• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

খোদাভীতি পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে

  • প্রকাশিত ২১ জানুয়ারি ২০২১

আবু তালহা রায়হান

 

 

মহান আল্লাহতায়ালা নশ্বর এ পৃথিবীর মালিক। আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে,সব তাঁর অধীন। তিনি এক, অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো সমক্ষক নেই, নেই কোনো শরিক। তিনি অনন্ত, অসীম। তিনি চিরঞ্জীব। তাঁর মৃত্যু নেই, নেই জন্মও। তিনি রজনিকে ঢোকান দিবসের মাঝে আর দিবস ঢোকান রজনির মাঝে। তাঁর ইশারায় সূর্য উঠে, রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। জোছনা রাতে মিষ্টি চাঁদ শুভ্র হাসিতে আমাদের মাতিয়ে তোলে। লাল সূর্য প্রভাত রাঙিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। তপ্ত রোদে আকাশ থেকে রহমতের বারি ঝরে। পাখিরা মধুর সূরে গান গায়। সাগরের অতলগহ্বরে বাস করা অণুজীব থেকে শুরু করে আরশে আজিম পর্যন্ত যা কিছু আছে, সবই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন। সম্মানিত করেন। আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। তাঁর সৃষ্টিজাতকে যেমন খুশি তেমন নাচান। তিনি সর্বশক্তিমান। আমরা আল্লাহর সৃষ্টি মানবজাত। শ্রেষ্ঠ জাত। মহান আল্লাহ তাঁর অসীম অনুগ্রহে আমাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। চাইলে অন্যসব প্রাণীদের মতো আমাদেরও নির্বোধ করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু না, আমরা ভালোকে ভালো আর মন্দকে খারাপ বলতে জানি। সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারি। হক বাতিলের ফারাক বুঝি।

আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে মৌলিকভাবে তার সৃষ্টিকর্তা চেনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সামগ্রী দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতিকে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন কেবল তাঁর ইবাদাত করার জন্য। তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য। তাঁকে ভয় করার জন্য। আল্লাহর ভয় মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। অথচ মানবজাতি মহান স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে ভয় করে! আজকাল কোনো এলাকায় বাঘের দেখা মিললে সেখানকার মানুষের রাতে ঘুম হয় না। বাঘের ভয়ে চোখের ঘুম চলে যায়। নির্ঘুম রজনি পার করে! অথচ তারা (বাঘের সৃষ্টিকর্তা) আল্লাহকে ভুলে গিয়ে ফরজ নামাজ আদায় করে না। রমজানে রোযা রাখে না। ধর্ষণ, ব্যভিচারসহ জগতের যাবতীয় পাপকর্মে লিপ্ত হয়। আর আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ভয় করো। আমার সৃষ্টিকে নয়।’ হজরত আলী রা. আল্লাহকে প্রচণ্ড ভয় করতেন। তাই তো তিনি শক্তিশালী বাঘের মোকাবিলায়ও জয়ী হয়েছিলেন। যারা আল্লাহকে ভয় করে, পৃথিবীর কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আর যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে অন্যকিছুকে ভয় করে, পৃথিবীর কেউ তার উপকার করতে পারে না।

‘যাদের হূদয়ে আছে আল্লাহর ভয়/তারা কভু পথ ভুলে যায় না। আল্লাহর প্রেম ছাড়া এই দুনিয়ায়/কারো কাছে কোনো কিছু চায় না।’ কবি ও গীতিকার বেলাল হোসাইন নূরীর লেখা এই গানে আমরা আল্লাহর প্রতি ভয়ের এক ধরনের পবিত্র অনুভূতি খোঁজে পাই। পবিত্র কোরআন-হাদিসেও আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনার বিষয়ে নানা নির্দেশনা ও দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাকো, তবে আমাকে ভয় করো।’ (সুরা আল ইমরান : ১৭৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।’ (সুরা : আল ফাতির-২৮)। মহান রব্বুল আলামিন কালামে পাকে আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে সাজদা ও দণ্ডায়মান হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে এবং আখিরাতকে ভয় করে ও তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না। বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তাভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।’ (সুরা, যুমার : ৯)।

আল্লাহর ভয়ে ভীত বান্দা পরকালে শেষ বিচারের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামত দিবসে এমন ব্যক্তি আরশের নিচে ছায়া পাবে, যাকে কোনো অভিজাত সুন্দরী রমণী প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও সে বলে; আমি আল্লাহকে ভয় করি। (বুখারি)। অন্য এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে অধিক সমীহ করি এবং অধিক ভয় করি।’ (মুসলিম)। যার মাঝে আল্লাহর ভয় আছে, সে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে। আল্লাহতায়ালা হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ করেন, ‘আমার ইজ্জতের কসম! আমার বান্দার জন্য দুটি ভয় ও দুটি নিরাপত্তাকে একত্র করি না। যদি সে দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে তবে কিয়ামত দিবসে আমি তাকে নিরাপত্তা দান করব। আর যদি দুনিয়ায় আমাকে নিরাপদ মনে করে (ভয় না করবে) কিয়ামতের দিন তাকে আমি সন্ত্রস্ত রাখব। (বায়হাকি)।

আলোচ্য আয়াত ও হাদিসসমূহের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, মানবহূদয়ে এক আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করা অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এটাও প্রমাণিত হয় যে, ভয় ঈমানের বৈশিষ্ট্যসমূহের মাঝে অন্যতম। সুতরাং বান্দার ঈমানের গভীরতার অনুপাতে তার মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকবে। মানবমনে যখন খোদাভীতি সঞ্চারিত হয়, তখন তা প্রবৃত্তির মন্দ তাড়না ও চাহিদাগুলোকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়। ফলে তার মন থেকে দুনিয়ার মোহ কমে যায়। সবরকমের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরহেজ থাকে। শয়তানি প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে কোনো মানুষের যখন খারাপ কাজ করার সুযোগ আসে, তখন সে যেন ভাবে, আমার খারাপ কাজগুলো দুনিয়ার কেউ না জানলেও কিংবা না দেখলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা দেখছেন। কিরামুন কাতিবিন আমাদের সব আমলনামা সার্বক্ষণিক লিপিবদ্ধ করছেন। অতএব সব সময় অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য।

 

লেখক: ছড়াকার, প্রাবন্ধিক।

abutalha625616@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads