• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

দীনি দাওয়াতের উদ্দেশ্য

  • প্রকাশিত ২৬ জানুয়ারি ২০২১

মুফতি কাজী সিকান্দার

 

 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার উদ্দেশ্যে।’ আমাদের সৃষ্টি, আমাদের বেড়ে উঠা, আমাদের এতো নেয়ামত ভোগ করার  পেছনে একটি কাজ আছে তা হলো আল্লাহতায়ালার ইবাদত করা। মনিবের গোলামি করা। তাবলীগ করাও সেই মালিক-সৃষ্টিকর্তার একটি দায়িত্ব। কেউ যদি তাবলীগ করে তবে সে খুব বড় কোনো কাজ করেনি বরং সে আল্লাহর দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেকই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি) তবে দায়িত্ব আদায় করার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে পুরস্কৃত হবে।

তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ বা জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা। কুফর অন্ধকার, বেদআত অন্ধকার, কুসংস্কার অন্ধকার, আল্লাহর হুকুম না মানা অন্ধকার, পাপ অন্ধকার, তাগুত অন্ধকার, এমনি সব অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। ঈমান একটি আলো, সুন্নাত একটি আলো, সওয়াব একটি আলো, আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের তরিকামতো চলা একটি আলো। এ আলোর প্রতি আহ্বান করে বান্দাকে সত্যের ওপর ওঠানো। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! এটি একটি কিতাব যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি যেন আপনি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন পরাক্রমশালী প্রশংসারযোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তারই পথের দিকে।’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত-১) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-‘আল্লাহ হচ্ছেন তাদের বন্ধু যারা ঈমান এনেছে। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনেন। আর যারা কুফরি করে, তাদের বন্ধু হলো শয়তান। সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়।’ (সুরা বাক্বারা, আয়াত-২৫৭)

অন্ধকার থেকে দাওয়াত দিয়ে আলোর দিকে এনে আকীদা বা বিশ্বাস এবং আমলের পরিশুদ্ধ করতে হবে। যখন বান্দা ঈমানের পথে, সৎপথে আসবে তখন তাকে আমল ও ঈমানের পরিপূর্ণতার দাওয়াত দেবে। এখানে দাওয়াতের উদ্দেশ্য হবে তার আমল যেন ঠিক হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং আনুগত্য করো রাসুলের। আর এরূপ না করে তোমাদের আমলগুলো বাতিল নষ্ট করো না।’ (সুরা মোহাম্মাদ, আয়াত-৩৩)

আল্লাহর আনুগত্যের পাশাপাশি তাগুতকেও ছাড়তে হবে। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। তোমরা পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করো। এক্ষেত্রে দাওয়াতের উদ্দেশ্য তাগুত ছাড়া। খালেছ ইসলামে প্রবেশ করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে এজন্যই রাসুল পাঠিয়েছি যে, একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করো এবং সব তাগুত থেকে দূরে থাকো।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৩৬) হক ও বাতিলের পার্থক্য করা হলো তাবলীগের আরেকটি উদ্দেশ্য। দাওয়াতের মধ্যেমে হক আর বাতিল স্পষ্ট করে দিতে হবে। মানুষ যেন কোনটি সত্য ও হক আর কোনটি মিথ্যা ও  বাতিল বুঝতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ কোরআন সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)

সর্বোপরি দাওয়াতের উদ্দেশ্য হবে যেন মানুষ জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতি হয়ে যায়। সব মানুষ হেদায়েত পেয়ে যায়। মুমিন অবস্থায় দুনিয়া ত্যাগ করতে পারে। কিয়ামত ও আল্লাহর ভয় যেন সৃষ্টি হয় মানুষের অন্তরে। জান্নাতের দিকে আগ্রহী করে তোলে। দুনিয়ার অসারতা যেন স্পষ্ট হয় মানুষের সামনে। দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর ভয়, জাহান্নামের ভয় তৈরি হয়। তখন মানুষের আমল করা সহজ হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজ পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরীম, আয়াত-৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো এবং ভয় করো এমন দিনকে যখন পিতা পুত্রের কোনো কাজে আসবে না এবং পুত্রও পিতার কোনো উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত-৩৩) আমরা আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার উদ্দেশ্যেই তাবলীগ করব। আল্লাহতায়ালা আমাদের দাওয়াত দেওয়ার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, আশরাফবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads