• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধির কৌশল

  • প্রকাশিত ২১ জানুয়ারি ২০২১

আতিক আল মাসউদ

 

 

সালাত এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্যে গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ইবাদত আল্লাহর সাথে কথা বলার অনন্য একটি মাধ্যম। মুমিন জীবনের অন্যতম একটি ইবাদত হলো সালাত। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ সালাত। কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বিচার ফয়সালা হবে সালাতের মাধ্যমে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হইবে।’ (তিরমিজি)। দৈনন্দিন জীবনে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বিঘ্নতা, অলসতা ও নানা ধরনের চিন্তার সম্মুখীন হতে হয়। এর প্রধান কারন হলো সালাতে একনিষ্ঠতা, মনোযোগ না থাকা। একনিষ্ঠ ছাড়া সালাত কখনো আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমারা একনিষ্ঠতার সাথে আমার ইবাদত কর।’ (সুরা বাইয়্যিনা : ৫)।

সালাতে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধনে পাঁচটি কৌশল রয়েছে। প্রথম কৌশল হলো, অন্তরের মধ্যে এই অনুভব করা এটা শেষ নামাজ। মৃত্যু এমন একটি বিষয়ের যা কখন আসে বলা যায় না। দুনিয়া এখন গ্লোবাল ভিলেজের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়। কিন্তু মৃত্যু এর বাইরের একটি অজানা, অধরা বিষয়। সালাতে যখন দাঁড়াবে তখন এটা অনুভব করতে হবে এটাই বিদায়ী নামাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও তখন তুমি বিদায়ী সালাত পড়।’ (মুসনাদে আহমদ)। সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কৌশল হলো, এই অনুভব করা সালাত হলো আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথনের মাধ্যম। সালাতের মাধ্যমে গোলাম ও মনিবের মাঝে কথা বলা যায়। যদিও সেটা আমাদের কর্ণদয়ে শ্রবণ হয় না, তবুও এই মনোভাব ধারণ করতে হবে অন্তর দ্বারা আমরা কথা বলতেছি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বান্দা যখন নামাজ পড়ে তখন তা আমি আধাআধি ভাগ করি। এবং তার কথার উত্তর দিয়ে থাকি।’ (বুখারি)। বান্দা যখন বলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এই বিশ্বজগতের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা আদায় করেছে। এভাবে প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে থাকেন। এই অনুভবটা অন্তরের মাধ্যে লালন করতে পারলে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি হবে।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির তৃতীয় কৌশল হলো, ধীরস্থির হয়ে সালাত আদায় করা। সালাত মুমিন জীবনে সবরের (ধর্য) শিক্ষা দেয়। নম্র, ভদ্র হয়ে বিনয়ের সাথে আদায় করতে হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ তাদের সালাতে বিনয়ী অবলম্বন করে।’ (সুরা মুমিনুন : ২)। যত্নসহকারে সালাত আদায় না করলে সালাতে মনোযোগ সাধন হবে না। কেরাত, রুকু ও সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন , ‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর ওই ব্যক্তি যে, ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ে না এবং রুকু সেজদায় দেরি করে না।’ (তবরানি) তাসবিহ্ তাহলিলগুলো অর্থসহ জানার মাধ্যমে ধীরস্থিরসুলভ সালাত আদায় করতে হবে। যার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ থাকবে না।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির চতুর্থ কৌশল হলো, এই অনুভব করা আমি আল্লাহর সাথে দেখা করছি। আল্লাহতায়ালা সার্বক্ষণিক আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন, কিন্তু দুনিয়ার কোনো চর্মচক্ষু দ্বারা তাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব না। সালাতের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)। আল্লাহর সামনে যখন মাথানত করতে হয় তখন এই ভয়ে করতে হবে তিনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। পৃথিবীর সকল চোখ ডিঙিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু আল্লাহর চোখ কখন ডিঙানো সম্ভব না। বান্দা যখন সেজদা দেয় তখন, আল্লাহর কুদরতি পায়ের ওপরে দেয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে খুবই সজাগ থাকতে হবে। এই অনুভব লালন করতে পারলে ভয় বৃদ্ধি পাবে ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধন হবে।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির সর্বশেষ কৌশল হলো, পূর্ববর্তী লোকদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। পূর্ববর্তী লোক হলো, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে-তাবেয়িন ও বিশিষ্ট ইসলামী স্কলারগণ। কারণ তারা সর্বত্র আল্লাহকে বেশি ভয় করেছেন। তাঁদের ইজমার ভিত্তিতে অসংখ্য মাশয়ালার সমাধান হয়ে থাকে। রাসুল (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন সাহাবায়ে কেরাম নিজ চক্ষে তা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের থেকে ধারাবাহিকভাবে আলেমগণ শিক্ষা লাভ করেছেন। তাদের এই শিক্ষার আলোকে দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারলে বিনয়ীভাব ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ লাভ সম্ভব হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত উপরোক্ত পাঁচটি কৌশল দৈনন্দিন প্র্যাকটিস করা। এরই মাধ্যমে মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে আশা রাখি। 

 

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads