• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

পোস্টার, ম্যাসিভ যুদ্ধ ৭১

ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে গেমস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশ, যেই নামটির সঙ্গে মিশে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ওপর নির্ভর করে ইতোমধ্যেই অনেক তথ্যচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, নাটক, সিনেমা, এমনকি ভিডিও গেমও বানানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের প্রজন্মের জানার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তুলতে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। যার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ভিডিও গেম। উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরো বাস্তবিকভাবে তুলে ধরতে ইতোমধ্যেই অনেক কম্পিউটার ও স্মার্টফোনভিত্তিক ভিডিও গেম নির্মাণ করেছেন দেশি গেম নির্মাতারা। স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হওয়া তেমনই কিছু দেশি গেমের খোঁজ থাকছে পাঠকদের জন্য।

হিরোস অব ৭১, হিরোস অব ৭১ : রিটেলিয়েশন ও মুক্তিক্যাম্প

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি মোবাইল গেমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘হিরোস অব ৭১’। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের যুদ্ধকালীন একটি ঘটনা নিয়ে কাল্পনিক গল্পের মিশেল ঘটিয়ে গেমটি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উন্মুক্ত হয় গেমটি। তৈরি করেছে দেশি প্রতিষ্ঠান ‘পোর্টব্লিস’। ‘হিরোস অব ৭১’-এ রয়েছে ১৬টি লেভেল। খেলা যাবে তিনটি চরিত্র নিয়ে। অস্ত্র ও দক্ষতা ব্যবহার করে নিজেদের ক্যাম্প রক্ষা করতে হবে গেমারকে। প্রথম লেভেলে অল্পসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা আসবে। লেভেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বাড়বে নৃশংসতার মাত্রাও। প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ১৬টি লেভেল খেলতে পারলেই ক্যাম্প রক্ষা করা যাবে।

এছাড়া ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ অবমুক্ত হয় ‘হিরোস অব ৭১’-এর সিক্যুয়াল ‘রিটেলিয়েশন’। আগের পর্বের শেষ থেকে শুরু এর কাহিনী। এ পর্বের কাহিনীতে বরিশালের শনিরউল্লার হাটের পাকিস্তানি টর্চার ক্যাম্পে কয়েকজন নারীকে অপহরণ করে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এদের উদ্ধার করতে প্রস্তুত হচ্ছে শামসু বাহিনী। ঘটনাচক্রে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় অনিলার। শামসু বাহিনীতে যোগ দেয় সে। খালের ওপর থাকা পাকিস্তানি কনভয়ে ব্যবহূত একটি ব্রিজ উড়িয়ে দিতে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু শামসু বাহিনীর অবস্থান জেনে যায় পাকিস্তানি সেনারা। শামসু বাহিনীর সামনে একটাই পথ- মরো নয়তো মারো।

এদিকে চলতি মাসেই ‘হিরোস অব ৭১’ এবং ‘হিরোস অব ৭১ : রিটেলিয়েশন’-এর পর তারই সিক্যুয়াল হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে ‘মুক্তিক্যাম্প’-এর পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ। ২০১৭ সালের বিজয় দিবসে বাজারে উন্মুক্ত করা হয়েছিল গেমটির বেটা সংস্করণ। ‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস’ ঘরানার স্ট্র্যাটেজিনির্ভর গেম বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়। তবে আমাদের দেশের কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ট্র্যাটেজি গেম তৈরি হয়নি বললেই চলে। ‘মুক্তিক্যাম্প’ সেই আফসোস দূর করছে।

এতে মর্টার মোস্তাক, পাপন বিশ্বাস, অনিলা আবিদসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার দেখা মিলবে। গেমাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে এনে প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। যোদ্ধারা দক্ষ হলে তাদের পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো যাবে। হিরোস অব ৭১-এর ডাউনলোড লিঙ্ক : goo.gl/BCPOzy, হিরোস অব ৭১ : রিটেলিয়েশন-এর ডাউনলোড লিঙ্ক : goo.gl/fIdNcV

‘গেরিলা ব্রাদার্স’

গেরিলা যুদ্ধকে ফোকাস করে দেশের প্রথম থার্ড পারসন কো-অপ মাল্টিপ্লেয়ার শুটার গেম ‘গেরিলা ব্রাদার্স’ নামে একটি মোবাইল গেম নির্মাণ করেছেন তরুণ গেম নির্মাতা বনি ইউসুফ। গেমটিতে বিশেষ সুবিধাগুলো হচ্ছে, এতে থার্ড পারসন কো-অপ মাল্টিপ্লেয়ার সুবিধা রাখার ফলে গেমটি লোকাল ওয়াইফাই ব্যবহার করে একসঙ্গে দুজনও খেলতে পারবেন। আরো আছে ডায়নামিক কাভার সিস্টেম, যার মাধ্যমে গেমার তার সামনে থাকা যেকোনো কিছুর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারবে এবং সেখান থেকে গুলি করতে পারবে। একই সঙ্গে গেমটিতে জেরোস্কোপ বেজড নিশানা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে গেমার তার স্মার্টফোনটিকে নড়াচড়া করেই নিশানা নির্ধারণপূর্বক গুলি করে শত্রুকে শেষ করতে সক্ষম হবে। এছাড়া এই গেমে সম্পূর্ণ বাংলায় ২৫টিরও বেশি পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথোপকথন থাকছে। সবগুলো ফিচারই বাংলাদেশে নির্মাণ করা কোনো গেমে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন গেমটির নির্মাতা।

ম্যাসিভ যুদ্ধ ৭১

বাংলাদেশের সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে আরো অনেক যুদ্ধ আছে। সন্তান হারানো মায়ের যুদ্ধ, যুদ্ধশিশুকে মায়ের আর ফিরে না পাওয়ার যুদ্ধ, ভারতে শরণার্থী হয়ে যাওয়া এক কোটিরও বেশি বাঙালির শরণার্থী জীবনের যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রান্তিক মানুষের অবস্থা, কোন সেক্টরে কী রকম যুদ্ধ হয়েছে, যোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থানের যাবতীয় তথ্যসহ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চীন, ভারত, রাশিয়া, আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবলিত গেম হচ্ছে ‘ম্যাসিভ যুদ্ধ ৭১’।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাসিভ স্টারের’ প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব আলম জানান, ২০২১ সাল নাগাদ গেমটির ২১টি এপিসোড নির্মাণ করবেন তারা। এরই মধ্যে আড়াই বছরের চেষ্টায় একটি পর্ব নির্মাণ করেছেন। প্রথম পর্ব তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মার্চ-এপ্রিল সময়কালে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে। আমরা আসলে মুক্তিযুদ্ধের একদম সঠিক তথ্যনির্ভর গেম তৈরিতে হাত দিয়েছি। তাই শুরুতে আমাদের সময় অনেক বেশি লেগেছে|

ব্যাটল অব ৭১

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিত অন্যতম কম্পিউটার গেম ‘ব্যাটল অব ৭১’। গেমটিতে দেখা যাবে বিশ্বে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ত্রিমাত্রিক মডেল, যা পূর্বে কখনো করা হয়নি।

ওয়াসিইউ টেকনোলজি গেমটির বাজার দাম রেখেছে ১৫০ টাকা। আর গেমটি খেলতে পারবেন গেমাররা যেকোনো কম্পিউটারে। তবে ভালো গ্রাফিক্স পেতে হলে ২ জিবি গ্রাফিক্স, কোরআই৩ এবং ৪ জিবি র্যাম লাগবে। তবে ওয়াসিইউর ওয়েবসাইটে আগাম চাহিদা জানালে ছাড় পাওয়া যাবে।

গেমটি তৈরি করেছে ওয়াসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড, যা তাদের প্রথম কম্পিউটার গেম। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান গেম নির্মাতা (ডেভেলপার) হিসেবে রয়েছেন ফারহান মাহমুদ, অ্যানিমেটর সবুজ আল মামুন। পরিকল্পনা করেছেন নুর-ই-আরাফাত এবং ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেছেন নাজিম। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রোগ্রামার মাশরুর মাহমুদ। যার বয়স মাত্র ১৪ বছর। জানা যায়, ২০১৩ সালের শেষের দিকে ফয়সাল করিম চিন্তা করেন মুক্তিযুদ্ধের ওপর কম্পিউটার গেম নির্মাণ করার। তারপর সে এবং তার ১৩ সদ্যসের দল মিলে তৈরি করে ফেলে পরিপূর্ণ এই কম্পিউটার গেম।

মুক্তিযুদ্ধ ৭১

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত। ঢাকার ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আগুনে পুড়তে থাকে রাতের ঢাকা। ভারী বোমার আওয়াজ, মেশিনগানের গুলির শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠে শহুরে মানুষ। পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ঘরবাড়ি ও মানুষ। এরই মধ্যে হানাদারদের প্রতিরোধ করতে রাইফেল তাক করে এগিয়ে যাচ্ছেন দু-একজন করে। গুলি চালাচ্ছেন গাছের আড়াল থেকে। লুটিয়ে পড়ছে শত্রুসেনার দেহ। এমন ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে মোবাইল গেম ‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১’। শুধু যুদ্ধ নয়, গেমটির মধ্যে ফুটে উঠেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কিছু দিনক্ষণ ও স্থান ধরে গেমটি তৈরি হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুদানে গেমটি তৈরি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন। গেমটি তৈরিতে তার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকী। ১৪ লেভেলের গেমটিতে যুদ্ধ করতে হবে ১১টি সেক্টরে। পাশাপাশি চালাতে হবে তিনটি বিশেষ অভিযান। অভিযানগুলো সফলভাবে শেষ করতে পারলেই মুক্তিযোদ্ধা পাবেন গাজির মর্যাদা। গেমটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ বাজারে আসে এ বছরের ২৬ মার্চ। উন্নত অ্যানিমেশন, সাউন্ড আর গ্রাফিক্সের গেমটি তৈরিতে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সি শার্প ও জাভা স্ক্রিপ্ট। ম্যাক, লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন ও উইন্ডোজ ফোনে গেমটি খেলা যাবে বলে জানিয়েছে নির্মাতা সূত্র। https://goo.gl/qchJE6 ঠিকানা থেকে অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ ডাউনলোড করা যাবে।

 

প্লে স্টোরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অন্যতম কয়েকটি গেম হচ্ছে-

* ওয়ার ৭১ : দ্য ফার্স্ট ডিফেন্স। ডাউনলোড লিঙ্ক : goo.gl/wpIOED

* ভিআর ওয়ার। ডাউনলোড লিঙ্ক : goo.gl/W0jbiw

* গেরিলা ৭১। ডাউনলোড লিঙ্ক : goo.gl/iCIqOm

* লিবারেশন ওয়ার। ডাউনলোড লিঙ্ক : goo.gl/SqqCwZ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads