• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কোরআনের আমলই হার্টের যাবতীয় চিকিৎসা

  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০২১

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ হার্ট আল্লাহতায়ালার অনন্যদান। মানবদেহে রোগের বিস্তার সম্পর্কে কোরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানের ধারাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি। (ইবনে মাজাহ) সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে হার্টের সুস্থতাসহ সর্বপ্রকার রোগ-বালাই থেকে হিফাজত থাকা জরুরি। হূদরোগের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার প্রতিটির ব্যাপারেই  কোরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দশন। এখানে কিছু তুলে ধরা হলো। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, ‘অর্থাৎ যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা শোয়ারা, আয়াত-৮০) রোগাক্রান্ত বান্দাহকে আল্লাহ নিরাময় করবেন। এ কথা আল্লাহ কোরআনুল কারীমে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষের প্রতিটি রোগব্যাধির নিয়ামক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষেধক পাঠিয়েছেন এবং অসংখ্য খাবার উপাদান পাঠিয়েছেন। এ উপাদান যদি মাত্রাতিরিক্ত আকারে কেউ গ্রহণ করে তখনই বাধে সমস্যা। তাই খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

হূদরোগের কারণ : চিকিৎসাবিজ্ঞানে হূদরোগের প্রধান কারণ হচ্ছে-থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃশ্চিন্তা, যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি, অত্যধিক মদপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ব্যবহার এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই হূদরোগের কারণ। মানুষ ইসলামি অনুশাসন মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে তবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের নানা প্রাঙ্গণে মানুষ হরহামেশাই নানা ধরনের হতাশা ও দুঃশিন্তায় ভুগে থাকে। যা মানুষের জন্য বড়ই ক্ষতির কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত-৮৭) আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘অর্থাৎ মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানামতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।’ (সুরা জুমার, আয়াত-৪৯)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (সহিহ বুখারি) মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে তথা হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। যা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহতায়ালা হলেন আমাদের জীবনের মালিক এবং মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনকে ধবংসের দিকে ঠেলে দেওয়াকে আল্লাহতায়ালা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন।

আল্লাহতায়ালা মাদক ও নেশাকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা মায়িদাহ, আয়াত-৯০) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সব নেশা জাতীয় পানীয়ই হারাম। (বুখারি ও মুসলিম) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,  অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত -১৯৫)

হূদরোগসহ সব রোগ থেকে প্রতিকারে ইসলাম : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা দিতে এবং সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। হারাম বস্তু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। হাদিসে এসেছে ‘আল্লাহতায়ালা রোগও দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও দিয়েছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না। হারাম বস্তুতে আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। আসুন নিজেদেরকে রোগমুক্ত রাখতে উক্ত বিষয়গুলো থেকে নিজেদেরকে হিফাজত করি।

খাদ্য-পানীয় মানুষের রোগ-ব্যাধির অন্যতম কারণ : হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট সকল রোগের কেন্দ্রস্থল।’ ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-৩১) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (ইবনে মাজা)

খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ না দেওয়া। কারণ এতে রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি)  খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীর চর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা ইত্যাদির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা, মনোকষ্ট, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণগ্রস্ততা এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (সহিহ বুখারি) শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানুষের মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আল্লাহতায়ালা বলেন,  ‘জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ, আয়াত ২৮)

আমল  কোরআনুল কারীমের আমলেও হূদপিণ্ডের ব্যথা ও ব্যধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। যারা নিয়মিত কুরআনের আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাদের হূদপি্লের ব্যথাসহ যাবতীয় রোগব্যধিগুলো দূর করে দেবেন। দোয়াটি হলো। উচ্চারণ : আল্লাজিনা আমানু ওয়া তাত্বমাইন্নু ক্বুলুবুহুম বিজিকরিল্লাহি আলা বিজিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল ক্বুলুবু।’ (সুরা রাদ, আয়াত ১৩) যে ব্যক্তি সুরা রাদের উল্লেখিত আয়াত নিয়মিত ৪১ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাদ্বারা তার হার্ট বা হূদপিণ্ডের ব্যথা ও রোগ-ব্যধি দূর করে দেবেন। আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশি বেশি জিকির করাও জরুরি। সুতরাং আল্লাহর স্মরণ ও  কোরআনের আমলই মানুষকে হার্ট বা হূদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যধি ও ব্যথা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। পরিশেষে... ইসলাম মানবতার কল্যাণ ও সফলতায় প্রয়োজনীয় সবই করেছে। যার প্রমাণ বহন ক েকোরআন ও হাদিস। তাই সবার উচিত, সুস্থ হার্ট ও সুস্থ শরীরের জন্য কুরআনের বিধি-নিষেধগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলা। ইসলামি অনুশাসনগুলোর ওপর গুরত্ব দেয়া। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপণে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্ঠা করা। আল্লাহ সবাইকে বুঝার মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 লেখক :

কোরআনের আমলই হার্টের যাবতীয় চিকিৎসা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ হার্ট আল্লাহতায়ালার অনন্যদান। মানবদেহে রোগের বিস্তার সম্পর্কে কোরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানের ধারাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি। (ইবনে মাজাহ) সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে হার্টের সুস্থতাসহ সর্বপ্রকার রোগ-বালাই থেকে হিফাজত থাকা জরুরি। হূদরোগের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার প্রতিটির ব্যাপারেই  কোরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দশন। এখানে কিছু তুলে ধরা হলো। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, ‘অর্থাৎ যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা শোয়ারা, আয়াত-৮০) রোগাক্রান্ত বান্দাহকে আল্লাহ নিরাময় করবেন। এ কথা আল্লাহ কোরআনুল কারীমে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষের প্রতিটি রোগব্যাধির নিয়ামক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষেধক পাঠিয়েছেন এবং অসংখ্য খাবার উপাদান পাঠিয়েছেন। এ উপাদান যদি মাত্রাতিরিক্ত আকারে কেউ গ্রহণ করে তখনই বাধে সমস্যা। তাই খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

হূদরোগের কারণ : চিকিৎসাবিজ্ঞানে হূদরোগের প্রধান কারণ হচ্ছে-থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃশ্চিন্তা, যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি, অত্যধিক মদপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ব্যবহার এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই হূদরোগের কারণ। মানুষ ইসলামি অনুশাসন মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে তবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের নানা প্রাঙ্গণে মানুষ হরহামেশাই নানা ধরনের হতাশা ও দুঃশিন্তায় ভুগে থাকে। যা মানুষের জন্য বড়ই ক্ষতির কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত-৮৭) আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘অর্থাৎ মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানামতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।’ (সুরা জুমার, আয়াত-৪৯)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (সহিহ বুখারি) মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে তথা হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। যা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহতায়ালা হলেন আমাদের জীবনের মালিক এবং মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনকে ধবংসের দিকে ঠেলে দেওয়াকে আল্লাহতায়ালা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন।

আল্লাহতায়ালা মাদক ও নেশাকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা মায়িদাহ, আয়াত-৯০) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সব নেশা জাতীয় পানীয়ই হারাম। (বুখারি ও মুসলিম) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,  অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত -১৯৫)

হূদরোগসহ সব রোগ থেকে প্রতিকারে ইসলাম : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা দিতে এবং সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। হারাম বস্তু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। হাদিসে এসেছে ‘আল্লাহতায়ালা রোগও দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও দিয়েছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না। হারাম বস্তুতে আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। আসুন নিজেদেরকে রোগমুক্ত রাখতে উক্ত বিষয়গুলো থেকে নিজেদেরকে হিফাজত করি।

খাদ্য-পানীয় মানুষের রোগ-ব্যাধির অন্যতম কারণ : হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট সকল রোগের কেন্দ্রস্থল।’ ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-৩১) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (ইবনে মাজা)

খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ না দেওয়া। কারণ এতে রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি)  খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীর চর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা ইত্যাদির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা, মনোকষ্ট, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণগ্রস্ততা এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (সহিহ বুখারি) শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানুষের মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আল্লাহতায়ালা বলেন,  ‘জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ, আয়াত ২৮)

আমল  কোরআনুল কারীমের আমলেও হূদপিণ্ডের ব্যথা ও ব্যধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। যারা নিয়মিত কুরআনের আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাদের হূদপি্লের ব্যথাসহ যাবতীয় রোগব্যধিগুলো দূর করে দেবেন। দোয়াটি হলো। উচ্চারণ : আল্লাজিনা আমানু ওয়া তাত্বমাইন্নু ক্বুলুবুহুম বিজিকরিল্লাহি আলা বিজিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল ক্বুলুবু।’ (সুরা রাদ, আয়াত ১৩) যে ব্যক্তি সুরা রাদের উল্লেখিত আয়াত নিয়মিত ৪১ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাদ্বারা তার হার্ট বা হূদপিণ্ডের ব্যথা ও রোগ-ব্যধি দূর করে দেবেন। আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশি বেশি জিকির করাও জরুরি। সুতরাং আল্লাহর স্মরণ ও  কোরআনের আমলই মানুষকে হার্ট বা হূদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যধি ও ব্যথা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। পরিশেষে... ইসলাম মানবতার কল্যাণ ও সফলতায় প্রয়োজনীয় সবই করেছে। যার প্রমাণ বহন ক েকোরআন ও হাদিস। তাই সবার উচিত, সুস্থ হার্ট ও সুস্থ শরীরের জন্য কুরআনের বিধি-নিষেধগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলা। ইসলামি অনুশাসনগুলোর ওপর গুরত্ব দেয়া। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপণে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্ঠা করা। আল্লাহ সবাইকে বুঝার মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন

কামিল হাদিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

 কো-চেয়ারম্যান, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads