• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
তরুণদের সৎ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে

সৈয়দ হাসান ইমাম

ছবি : সংগৃহীত

শোবিজ

তরুণদের সৎ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

সৈয়দ হাসান ইমাম। প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। একাধিক পরিচয়ে পরিচিত যিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার, পরিচালক এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক। বিজয়ের মাসে গুণী এই ব্যক্তিত্ব নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন। যেখানে এসেছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। একই সঙ্গে উঠে এসেছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালেহীন বাবু-

 

বাঙালি জাতি গৌরবের বিজয় দিবস পালন করল। তিন বছর পর বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তি হবে। আপনার অনুভূতি কী?

অনুভূতির পুরোটাই নির্বাচনকে ঘিরে। কারণ আমরা ২১ বছর স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে ছিলাম। সেটা আমরা আরেকবার হতে দিতে চাই না। জামায়াতিরা নানান পন্থায় নির্বাচন করছে। বামপন্থি যারা, তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনের আগের এই সময়টায় প্রত্যাশা করি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি যাতে ক্ষমতায় থাকে।

 

এই ৪৭ বছরে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনে আমরা কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি?

আসলে এখানে ৪৭ বছর হবে না। কারণ ৪৭ বছরের মধ্যে ২১ বছর জামায়াত-বিএনপি কিংবা সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমরা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর যখন ক্ষমতায় আসি তার সাড়ে তিন বছর পরই জামায়াতিরা ক্ষমতায় এসে গেল আবার। সামরিক শাসন চালু হলো। সে সময় যতটুকু বাংলাদেশ এগিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে গিয়েছিল। সেই জন্য ৪৭ বছর বলা যাবে না। এখন থেকে যে সময় শুরু হয়েছে এ সময় থেকে আমরা ধরব। কারণ এই সময় থেকে ধরলে  আমাদের  ২২-২৩ বছর হবে। 

এর মধ্যে বহু সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড হয়েছে। আমাদের বাঙালির যে সংস্কৃতি, ভাষা এটা স্বাধীনতাবিরোধীরা নিজেদের মনে করে না। এসব লোক যখন আবার ক্ষমতায় এলো তখন দেশের অবস্থা যা হলো সেটা থেকে আবার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলো।

 

সঙ্কটের মূল সমস্যা কোথায় এবং তা থেকে উত্তরণের পথ কী?

এখন আমরা মনে করি দেশ একটা স্থিতীশীল অবস্থায় এসেছে। নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। সেই নতুন প্রজন্ম আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে এসেছে। স্বাধীনতার চিন্তা ফিরে এসেছে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। 

 

৭১-এ বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের নেতৃত্বে ছিলেন—

একাত্তর সালে বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ গঠন করা হয় শেখ মুজিবর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এর আহ্বায়ক ছিলাম আমি। ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। টেলিভিশন রেডিওতে তাদের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠান-এটা ছিল দারুণ, মানে শত্রুপক্ষের অস্ত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা।

 

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক—

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নাটক বিভাগের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করি। সে সময় জল্লাদের দরবার, চরমপত্র এসব অনুষ্ঠান দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। সে সময় ‘সালেহ আহমেদ’ ছদ্মনামে খবর পাঠ করতাম। পরে যখন কামাল লোহানী গেলেন তখন তিনি সংবাদের দায়িত্বে গেলেন। আমি নাটক বিভাগের দায়িত্ব পালন করি। সে সময় আমরা নাটক, কথিকা আর সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করেছি। এভাবেই চলে যেত সময়।

 

স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের প্রতি আপনার বার্তা—

নতুন প্রজন্মকে বার বার বলতে চাই আজকে যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা একটা কথা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে জাগতে হবে। যারা জাহানারা ইমামকে মামলা দিয়েছিল, গোলাম আযমের বিচার দাবি করার কারণে। সেই তারাই ক্ষমতায় এলে দেশের অবস্থা কী হবে তা সহজেই বোঝা যায়। 

এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখা দরকার। কারণ যারা সরকারে আসবে তারাই বিজয়ের ৫০ বছর পালন করবে। এমন সরকার আমরা চাই না যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পার করুক। তরুণদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ মানুষের দেশ। সেজন্য প্রথমেই নিজেদের মানুষ হতে হবে। সৎ হতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads