• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

জীবনভেলায় তিমির রাতি

  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২১

মাওলানা শামসুল আরেফীন

 

দিনের সূর্যটা তার চিরাচিত নিয়মে দৃষ্টির আগোচরে চলে গেছে। পাখিরা দলবেঁধে ফিরে যাচ্ছে নিজেদের নীড়ে। পৃথিবী আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের অতল গহ্বরে। রাত যত গভীর হবে তার নিস্তব্ধতা তত বেড়ে যাবে। আর এই রাতেই কত মানুষ দুনিয়া থেকে পারি জমাবে পরপারে। তারা কী জানে! আজ রাতই হলো তাদের জীবনের শেষ রাত! এই পৃথিবীর গাছপালা, তরুলতা সব কিছুই তাকে বলে দিচ্ছে তার জীবনের ট্রেন আর সামনে অগ্রসর হবে না। হয়তো আর কিছুক্ষণ পর জীবনের সূর্যটা অস্তমিত হবে চিরদিনের তরে। আর কখনো ভোরের পাখিদের কিচির মিচির কলতান কানে ভেসে আসবে না। তবে কিসের জন্য মাতালের ন্যায় ছোটোছুটি করছি আমি। আর কেনোই বা প্রাধান্য দিচ্ছি নিজের ইচ্ছাকে! আমার সফলতার পাথেয় আসমান থেকে পাঠানো সেই বাণীকে কেন প্রাধান্য দিচ্ছি না আমি? এই প্রশ্ন কি কখনো নিজেকে করেছি? মালিকের আদেশানুযায়ী কি পুরোপুরি চলতে পেরেছি? পেরেছি কি প্রভুর কথা মানতে! পারছি না। অথচ সেই শান্তির বার্তা আমি পেয়েছি। যা আমাকে উভয়কালে শান্তির পূর্ণ ঠিকানায় পৌঁছে দেবে। বুঝিয়ে দেবে নিজের অস্তিত্বকে। চিনিয়ে দেবে সত্য-মিথ্যার রাস্তা।

কিছুক্ষণ পরে মুওয়াজ্জিন মিনার থেকে সুউচ্চ কণ্ঠে আজান দেবে। কিন্তু মসজিদে নিয়মিত আমার উপস্থিতি নেই। ইসলাম শব্দের মানেই তো আত্মসমর্পণ, আনুগত্য। তবে আমি কি আনুগত্যের সেই গুণগুলো নিজের অন্তরে ফিট করতে প্রয়াস চালিয়েছি? নাকি অব্যাহত রাখার কোনো সংকল্প করেছি? অথচ আজ রাতই হতে পারে জীবনের শেষ রাত। সকালে জাগ্রত হবার কোনো সুযোগ নাও হতে পারে আমার। কারণ আমি তো ইচ্ছা করে মরতে চাইনা। হঠাৎ মালাকুল মাউত সামনে এসে উপস্থিত হবে। তৎক্ষণাৎ প্রাণটি নিয়ে চলে যাবে। বাড়ির সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে আমাকে কবরস্থ করতে। কেউ কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়বে। যেনো চোখের অশ্রু ফোঁটা আর কখনো ফোরোবার নয়। এর মধ্যে আবার কিছু মানুষ দেখতে এসে তারাও কান্নায় ভেঙে পড়বে। অনেকেই বলবে অমুক তো খুবই ভালো ব্যক্তি ছিলেন। এই কথা বলে সবাই ব্যথিত হবে। রক্তক্ষরণ হবে হূদয়কোণে। স্মৃতিতে ভাসবে মৃতের উত্তম কাজগুলো। আবার কেউ কেউ ফাঁকফোকর খোঁজার চেষ্টা করবে। কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা।

আপনি কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারেন। কিন্তু আখেরাতের পাথেয় যদি সঙ্গে না নেওয়া হয়, তবে প্রিয়নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষ্যমতে আপনি হলেন, সব চেয়ে বড় হতভাগা এবং নিংস্ব ব্যক্তি। তাই জ্ঞানী লোকের পরিচয় হবে, একাকিত্ব হয়ে নির্জনে উপলব্ধি করা। মৃত্যুর পরের জগৎ নিয়ে ভাবা। তাহলে পরকাল সংক্রান্ত খুঁটিনাটি অনেক বিষয় দেখবেন মাথায় এসে উপস্থিত হবে। যেমন : আপনাকে যখন কবরে রাখবে, তখন সবাই মাটিচাপা দিয়ে চলে আসবে। ঠিক তখনি দুজন ফেরেশতা আপনার নিকট আসবে হিসাব নেওয়ার জন্য। আপনি কি উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন? মোটেও না। আপনার কাজগুলো যদি ভালো হয়, তবে নাজাতের আশা করা যেতে পারে। পুণ্য যখন সব খাঁটিভাবে পাওয়া যাবে, এতে কোনো ভেজাল বা শিরকের গন্ধ না থাকবে। ঠিক তখনি আপনি আল্লাহতায়ালার দরবারে একজন নেক্কার বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবেন।

প্রতিদিন রাতে আপনি যখন বিছানায় ঘুমোতে যাবেন লাইট বন্ধ করে, শুয়ে শুয়ে ভাবেন উপরিউক্ত বিষয়গুলো। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যদি এমন চিন্তা অন্তরে লালন করে। মনে হয় না তার থেকে কোনো নেক আমাল ছুটে যাবে। তার দ্বারা কোনো গোনাহ সংঘটিত হবে। এটাই বাস্তবতা! কীসের বাড়ি, কীসের গাড়ি? দুচোখ মুদে গেলে কেউ আপনাকে স্মরণ রাখবে না। তবে নেক সন্তান আর কিছু পাথেয় সংগ্রহ করলে তারা আপনাকে স্মরণ করবে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত।

 

লেখক : আলেম, ছড়াকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads