঘন্য উন্মত্ততার ছোবলে নিজেকে সঁপে দেওয়া। যার পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে খুবই ভয়াবহ।’

কোরআন মানুষকে অন্যয়ের প্রতিরোধ করতে শেখায়, সত্য ও সুন্দর কর্মসমূহে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করে, মানুষকে নির্লোভ ও ত্যাগী হতে উদ্বুদ্ধ করে। অহংকার, হিংসা, ও হঠকারিতা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়।

এমন একটি মহামূল্যবান গ্রন্থকে আমরা মুসলমানরা যদি পড়তে ও বুঝতে না শিখি, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে কৈফিয়ত দেওয়ার মতো কোনো কিছুই আমাদের অবশিষ্ট থাকবে না।

ইরশাদ হয়েছে-‘কেয়ামতের দিন সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকবে শুধুমাত্র আল্লাহর হাতে। কাফিরদের (অমুসলিম বা ভুয়া মুসলিম) জন্য সেদিনটি হবে খুবই কঠিন। আর সেদিন প্রত্যেক জালিম (আল্লাহর অবাধ্য জিন ও মানুষ) উভয় হাত (আক্ষেপবশত) দাঁত দিয়ে কামড়াবে এবং বলবে, আক্ষেপ! আমি যদি (দুনিয়াতে) রাসুলের পথে চলতাম। আক্ষেপ! আমি যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম। আমার কাছে কোরআন আসার পরও সে আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। বস্তুত শয়তান হলো মানুষের বড়ই অসহযোগী। অন্যদিকে রাসুল বলবেন, হে রব, আমার সম্প্রদায়তো কোরআনকে পরিত্যক্ত হিসেবে গ্রহণ করেছে (কোরআন পড়েনি ও মেনে চলেনি)।’ (সুরা আল ফুরকান, আয়াত : ২৬-৩০) তাই আসুন, আমরা সবাই নিজেকে একজন  কোরআনের সেবক হিসেবে আবিষ্কার করে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টিলাভের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই। অন্যথায় অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণের পর আমাদের আফসোসের সীমা থাকবে না। আর সে আফসোস আমাদের কারো উপকারে আসবে না। তাই এখনই জীবনের রাস্তাটাকে আখেরাতমুখী করে ফেলি। নিচে কোরআন মাজিদের সেবক হওয়ার বারোটি উপায় উল্লেখ করা হলো-

এক. নিজের সন্তানকে শুদ্ধরূপে কোরআন মাজিদ পাঠ ও নামাজ আদায় শেখানো এবং তাতে তাদেরকে অভ্যস্ত করা।

দুই. স্ত্রী কোরআন মাজিদ পড়তে না জানলে তাকে নিজে বা কোনো মহিলা দিয়ে কোরআন মাজিদ পাঠ শেখানো এবং নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করা।

তিন. ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাগিনাসহ নিকট বা দূরের কোনো আত্মীয় কোরআন মাজিদ পড়তে না জানলে তাকে নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে কোরআন মাজিদ পাঠ শেখানো এবং নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করা।

চার. সন্তান ও স্ত্রীসহ অধীন সবাইকে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সুরা ইয়াসিন ও মাগরিবের নামাজের পর সুরা ওয়াকিয়া পড়তে উৎসাহিত করা।

পাঁচ. সম্ভব হলে প্রতি ৪০ দিনে কোরআন খতম (শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ) করা এবং তা সম্ভব না হলে প্রতি রমজানে যেন কোরআন খতম মিস না হয়।

ছয়. আপনার গ্রাম-মহল্লার মসজিদে যদি শিশুদের বিনামূল্যে কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে মসজিদের ইমাম ও মুতাওয়াল্লীর সাথে কথা বলে সেখানে বিনামূল্যে কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা করুন।

সাত. আপনি যেখানে বাস করেন, সেখানে অনেক মানুষ অবহেলা ও অভাবের কারণে সন্তানকে কোরআন শেখাচ্ছে না। তাদেরকে কোরআন শেখানোর জন্য আপনি আপনার বাসা কিংবা মসজিদে প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করুন।

আট. আপনার সময় নেই, কিন্তু সামর্থ্য আছে তাহলে কোনো আগ্রহী মাদরাসা শিক্ষিতকে দিয়ে উপরিউক্ত কাজ করুন। নয়. সমাজে অনেক বয়স্ক পুরুষ আছে, যারা কোরআন পড়তে জানে না। তাদের অনেকেই আবার এ বয়সেও কোরআন শিখতে আগ্রহী। আপনি আপনার গ্রাম-মহল্লার মসজিদে প্রতিদিন আসর-মাগরিবের পর নিজে বা কোনো হুজুরকে দিয়ে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে তাদের এ আগ্রহ পূরণ করতে পারেন এবং কোরআনের সেবকদের তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

দশ. যাচাইপূর্বক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত বাংলা অথবা ইংরেজি অনুবাদ সম্বলিত কোরআন মাজিদ উপযুক্ত লোকদেরকে হাদিয়া দিন।

এগারো. কোরআন মাজিদের বিভিন্ন বাণী দিয়ে স্টিকার ছেপে উপযুক্ত স্থানে লাগিয়ে দিন।

বার. কোরআন মাজিদ পাঠদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে দান করুন।

 

লেখক : মুহাদ্দিস ও সহকারী শিক্ষাসচিব, জামিআতুস সুফ্ফাহ আল ইসলামিয়া, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads