• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মৌলিক গান শিল্পীর বড় অর্জন

ছবি : সংগৃহীত

শোবিজ

মৌলিক গান শিল্পীর বড় অর্জন

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১০ জানুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশে আধুনিক গানের জগতে উজ্জ্বল এক নাম আঁখি আলমগীর। চিত্রনায়ক আলমগীর ও গীতিকার খোশনুর আলমগীরের মেয়ে তিনি। যতক্ষণ মঞ্চে থাকেন, দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন তার গান দিয়ে। গানের পাশাপাশি রয়েছে তার সদা উচ্ছল, বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র, মঞ্চে গেয়ে চলেছেন ক্লান্তিহীন। গান নিয়ে তার ভাবনা, অনুভূতি, ভালো লাগা, ভালোবাসাসহ নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। লিখেছেন- সালেহীন বাবু

 

নতুন বছরে দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য কোনো নতুন চমক আছে কি?

নতুন বছরে দর্শক-শ্রোতাদের জন্য নতুন একটি গান করা শেষ। খুব শিগগিরই গানটি ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে প্রকাশ হবে। এ ছাড়া গত বছর আমার গাওয়া আসিফ আকবরের সঙ্গে ‘ওরে পাখি’, ‘টিপটিপ বৃষ্টি’, ‘মন বাক্স’ ও ‘দস্যি মেয়ে’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

দীর্ঘদিন সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন।  প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সমীকরণ—

গান গেয়ে মানুষের অনেক ভালোবাসা, সম্মান পেয়েছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?   যা চেয়েছি তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। আমার অপ্রাপ্তির কিছু নেই। যখন ফিল্মে গান গাইব গাইব করেছি তখন আমাদের বাসায় প্রায়ই ঘরোয়াভাবে গানের আসর বসত। যেখানে প্রায়ই সৈয়দ আবদুল হাদী আঙ্কেল, সুবীর নন্দী আঙ্কেলরা আসতেন। আমার মা যেহেতু গান লিখতেন, বাবা অনেক গানপ্রিয় একজন মানুষ। একসঙ্গে বসে গান হতো। এমন এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সুবীর আঙ্কেলকে বাবা বললেন, আমার মেয়ের গান শোনেন, যদি মনে হয় আমার মেয়ে গান গাইতে পারে, গান গাইবার যোগ্য মনে হয় তাহলে ওকে গান গাইতে দেব। যদি না হয় তাহলে দেব না। এখন তো স্কুলে পড়ে, কলেজে উঠলে গান গাইতে দেব। একটা পুরনো গান গেয়েছিলাম সেদিন। আমার গান শুনে সুবীর আঙ্কেল বললেন, আপনি কলেজ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? ততদিনে তো একটা ভালো শিল্পীকে দেশ হারাবে। বড় বড় শিল্পীর উৎসাহ আমার অনেক বড় পাওয়া।

আপনার মা একজন খ্যাতিমান গীতিকবি। তার লেখা গানগুলো নিয়ে অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা আছে কী?

মায়ের লেখা গান নিয়ে আমার গাওয়া এবং বিশিষ্ট শিল্পীরা যারা মায়ের গানগুলো গেয়েছেন, তাদের সেই হিট গানগুলো নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা করছি।

খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীরের কন্যা আপনি। মা খোশনূর একজন স্বনামখ্যাত গীতিকবি। এটা কি বাড়তি একটা চাপ ছিল?

অবশ্যই বাড়তি একটা চাপ ছিল। এই চাপের মধ্যে এখনো রয়েছি। একটা বিষয় দেখবেন, যারা অনেক বড় স্টারের ছেলেমেয়ে অন্যরাভাবে তাদের জন্য সবকিছু খুব সহজ। আলমগীরের মেয়ে হিসেবে মিডিয়ার মানুষ হয়তো আমাকে সবাই চেনে। একবার হয়তো সেই পরিচয়ে সুযোগ দিলেন। বার বার কিন্তু সুযোগ দেবেন না। প্রতিনিয়ত তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই তুলনা করাটা ঠিক নয়। কেননা তারা হলেন লিজেন্ড। তাদের সঙ্গে তুলনা চলে না, কিন্তু তুলনা চলে আসে। এটা আসবে বলেই বড় হয়ে কখনো সিনেমায় নায়িকা হতে চাইনি। এই কারণে নিজের একটা ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছি। আসলে সবদিক দিয়ে গানটাই আমার জন্য ভালো। এখন বুঝি গান বেছে নেওয়াটাই আমার জন্য পজেটিভ হয়েছে। তাছাড়া এখনো কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বাবা-মার পরামর্শ আগে নিই।

এক সময় ৮-১০টি গান দিয়ে অ্যালবাম সাজানো হতো। কিন্তু আজকাল একটি গান দিয়েও অ্যালবাম বের করছেন কেউ কেউ। এসব নিয়ে আপনার মতামত কী?

মিনি অ্যালবামের ব্যাপারটা সময়ের প্রয়োজনেই চলে এসেছে। শ্রোতাদের কথা বিবেচনা করলে ব্যাপারটা অবশ্যই ভালো নয়। কারণ অ্যালবামে প্রিয় শিল্পীর যত বেশি গান থাকে শ্রোতারা ততই খুশি হয়। বেশি গানের মধ্য থেকে পছন্দের গানটি যেমন খুঁজে নিতে পারে, তেমনি বিভিন্ন রকমের গান শোনারও সুযোগ পায়।

সিনেমায় অডিওর চেয়ে স্টেজ শো নিয়ে আপনাকে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কেন?

আমি গত ২২ বছর ধরেই স্টেজে একই গতিতে পারফর্ম করছি। এখন হয়তো প্রচার মাধ্যম বেশি, তাই প্রকাশ পাচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ফেসবুক রয়েছে। এখন বিভিন্ন স্থানে স্টেজ শো করতে গেলে ফেসবুকে ছবি দেই। তাই মানুষও বেশি জানছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে স্টেজে কাজ করে আমি দর্শক-শ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটা অমূল্য। এটা ভাগ্যবানদের ক্ষেত্রেই হয়। এভাবেই যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন স্টেজে গান করে যেতে চাই।

এই সময়ের গান আপনার কেমন লাগে?

তরুণরা অনেক ভালো করছে। অনেক ভালো ভালো শিল্পী দেখছি। আমি মনে করি মেধাবীদের সুযোগ তৈরি করার দায়িত্ব সবার। তবে অন্যের গান গাওয়ার চেয়ে নিজের মৌলিক গানের ওপর জোর দিতে হবে বেশি। একজন শিল্পীর বড় অর্জন হচ্ছে তার মৌলিক গান।  কারণ মৌলিক গান শিল্পীর নিজস্বতা বহন করে।

আপনার পরিবার-

আমার দুই মেয়ে স্নেহা ও আরিয়া। এদের নিয়ে আমার পরিবার। আর যারা আমাকে ভালোবেসে আমার গান শোনে তারাও আমার পরিবারের একটা অংশ হয়ে যায়।

আঁখির প্রিয় শিল্পী কারা?

ভারতের কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর আমার প্রিয় একজন শিল্পী। এ ছাড়া এই তালিকায় আছেন সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, সুবীর নন্দী, আবদুল হাদীসহ আরো অনেক শিল্পী।

আপনি গান দিয়ে সবাইকে বিনোদিত করেন। আপনার  বিনোদন-

আমার বিনোদনও গান। এ ছাড়া আমার বিনোদন আমার পরিবার, সন্তান। তাদের নিয়ে সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানো। আমরা শিল্পী তার থেকেও বড় পরিচয় আমরা মানুষ। সেই পরিচয়ে আমি কারো মা, কারো মেয়ে। এসব জায়গা থেকে আমার দায়িত্ব পালন করা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads