• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে সুদ দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম

  • প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সিনথিয়া

 

 

 

সুদের আরবি হচ্ছে ‘রিবা’। রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত, বর্ধিত ইত্যাদি। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সুদ বলে। আমাদের দেশে সুদি কারবার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলত সুদনির্ভর। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তার জন্য সুদ দিতে হয়। অন্যদিকে চালু রয়েছে এনজিও ঋণ। তাও সুদনির্ভর। গ্রামাঞ্চলে চালু আছে মহাজনী ঋণপ্রথা। অর্থঋণের পাশাপাশি সেখানে চালু আছে পণ্যঋণও। বলা বাহুল্য, ঋণ তারাই নেয়, যাদের অভাব আছে, যারা দায়গ্রস্ত কিংবা ঋণগ্রস্ত। সেই অভাবী, দায়গ্রস্ত ও ঋণগ্রস্তরাই অতিরিক্ত দেয়ার শর্তে ঋণ নেয় এবং ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সুদি কারবার দারিদ্র্য বিস্তারের একটি বড় কারণ। যারা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারে না, তাদের দুর্ভোগ ও বিপর্যয়ের শেষ থাকে না। ঋণ পরিশোধের জন্য অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পলাতক জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। এমন নজির আমাদের গ্রামীণ সমাজে মোটেই বিরল নয়। অনেকে সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। সে নজিরও আছে।

ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সুদ একটি মারাত্মক অভিশাপ। সুদ ইসলামে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। শরিয়তের পরিভাষায় সুদ নেওয়া-দেওয়া কবিরা গুনাহ। সুদ যেহেতু শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয় সেহেতু সুদ দেওয়া-নেওয়ার বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে কঠোর হুঁশিয়ার করা হয়েছে। সুদের কারণে মুমিনের পারস্পরিক সহানুভূতি নষ্ট হয়, ধ্বংস হয় মানবতা, সীমাহীন অর্থলিপ্সা ও স্বার্থপরতা জন্ম নেয়। লোভ-লালসার মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে, সুদিকারবারীরা মানুষের জানমাল ও ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেও দ্বিধা করে না। যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগে সুদ মহামারী আকার ধারণ করেছে। সমগ্র বিশ্ব আজ এর রাহুগ্রাসে পতিত। সুদের কুফল সমাজের সর্বত্র বিরাজমান।

সুতরাং সুদ থেকে বেঁচে থাকা অতীব জরুরি। এ কারণেই ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, ‘আমি ব্যবসায়কে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম ঘোষণা করেছি।’ (সুরা বাক্বাবারা : আয়াত ২৭৫) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আলে-ইমরান : আয়াত ১৩০)। সুদের ভয়াবহতার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদের মতোই। অথচ আল্লা তায়ালা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে, (সুরা বাক্বাবারা : আয়াত ২৭৫)।

সুদের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো এলাকায় সুদ ও জেনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়, তখন ওই এলাকার অধিবাসীরা আল্লাহর আজাব নিজের ওপর টেনে নিয়ে আসে।’ (আল মুসতাদরাক) বর্তমানে দুনিয়ায় সুদের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে এবং তা সবকিছুকে গ্রাস করতে চলেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে, কোনো ব্যক্তিই সুদ খাওয়া থেকে বেঁচে থাকবে না। আর কেউ সুদ ভক্ষণ থেকে বাদ থাকলেও এর ধূলিকণা তাকে স্পর্শ করবেই। (সুনানে আবু দাউদ)।

 

লেখিকা : শিক্ষার্থী, ভূরারঘাট এম ইউ বহুমুখী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, রংপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads