• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কীটনাশকে আসক্ত হচ্ছে ভ্রমর!

কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বিলুপ্তির পথে হাজারো প্রজাতির কীট-পতঙ্গ

ছবি : ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীটনাশকে আসক্ত হচ্ছে ভ্রমর!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কনভেনশনাল কৃষিতে অতিরিক্ত হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। কীটনাশকের প্রভাবে ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক ইতর প্রজাতির প্রাণী, বিলুপ্তির হুমকিতে আছে হাজারো প্রজাতির কীট-পতঙ্গ। বিশেষত, গত কয়েক দশক ধরে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার চরম ঝুঁকিতে ফেলে সেই অঞ্চলের মৌমাছি, বোলতা ও ভ্রমরের। ভয়ঙ্কর হারে কমেছে এদের সংখ্যা। কীটনাশকের প্রভাবে চলার পথেই এরা মারা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। আর যেগুলো বিষের প্রভাব কাটিয়ে বেঁচেছে তাদের অনেকে বন্ধ্যাও হচ্ছে চিরকালের মতো, আবার কেউ কেউ কীটনাশকেই আসক্ত হয়ে পড়ছে।

রয়েল সোসাইটির সহায়তায় ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি লন্ডন সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছে, তাদের দেশের হাম্বলবি বা ভ্রমর কীটনাশকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ভ্রমরের এই আসক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি তারা গবেষণাগারেও পরীক্ষা করে দেখেছেন। এ বিষয়ে সায়েন্স ডেইলির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পরীক্ষাটি করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেন, ভ্রমরের খাদ্যাভ্যাসে কীটনাশকের প্রভাব নিয়ে আগে যে ধারণাটি ছিল তার চেয়ে ভয়াবহ প্রভাব রাখছে। গবেষকরা তাদের পরীক্ষায়, একাধিক বাটিতে চিনির দ্রবণ রাখেন এবং এর মধ্যে কয়েকটিতে প্রচলিত নিকোটিনয়েড গ্রুপের কীটনাশকের অতি স্বল্পমাত্রা যোগ করেন। গবেষকরা দেখেন, যেসব বাটিতে কীটনাশক মেশানো সেসব বাটির খাবারই যে ভ্রমর একবার খেয়েছে তারা বার বার খাচ্ছে সেই খাবার। আর সাধারণ চিনির দ্রবণের বাটির দিকে তুলনামূলক কম যাচ্ছে তারা।

এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও ইমপেরিয়াল কলেজের লাইফ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. রিচার্ড গিল বলেন, গবেষণা করতে গিয়ে আমরা আশ্চর্যজনকভাবে খেয়াল করলাম, যেসব ভ্রমর নিকোটিনয়েডযুক্ত চিনির দ্রবণে এক মুখ দিয়েছে তারা বার বার সেদিকে যাচ্ছে এবং ওই খাবারটিই খাচ্ছে। তবে কিছু ভ্রমর বরাবরই সেই খাবার থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি অনেকটা স্তন্যপায়ী প্রাণী বিশেষ করে মানুষের ধূমপানের মতো। যারা কখনো ধূমপান করেননি তারা সেটি থেকে বরাবর দূরে থাকেন। কিন্তু একটু একটু করে যারা ধূমপান শুরু করেন তারা এক সময় তাতে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে পড়েন।

ড. রিচার্ড গিল বলেন, ভ্রমরগুলো যখন বার বার নিকোটিনয়েডযুক্ত খাবার খায় তারপরই তার শারীরিক ভাষায় একজন আসক্ত ব্যক্তির মতো আচরণ ফুটে ওঠে।

তিনি জানান, টানা দশদিন ধরে এসব হাম্বলবি বা ভ্রমরের ওপর নজর রাখেন তারা। তখনই তারা ভ্রমরের এই আসক্ত হওয়ার বিষয়টি খেয়াল করেন। তবে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলার জন্য আরো কিছু গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ড. রিচার্ড গিল। তখন হয়তো কীটনাশকের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে উপকারী-কীটপতঙ্গকে রক্ষা করার উপায় জানা যাবে বা কম ক্ষতির কীটনাশক উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তাতে আরো দীর্ঘদিন প্রকৃতির ভারসাম্য টিকে থাকবে। বাসযোগ্য থাকবে আমাদের প্রিয় পৃথিবী।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads