• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

কর্মক্ষেত্রে সুন্দর আচরণ

  • প্রকাশিত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মেহেদী হাসান সাকিফ

 

 

সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষকে সবাই ভালোবাসে। বিশ্বাস করে। শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বোত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতীক। মক্কার বর্বর কাফির-মুশরিকরাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধুমাখা আচরণে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সুন্দর আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারো সাথে সুন্দর করে কথা বলা। দেখা হলে সালাম দেওয়া। কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। কর্কশ ভাষায় কথা না বলা। ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া। ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা। গীবত বা পরনিন্দা না করা। অপমান-অপদস্ত না করা। উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। গম্ভীর বা কালো মুখে কথা না বলা। সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা। অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া। বিপদে দেখা করে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত। এই বৈশিষ্টের অধিকারী যে কোনো কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যসব ব্যক্তির তুলনায় একধাপ এগিয়ে থাকেন। কর্মক্ষেত্রে সুন্দর আচরণ সফলতার পূর্বশর্ত।

সাক্ষাতের শুরুতে সালাম দেওয়া : সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। কল্যাণ কামনা। দোয়া। সালাম প্রদানের মাধ্যমে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে হূদ্যতা ও সমপ্রীতি গড়ে ওঠে। অফিসে সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহীতা কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে সালাম প্রদান করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন ‘আমলটি উত্তম? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অপরকে খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১২)

হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা : হাসিমুখে কথা বলা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি আচরিত সুন্নাহ। কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী ও আগত সব সেবাগ্রহীতার সাথে সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলতে হবে। মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করলে সদকার সওয়াবও পাওয়া যায়। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-১৯৭০)

নম্র আচরণ করা : একই অফিসে একই পদে কর্মরত দুইজন সহকর্মীর কাজকর্মের স্টাইলের চিন্তাভাবনা মতের বিভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক।  মনমালিন্য হতেই পারে। তখন কোনো তৃতীয়পক্ষের সহায়তা নিয়ে বা নিজেরাই খোলামেলা আলোচনা করে সমাধান করে নিতে হবে। নিজ আচরণে সর্বদা কোমলতা সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সবকিছু  সহজভাবে মেনে নিয়ে  কাজ করাই কর্মক্ষেত্রে সফল কর্মীর বৈশিষ্ট্য। ইরশাদ হয়েছে"‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হূদয় হয়েছিলেন। যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজেকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা আল ইমরান, আয়াত নং -১৫৯)

একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন পদাধিকারী ব্যক্তি থাকেন। কেউ হয়তো একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বয়েসের বড় হলেও পদের দিক থেকে ছোট। আবার কেউ অন্যদের তুলনায় বয়েসের দিক থেকে ছোট হলেও যোগ্যতার দিক থেকে বড় হওয়ায় বড় পদের কর্মরত থাকেন। কর্তা ও প্রতাবশালীর সামনে সবাই বিনয় প্রকাশ করে। তার আদেশ পালন করে। কিন্তু প্রকৃত বিনয় হলো, নিজের সমপর্যায়ের লোকদের সাথে এবং নিজের থেকে ছোটদের সাথে সুন্দর আচরণ করা।

সহকর্মীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা : প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতির শংকা না থাকলে যথাসম্ভব দোষত্রুটি গোপন রাখা। সহকর্মীদের ব্যাক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো থেকে বিরত থাকা। অভ্যন্তরীণ দোষত্রুটি নিয়ে মাথা না ঘামানো। কেননা, এতে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়ন হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত, আযাত-১২)

ছাড় দেওয়া ও সহযোগিতা করা : একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি একে অপরের প্রতিবেশী। তাই প্রতিবেশী হিসেবে একে অপরের কাছ থেকে সর্বোত্তম আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উওম।’ [তিরমিজি, হাদিস নং-১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭] মানুষের জীবনে বিপদ-আপদ, অসুস্থতা খুব স্বাভাবিক বিষয়। তাই বিপদাপদ বা অসুস্থতাজনিত সময়ে একে অপরের কাজে সর্বাত্মক সহায়তা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। কোন মুসলিম না কোন মুসলিমের ওপর জুলুম করবে, না তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে  দেবে। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহতায়ালা তার অভাব মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-২৪৪২)

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads