• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষ ও অন্য প্রাণীর মধ্যে সুসম্পর্ক কল্যাণেরই সমার্থক

বুদ্ধিমত্তা, ক্রীড়াদক্ষতা ও বন্ধুসুলভ স্বভাবের জন্যও ডলফিন খুবই জনপ্রিয়

ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বন্দিদশার ডলফিনের ওপর গবেষণার ফল

মানুষ ও অন্য প্রাণীর মধ্যে সুসম্পর্ক কল্যাণেরই সমার্থক

  • তপু রায়হান
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৮

সুবিশাল মহাসমুদ্রের প্রাণিকূলের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক প্রাণী সম্পর্কেই জানতে পেরেছে মানুষ। আর সম্পর্ক গড়তে পেরেছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রাণীর সঙ্গে। সমুদ্রের যেসব প্রাণী মানুষের বসে এসেছে বা মানুষের সঙ্গে যাদের বন্ধুত্ব হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত প্রাণীটির নাম ডলফিন বা শুশুক। ডলফিন সিটেশন বর্গের (তিমি-সম্বন্ধীয়) জলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। তিমিও এই বর্গের প্রাণী। ডলফিন মানে হচ্ছে জরায়ুধারী মাছ। এরা একটি করে বাচ্চা দেয় এবং সন্তানের প্রতি খুবই যত্নশীল হয়। বুদ্ধিমত্তা, ক্রীড়াদক্ষতা ও বন্ধুসুলভ স্বভাবের জন্যও ডলফিন খুবই জনপ্রিয়। অধিকাংশ ডলফিন দলবদ্ধভাবে চলে। সেই ২০১০ সালের এক গবেষণায় প্রমাণ মেলে ডলফিনের এমন সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মানুষের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অনেকখানি মিলে যায়। তখন গবেষকরা দেখেন ডলফিনরা মানুষের মতো আত্মসচেতন। তারা ব্যথা ও দুঃখ-দুর্দশা অনুভব করে এবং তা কমাতে মানুষ যেমন বুদ্ধি-বিবেচনা করে কাজ করে ডলফিনও সেই প্রতিক্রিয়ায় কাজ করে। এছাড়া সামাজিক প্রাণী হিসেবে মানুষ যেমন একজনের সঙ্গে আরেকজন মিলেমিশে থাকে, ডলফিনরাও সেভাবেই থাকতে পছন্দ করে। সে সময় গবেষকরা সিদ্ধান্ত দেন যে, তিমি আর ডলফিন সম্পর্কে আগে যেমন ধারণা করা হতো আসলে তারা তার চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান। তখন আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোবায়োলজিস্ট লোরি মারিনো গবেষণার পরে বলেন, ডলফিনরা অনেক বেশি আত্মপরিচয়বোধসম্পন্ন।

এছাড়া তারা তখন জানান, ডলফিনের মস্তিষ্কের আকার মানুষের মস্তিষ্কের কাছাকাছিই। আর তাই তাদের বুদ্ধির পরিমাণও মানুষের কাছাকাছি। তবে এবার ফ্রান্সের একদল গবেষক ডলফিনের ওপর করা সাম্প্রতিক এক গবেষণার পরে জানিয়েছেন, ডলফিনের সুখ-দুঃখের অনুভূতি অনেকটাই মানুষের মতো। তাদের সঙ্গে মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা কল্যাণেরই সমার্থক।

পার্ক আস্তেরিক্স নামের একটি মেরিন পার্কের গবেষক ড. ইসাবেলা ক্লেগের নেতৃত্বে ডলফিনের ওপর করা এই গবেষণা নিবন্ধটি দ্য জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড বিহেভিয়রাল সায়েন্স নামের একটি সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

প্যারিসের কাছাকাছি এই আস্তেরিক্স পার্কে আবদ্ধ অবস্থায় থাকা কিছু ডলফিনের অনুভূতি পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা। তারা দেখার চেষ্টা করেন আটক অবস্থায় থাকা ডলফিনগুলো বিভিন্ন বিষয়ে কী ফলাবর্তন দেয়।

গবেষকরা ডলফিনের ফলাবর্তন দেখার জন্য ঠিক ডলফিনের দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদের ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন সামুদ্রিক এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি পরিচিত মানুষদের সঙ্গে খুব গভীরভাবে মিথষ্ক্রিয়া করে।

ড. ইসাবেলা প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীর আচরণ সম্পর্কিত ল্যাবের সহকর্মীদের নিয়ে ডলফিনের আচরণ রহস্য উন্মোচনের জন্য একটি গবেষণার ছক কষেন। এক্ষেত্রে তারা ডলফিনের শারীরিক ভঙ্গিকে অনুভূতি প্রকাশের সূচক হিসেবে বিবেচনা করেন। এ বিষয়ে ড. ইসাবেলা ক্লেগ বিবিসি নিউজকে বলেন, আমরা আসলে দেখতে চেয়েছিলাম আটক অবস্থায় ডলফিনগুলো কোন ধরনের আচরণ সবচেয়ে বেশি করে।

এর ফল পেতে ইসাবেলা তিনটি কাজ করেন। প্রথমত, একজন প্রশিক্ষক নিয়মিতই ডলফিনগুলোকে প্রশিক্ষণ দিতেন ও তার সঙ্গে খেলতে যান। দ্বিতীয়ত, ডলফিনের পুলে বেশ কিছু খেলনা যোগ করেন। তৃতীয়ত, একটি নিয়ন্ত্রক পুলে রাখেন যা ডলফিনগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে নির্দেশ দেয়।

এগুলো পর্যক্ষেণ শেষে একটি মজার বিষয় লক্ষ করেন ইসাবেলা ও তার দল। তারা দেখেন, বেশিরভাগ ডলফিনই নিয়মিত যে লোকটি তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসেন তার দিকেই প্রথমে এগিয়ে আসে। ইসাবেলা বলেন, ডলফিনগুলো এই কাজটি করে তাদের গুপ্তচর বাসনা থেকে।

ইসাবেলা জানান, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তারা দেখতে পান যে, পুলে খেলনা থাকায় ডলফিনগুলো আগের তুলনায় বেশি সময় কাটায় পুলে। এই দৃশ্য আমরা অন্যান্য চিড়িয়াখানা বা পশুর খামারেও দেখেছি। এসব বিচারে আমাদের মনে হয়েছে, মানুষ ও অন্য প্রাণীর মধ্যে সুসম্পর্ক কল্যাণেরই সমার্থক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads