• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কেন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি মেয়ে পেঙ্গুইন মারা যায়?

পেঙ্গুইন

ছবি : ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কেন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি মেয়ে পেঙ্গুইন মারা যায়?

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০১৯

পৃথিবীতে মোট ১৮ প্রজাতির পেঙ্গুইন রয়েছে। যার মধ্যে শুধু দুই প্রজাতির পেঙ্গুইন অ্যান্টার্কটিকায় বসবাস করে। বাকিরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়ার মতো উষ্ণ অঞ্চলে বসবাস করে। আর প্রতিবছর দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে হাজারো পেঙ্গুইন আটকা পড়ে। যার মধ্যে অধিকাংশই মৃত কিংবা খুব বাজেভাবে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর আটকে থাকা এসব পেঙ্গুইনের মধ্যে দেখা যায় পুরুষ পেঙ্গুইনের চেয়ে তিনগুণ বেশি মেয়ে পেঙ্গুইন মারা পড়ে বা আহত অবস্থায় থাকে।

কিন্তু কেন এতো বেশি পরিমান মেয়ে পেঙ্গুইন মারা যাচ্ছে তার কারণ খুজে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল কারেন্ট বায়োলজিতে এই বিষয়ে গবেষণায় ফলাফল পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

জার্নালে বলা হয়, সম্প্রতি জাপান এবং আর্জেন্টিনার বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এক গবেষণায় দেখেছেন, দক্ষিণ অ্যামেরিকার উপকূলে প্রতি বছর শীতের সময়ে হাজার হাজার ম্যাগলানিক প্রজাতির পেঙ্গুইন আটকে পড়ে, হয় মৃত বা ভয়ংকরভাবে আহত। ম্যাগলানিক প্রজাতির মেয়ে পেঙ্গুইনেরা খাবারের খোঁজে পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হারে উত্তরের দিকে মাইগ্রেট বা অভিবাসী হয়ে যাচ্ছে। আর তা করতে গিয়েই তারা আহত হচ্ছে বা মারা পড়েছে।

এর একটি কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাগরে ভেসে থাকা তেল নিয়ে তাদের শরীরগুলো ভেসে থাকে ঠান্ডায় জমে যাওয়া পানিতে। যদিও পেঙ্গুইনের পালক সবসময় শুকনো থাকে। তবু তেল মাখা শরীরে তাদের সাতার কাটতে কষ্ট হয়, ফলে ঠান্ডা পানিতে তাদের টিকে থাকা মুশকিল হয়।

যদিও পেঙ্গুইনের পালকও অন্য পাখিদের তুলনায় বেশি। কিন্তু তবু খাবারের অভাবে তাদের শরীরের অনেক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য তখন ঠিক মত কাজ করে না। আর্জেন্টিনার পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. ফ্ল্যাভিও কুইনটানা বলছেন, বেশির ভাগ সময়ে পেঙ্গুইনই খুব খারাপ অবস্থায় উপকূলে এসে পৌছায়।

যার কারণ শীতের সময় যখন তারা পরিযায়ী বা অতিথি হয়ে নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য অঞ্চলে যায়, বেশিরভাগ সময় তারা খাবারের সংকটে পড়ে । যে কারণে তারা সমুদ্র উপকূলে যায় খাবারের খোঁজে এবং মারা পড়ে ।

তিনি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে বেশি বিপদে পড়ে মেয়ে পেঙ্গুইন, যার পরিমাণ পুরুষদের চেয়ে তিন গুণ বেশি। এই হতাহতের ঘটনাটি পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য একটি হতে যাচ্ছে। কারণ পেঙ্গুইনেরা সাধারণত জীবনের জন্য সঙ্গী হয় পরস্পরের। আর মেয়ে পেঙ্গুইন কমে যাওয়া মানে হলো এদের বংশগতি বাধাগ্রস্ত হবার আশংকা রয়েছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষ আর নারী পেঙ্গুইনের ভ্রমণ গন্তব্যেও ফারাক তৈরি হয়েছে এখন। বছর খানেক আগে বিজ্ঞানীরা প্রজনন মৌসুম শেষে একদল পেঙ্গুইনকে অনুসরণ করেন। তারা দেখতে পান, মেয়েরা খাবারের খোঁজে উত্তরের দেশগুলোতে বিশেষ করে ব্রাজিলের দক্ষিণ দিকে ভ্রমণ করছে। কিন্তু পুরুষ পেঙ্গুইন বেশি যাচ্ছে উরুগুয়ের দিকে। আবার একই অঞ্চলের পুরুষ পেঙ্গুইনেরা সাধারণত কম ভ্রমণ করে। বরং তারা ঐ সময়ে সাগরের আরো গভীরে বেশি করে খাবারের অনুসন্ধান চালায়। বিজ্ঞানীরা এখন পেঙ্গুইনের সাতার কাটার রুট পরীক্ষা করে দেখছেন, কেন তারা মারা পড়ছে। এর ফলে হয়ত তাদের আটকে পড়া ঠেকানোর পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। যাতে নিহতের সংখ্যার হারও আরো কমে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র এক যুগের মধ্যে পেঙ্গুইনের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। যার প্রধান কারণ হিসেবে তারা অতিরিক্ত মাছ শিকারকেই দায়ী করছেন। কারণ, অতিরিক্ত মাছ শিকারের জন্যে কমে যাচ্ছে পেঙ্গুইনের খাবারের উৎস। সেই সঙ্গে মানুষের ফেলা বর্জ্যের কারণে ধ্বংস হচ্ছে এদের বিচরণক্ষেত্র।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads