• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার ভয়াবহতা

ফাইল ছবি

ধর্ম

মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার ভয়াবহতা

  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০২১

অপবাদ দেওয়া ইসলামে যেমন নিষিদ্ধ, তেমনিভাবে সামাজিক দৃষ্টিতেও ঘৃণিত। এই অপবাদের কারণে একজন মানুষ আরেকজনের মান-মর্যাদা সব বিনষ্ট করে ফেলে। আমাদের সমাজে নিজের স্বার্থের জন্য ঘটে যায় এরকম  হাজারো ঘটনা। স্রেফ অনুমানের ভিত্তিতে এরকম কতো ঘটনা হরদম ঘটছে। এই পরিস্থিতি রীতিমতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গল্প, গুজব, আড্ডা যত যাই হোক। সর্বত্রই অন্যের দোষচর্চা। অন্যের দুর্নাম, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। জানাশোনা-পরিচয় নেই কিছুই। তবুও একজনকে যাচ্ছেতাই বলা হচ্ছে। যিনি বলছেন তার পাপবোধ নেই। বিবেকে বাধে না। যারা শুনছেন তারাও কিছু বলেন না। বক্তার সঙ্গে তাল মেলান। একজনের কাছ  থেকে শোনেন, অমনিতেই ছড়িয়ে দিন আরেকজনের কাছে। একটুও যাচাই করার চেষ্টা করেন না যে, কথাটা কী আসলেই সঠিক। আপনার এই যাচাই না করার কারণে আপনি যখন অন্যত্রে বলেন তখন এটা মিথ্যায় পরিণত হয়। মিথ্যা বলা যে কত বড় গুনাহ, তা একটি হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় গুনাহ কী, আমি কি তোমাদের জানাব না?’ সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও মাতাপিতাকে কষ্ট দেওয়া। তিনি হেলান দিয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন। এরপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান এবং মিথ্যা কথা।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)

অন্যের নামে মিথ্যা দোষারোপ করা জঘন্য গোনাহ থেকেও আমরা বেঁচে থাকি না। কারো সম্মানহানি করার অধিকার অন্যের নেই। ইসলামে মিথ্যা দোষারোপের সুযোগ নেই। এটা ঘৃণিত অপরাধ। শাস্তিযোগ্য। আল্লাহতায়ালা অপবাদ রটনাকারীর শাস্তির ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ‘কোনো পূতচরিত্রা নারীর বিরুদ্ধে কেউ (ব্যভিচারের) অপবাদ দিয়ে যদি চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে অপবাদ রটনাকারীকে শাস্তি হিসেবে ৮০ বেত মারবে। আর কোনোদিন তার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। এরা সত্যত্যাগী।’ (সুরা নূর, আয়াত-৪) মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা চরিত্রহীনতার মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তা তোমাদেরই একটি দল। (কিন্তু এই অপবাদে যাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে) তারা যেন নিজেদের জন্যে বিষয়টিকে ক্ষতিকর মনে না করে বরং এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। (অপবাদ রটনাকারী) প্রত্যেককেই এ পাপের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এদের মধ্যে যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন আজাব।’ (সুরা নূর, আয়াত-১১) অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (সুরা আহযাব, আয়াত-৮৫)

কেউ অন্যায়ভাবে কোনো মুসলমান ভাইয়ের মান-ইজ্জত খাটো করলে তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে যদি এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে যেখানে তার মানহানি ঘটে এবং সর্বদা খাটো করা হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল।’ (আবু দাউদ)

কাউকে দোষারোপ করা তো দূরের কথা, কারো সম্পর্কে প্রমাণ ছাড়া কিছু বলাও যাবে না। অহেতুক মানুষকে দোষারোপ করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেনো এর প্রথম কারণ। মানুষ একটা কথা শুনে এর সত্যায়ন না করে ছড়িয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে। এভাবে একটা ভিত্তিহীন কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বজুড়ে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনদের প্রতি তোমরা ভালো ধারণা পোষণ করবে। অনুমান করেও কিছু বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।’ (সুরা আল হুজরাত, আয়াত-১২) পরিশেষে বলবো, আমরা একে অন্যের সাথে হিংসা করা ছেড়ে দেই। অন্যের দোষচর্চা, মিথ্যা অপবাদ, দুর্নাম রটানো ছেড়ে দেই। এগুলো খুবই খারাপ। এসব কাজ আপনাকে কখনোই প্রশান্তি দেবেনা। বরং আপনার জীবনে নেমে আসবে অশান্তি আর অশান্তি। আর এর কারণে আপনার পরিবারও থাকবে অশান্তিতে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :উসমান বিন আ. আলিম

মুহাদ্দেস, দারুল উলুম মোহাম্মদপুর কওমী মাদরাসা, চাটমোহর, পাবনা

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads