• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অশ্রুজলে শিল্পীকে বিদায়

ছবি : সংগৃহীত

শোবিজ

অশ্রুজলে শিল্পীকে বিদায়

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০১৯

দুপুর ১টা থেকেই অপেক্ষা করছেন সবাই। আসবে মরদেহ। বিদায় জানাবেন প্রিয় শিল্পী সুবীর নন্দীকে। কিন্তু শিডিউলে ঝামেলা হওয়ায় সেই অপেক্ষা বাড়ল।

তবু একচুল বিরক্তি নেই। আগ্রহ নিয়ে তারা ঘুরেফিরে দেখছেন শ্রী বরদেশ্বরী মহাশ্মশান প্রাঙ্গণ। এখানেই আরেকটু পর জ্বলবে সেই মানুষের চিতা, যার গান শুনে শুনে কয়েক প্রজন্ম মুগ্ধ হয়েছে এই বাংলাদেশে।

এভাবেই অপেক্ষারত নানা বয়সের ও ধর্মের ভক্তরা। সবাই প্রিয় শিল্পীর শেষকৃত্যের সাক্ষী হতে চান। সুবীর নন্দীকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা।

এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসিত)। সেখানে চলচ্চিত্রের মানুষরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এরপর তাকে নেওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। এখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর তাকে নেওয়া হয় রামকৃষ্ণ মিশনে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার দুদিন পর সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও পরে অবনতি হতে থাকে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালীন পরপর তিনবার হূদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এ ছাড়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও একবার হূদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল রাতে পরিবারসহ সিলেট থেকে ফিরছিলেন সুবীর নন্দী। উত্তরার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় সুবীর নন্দীকে।

শহীদ মিনারে কফিনের ঢাকনা খুলতেই দেখা গেল সেই মুখ। বছরের পর বছর যে মুখটি বাংলা সঙ্গীতের অনুরাগীদের চেনা। যে মুখে সদা হাসি লেগে থাকত। নিথর সারা শরীর ঢাকা। বুকের ওপরে গাঁদা ফুল। অত্যন্ত প্রশান্ত মুখ। কোনো কষ্টের লেশমাত্র নেই তাতে। প্রিয় মানুষ সুবীর নন্দীকে দেখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অগণিত মানুষের ভিড়। তাদের অনেকের হাতেই ফুল।

বেলা ১১টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয় সুবীর নন্দীর মরদেহ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে গুণী এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে আগে থেকেই নানা পেশার অসংখ্য মানুষ জড়ো হন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন তার ভক্ত-অনুরাগীসহ একসময় তার সঙ্গে কাজ করা সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ, ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, চিত্রনায়ক উজ্জ্বল ও চিত্রনায়িকা নূতন, গীতিকার রফিকুজ্জামান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, কবির বকুল; সঙ্গীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, খুরশীদ আলম, তিমির নন্দী, ফকির আলমগীর, কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর, রবি চৌধুরী, শুভ্র দেব, নকিব খান, ফোয়াদ নাসের বাবু, বাদশা বুলবুল, এস ডি রুবেল, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা নিশিতা বড়ুয়া, কিশোর, মুহিন, সাব্বির, কিশোর, রাশেদ প্রমুখ।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা বলেন, সুবীর নন্দী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের আধুনিক গানের ইতিহাস লেখা যাবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন বাংলাদেশের স্বতন্ত্র সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে তুলতে যে শিল্পীরা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে কণ্ঠের জাদুকর সুবীর নন্দী অগ্রগণ্য। তিনি শুধু একজন ভালো শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরেকটি নক্ষত্রের পতন হলো। তার গান আগামীর প্রজন্মকে ধারাবাহিকভাবে অনুপ্রাণিত করে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads