• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

আওয়াবিনের নামাজে আল্লাহ খুশি হন

  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি ২০২১

এসএম আরিফুল কাদের

 

 

 

ফরজ ইবাদতের কোনো বিকল্প নেই। ফরজ নামাজ আদায়ের পর যারা নফল নামাজ আদায় করেন তাদের প্রতি রয়েছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বিশেষ রহমত। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য নামাজকে নফল নামাজ বলে। নফল নামাজের কোনো সীমানা নেই। যে যত বেশি পড়বে, সে তত বেশি সাওয়াব লাভ করবে। মাকরুহ সময় ব্যতীত যখনই কেউ নফল নামাজ পড়তে চায় এবং যত বেশি পড়তে চায় তা পড়লে তার জন্য মঙ্গল এবং বরকতেরই কারণ হয়। এই নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম নফল নামাজ হলো আওয়াবিনের নামাজ। আওয়াবিন শব্দটি ফার্সি। এটি ‘আওয়াব’ শব্দ থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ হলো-খোদাভীরু। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর যে নফল নামাজ পড়া হয় তাকে আওয়াবিন নামাজ বলে। হাদিস শরিফে ‘সালাতুল আওয়াবিন’ নামেই নামাজটির উল্লেখ রয়েছে। মাগরিবের নামাজের পর আওয়াবিনের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ইশার পূর্ব পর্যন্ত সময় বাকি থাকে।  মোহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (র.) থেকে বর্ণিত। একটি মুরসাল হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজী ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে একে সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ) বলে।’ (জামে সগির ২ খণ্ড ৪২৭ পৃ.) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আওয়াবিনের ওয়াক্ত ওই সময় থেকে শুরু হয়, যখন নামাজী মাগরিবের নামাজ পড়ে শেষ করে এবং এর ওয়াক্ত ইশার ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত থাকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং- ৫৯৭৩)

এই নামাজ ৬ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। কোনো কোনো আলেম ছয় রাকাত আওয়াবিন পড়ার ক্ষেত্রে মতামত দিয়েছেন। মাগরিবের পর দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ব্যতীত চার রাকাত নফল নামাজ অতিরিক্ত পড়লে আওয়াবিনের ছয় রাকাত আদায় হয়ে যাবে এবং হাদিসে বর্ণিত আওয়াবিনের সাওয়াব ও লাভ করবে। তবে কিছু কিছু আলেমের মতানুযায়ী আওয়াবিনের ছয় রাকাতকে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা থেকে অতিরিক্ত বলা হয়েছে। (তিরমিযি, হাদিস নং-৪৩৭; ইলমুল ফিকহ ২ খণ্ড ৪৮ পৃ.)

আওয়াবিন নামাজে আল্লাহ খুশি হন। যদিও সংখ্যায় কম কিন্তু এর সওয়াবের পরিমাণ বেশি। যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আওয়াবিনের নামাজ আদায় করে আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে তাকে বারো বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ সাওয়াব দান করেন। এ সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ (আওয়াবিন) পড়ে, যার মধ্যে কোনো মন্দ কথাবার্তা বলেনি, তাহলে তার জন্য এই ছয় রাকাত বারো বছর ইবাদতের সমমান করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১২২২) অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়ে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন।’ (তিরমিযি, হাদিস নং : ৪৩৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৪৩৫)

বিভিন্ন পন্থায় বান্দা পাপ করে, আর আল্লাহতাআলা বান্দার এসব পাপ তওবা বা বিভিন্ন আমলের কারণে ক্ষমা করে থাকেন। সেসব আমলের মধ্যে আওয়াবিন নামাজ অন্যতম। তাছাড়া মাগফিরাতের দরজা বান্দার জন্য সবসময় খোলা রয়েছে। সেজন্যই আমাদের উচিত প্রতিদিন আওয়াবিন নামাজ পড়ে আল্লাহতায়ালার নিকট মাগফিরাত কামনা করা। হাদিসে আছে, ‘হজরত আম্মার বিন ইয়াছির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি তিনি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (তাবারানী, ২য় খণ্ড ৩২৬ পৃ., মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস নং- ৩৩৮০)

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads