• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
‘নিজে মানুষ না হলে দেশের সেবা করা যায় না’

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শোবিজ

‘নিজে মানুষ না হলে দেশের সেবা করা যায় না’

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

শাহীন সামাদ কেবল একজন নজরুল সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী নন। ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন কণ্ঠযোদ্ধাও। কণ্ঠকে হাতিয়ার করে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছিলেন গানে গানে। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের এই কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন সালেহীন বাবু

আপনাদের শুরু গল্পটা কেমন ছিল—

আমি সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলাম। যুদ্ধের প্রারম্ভে বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির আত্মপ্রকাশ ঘটে যারা তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করত। সেই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে বাংলাদেশি মুক্তি-সংগ্রামী শিল্প সংস্থা। আমাদের সেই দলে আরো ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, মুস্তফা মনোয়ারসহ অনেকেই। এভাবেই শুরু।

 

যুদ্ধের সময়কার দিনগুলো সম্পর্কে বলুন—

সে সময় আমি অনেক রিফিউজি ক্যাম্পে, যুদ্ধ বিধস্ত গ্রাম, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। মুক্তিসেনাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়েছি, স্টেজ পারফর্ম করেও যে অর্থ পেয়েছি তা তাদের পেছনে ব্যয় করেছি। তাদের ক্যাম্পে গিয়ে স্বাধীনতার উদ্যমী, জাগ্রত, শাশ্বত, গতিময় গানগুলো গেয়ে তাদের ক্লান্তি, ব্যথা ভুলিয়ে দিয়েছি যা তাদের নতুনভাবে প্রেরণা জুগিয়ে আরো অপ্রতিরোধ্য, অসীম সাহসী হয়ে পাক-হানাদারদের নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যয়ে অগ্রগামী করেছিল। এভাবেই আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম দিনের পর দিন। হাল ছাড়িনি।

 

একজন নারী হয়েও থেমে থাকেননি। শক্ত-মানসিকতা কোথায় থেকে পেয়েছিলেন—

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতের কথা আমি এখনো ভুলতে পারি না। কখনো ভুলতে পারব না। যতদিন বেঁচে থাকব এই দিনটার কথা মনে থাকবে। ওই দিনের গুলির বিদীর্ণ শব্দ এখনো আমার কানে বাজে। চারদিকে আগুন, ধোঁয়া, থেমে থেমে গুলির আওয়াজ। আমরা সবাই ভেঙে পড়েছিলাম আগত দিনগুলোর কথা ভেবে। তারপরও মনোবল হারাইনি। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশের জন্য কিছু একটা করব। অস্ত্র দিয়ে না পারি, কণ্ঠ তো আছে। এই কণ্ঠ দিয়েই যুদ্ধ করব। সেটাই করেছি মহান মুক্তিযুদ্ধে।

 

বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা, চিন্তা-বোধ কতটুকু দেখছেন—

আমি তো মনে করি নতুন প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতার চিন্তা-চেতনা পুরোপুরিই কাজ করে। ওরা এখন সবকিছুই বুঝতে পারে, অনেকটাই প্রোগ্রেসিভ। ওরা যা করছে ভালো বুঝেই করছে। আমরা যদি ৪৬ বছর আগে এত কম লোকজন নিয়ে দেশ স্বাধীন করে আনতে পারি, এখন তো প্রায় ১৮-১৯ কোটির মতো লোক। তাহলে নতুন প্রজন্ম কেন পারবে না? বুঝবে না? তাছাড়া ইন্টারনেটের যুগে তারা এখন সবকিছুই দেখছে, সচেতন হচ্ছে। আমি তো সম্পূর্ণরূপে আশাবাদী।

 

নারীদের মধ্যে এ জাগরণের প্রভাব কতটুকু দেখছেন—

এদেশের মেয়েদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন অনেক বেশি অগ্রগামী। তারা সবকিছু বুঝতে পারে, স্বাধীনতার চেতনা লালন করে। বোঝে তাদেরও দেশের জন্য কিছু করা দরকার এবং তারা করছেও।

 

আমরা কি কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পেয়েছি—

অবশ্যই পেয়েছি। আমরা আমাদের দেশকে পেয়েছি। আমাদের দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। আমাদের নিজস্ব পাসপোর্ট আছে, আগে আমরা কয়টাইবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেতাম। আর এখন বিদেশে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ৭১’র পরবর্তী সেই বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশ অনেক পার্থক্য। আমরা এখন নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ ।

 

দেশকে স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে কী কী করণীয়—

সে সময় আমরা ছিলাম সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষণা দিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ তার সেই এক ভাষণে আমরা সব বাঙালি এক মন, এক আত্মা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম মুক্তিযুদ্ধে। সেই সময়ে পারলে এখন কেন পারব না? এখন আমরা ভালো কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে খারাপ বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা করি। খারাপ বিষয়টাই বা কেন বেশি চিন্তা করি আমি বুঝি না। যাই ইচ্ছে হয়, তাই করতে মন চায়, যেভাবেই হোক পেতে চেষ্টা করি। আমাদের সবার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি কে? নিশ্চয় মা। মাকেই কিন্তু আমরা দেখব সবার আগে, জগতে মাকে ভক্তি না করলে কি কিছু পাওয়া যায়? আমার সোনার বাংলা, আমার মা। আমার মাকে তো আমারই শ্রদ্ধা করতে হবে, মায়ের জন্য সবকিছু করতে হবে। সবার একসঙ্গে থাকতে হবে। আমরা পারলে তোমরা পারবে না কেন?

 

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অন্তরে স্বাধীনতা, দেশপ্রেম কীভাবে লালন করা যায়—

মা-বাবা একটি সংসারের অভিভাবক। মা-বাবাকে সন্তানকে শিখাতে হবে মুক্তিযুদ্ধ কী? বঙ্গবন্ধু কী? বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোয় যেগুলো দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত সে অনুষ্ঠানগুলোয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে দেখানো, তাহলে কিন্তু সন্তান জানতে পারবে সবকিছু। মোট কথা মা-বাবার এখানে ভূমিকা নিতে হবে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, নিজে মানুষের মতো মানুষ না হলে দেশ-দশের সেবা করা যায় না।

 

সব মিলিয়ে আপনি আশাবাদী—

হ্যাঁ, আমি অবশ্যই আশাবাদী। তবে সাধনা দরকার। এ নতুন প্রজন্মই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে আরো উচ্চাসনে নিয়ে যাবে, সেদিন আর দূরে নয় যেদিন এ দেশ হবে তোমার আর আমার সোনার বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads