• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নাটক : বিনোদন না বিরক্তি

ছবি : সংগৃহীত

শোবিজ

নাটক : বিনোদন না বিরক্তি

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০১৯

বর্তমানে অসংখ্য টিভি চ্যানেল, অসংখ্য টিভি নাটকের ছড়াছড়ি। টিভি খুললেই নাটক। একঘণ্টা ও ধারাবাহিক নাটক মিলিয়ে এখন প্রায় ৩০টিরও বেশি নাটক প্রচার করা হচ্ছে। এসব নাটকে থাকে তারকাদের উপস্থিতি। দর্শকরাও তটস্থ থাকেন কোন চ্যানেলে কোন নাটক দেখবেন। কোন তারকাকে দেখবেন। কথা হচ্ছে কয়জন দর্শক এখন নিয়মিত নাটক দেখেন। এই পরিসংখ্যান গণনা করলে নিয়মিত নাটক দেখেন এমন দর্শক হাতেগোনা। অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন এখনকার নাটকের একপেশে গল্প, গৎবাঁধা চিত্রনাট্য, লোকেশনের বালাইসাটসহ হরেকরকম সমস্যায় নাটকের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ দিনকে দিন কমছে।

নামি তারকার পরিবর্তে উঠতি তারকাদের নেওয়াসহ নানাবিধ কারণে নাটক এখন বিনোদনের চাইতে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। অনেক তারকা আবার এই হাওয়ায় গা ভাসাচ্ছেন। নাটকের গল্প চিত্রনাট্য আর অভিনয়ের ধরন দেখে মনে হয়, কেবল নাটক বানানোর জন্যই বানানো হচ্ছে, দর্শকের কথা চিন্তা করে বানানো হচ্ছে না। এছাড়া নাটকের বাজেট নিয়েও উঠেছে নানামুখী প্রশ্ন। নাটকের স্বল্প বাজেটের কারণে তড়িঘড়ি করে অনেক পরিচালক নাটকের শুটিং শেষ করেন। এই বাজেট নিয়ে অভিনয়শিল্পীদের অভিযোগ অনেকদিন ধরেই। তারা নাটকের মানের অবনতির জন্য নাট্যনির্মাতাদের বেশি দুষছেন।

কম যান না নাট্যনির্মাতা কিংবা লগ্নিকারকরা। তারা আবার উল্টো কথা বলছেন। যদিও তাদের যুক্তিসঙ্গত। তাদের বক্তব্য, যত গুড় তত যদি মিঠা হতো, তাহলে গুড় বেশি দিতে আপত্তি নেই। নাটক প্রচারের যে পরিবেশ, তাতে অল্প বাজেটের টাকাই তো তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেট বাড়ানোর হিসাব করা তো অনেক পরের বিষয়। তা ছাড়া চিত্রনাট্য অনুযায়ীই তো বাজেট নির্ধারণ হবে।

নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা সময় ভালো মানের নাটক নির্মাণে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পাওয়া যেত; কিন্তু এখন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বেশি হয় না। অথচ নির্মাণব্যয় আগের থেকে বেড়েছে। সঙ্গে দ্বিগুণ বেড়েছে শিল্পীর সম্মানী। বর্তমানে একটি নাটকের বাজেটে সিংহভাগই চলে যায় নাটকের মূল দুই চরিত্রে। আমাদের দেশে শিল্পীর সম্মানীর কোনো নির্দিষ্ট তালিকা নেই। ফলে যে যার মতো সম্মানী আদায় করে নিচ্ছেন। তাই একটি নাটক নির্মাণে বাজেটের পরিমাণ আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন নির্মাতারা।

এ বিষয়ে ছোটপর্দার প্রিয় মুখ মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, ‘এক পর্বের একটি নাটক দর্শকরা হয়তো দেখে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট। তবে এর পেছনে কম করে হলেও তিনদিন সময় দেওয়া লাগে। প্রতিটি সেক্টরে আলাদাভাবে খরচ করতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু নাটকের বাজেটের কোনো পরিবর্তন নেই। ভালো কিছু পেতে হলো তো খরচটাও করতে হবে। এ বিষয় সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত। বাজেট স্বল্পতার অভিযোগ ভিত্তিহীন নয় বলে জানালেন ছোটপর্দার আরেক পরিচিত মুখ সাবিলা নুর। তিনি বলেন, ‘নাটকের সেটে সবার মুখে মুখে থাকে এটার জন্য বাজেট নেই ওটার জন্য বাজেট নেই। সত্যিই তাই। এক পর্বের নাটকের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বাজেট থাকে না। ফলে পরিচালক চান দ্রুত কাজটি নামিয়ে আনতে। এতে কাজের মান সংকটে পড়ে। আমার কাছে মনে হয়, নাটকের বাজেটের পরিমাণ বাড়লে নাটক তৈরিতে সবাই যত্নশীল হবে। দর্শকরাও নাটক দেখে আরাম পাবেন।’

পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ‘এখনকার নাটকগুলোর গল্পে কোনো ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে না। সেই পাঁচ ছয় বছর আগে যেমন গল্প নিয়ে কাজ হয়েছে, এখনো সেই গল্পগুলোই ঘুরেফিরে বারবার আসছে। যাদের হাত ধরে নাটকের গল্পে পরিবর্তন হয়েছিল, তারা এখন মিডিয়ার অস্থিরতার কারণে নাটক বানানো থেকে দূরে চলে গেছেন। ’

এদিকে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘টিভি নাটকে বাজেটের পরিমাণ সত্যিই কম। তার থেকে ওয়েব সিরিজের বাজেট থাকে ভালো। ফলে যত্ন নিয়ে তৈরি করা হয় সেসব ওয়েব সিরিজ। আমার অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। উল্টোপথে রয়েছেন অনেকেই। বলছেন, বর্তমান নাটকের অবস্থা ভালোই মনে হচ্ছে। তার মধ্যে মুমতাহিনা টয়া, তৌসিফ মাহবুব, সাফা কবির, নিলয় আলমগীর, শবনম ফারিয়া। তারা বলেন, বাজেট নিয়ে একটা ঝামেলা আছে। এটা মানছি। তবে নাটকের মান নিয়ে আপস করতে নারাজ। এত টানাপড়েনের মধ্যেও আমাদের নাটক দর্শকরা দেখছে। একটি নাটক যখন ইউটিউবে আপলোড করা হয় তখন লাখ লাখ ভিউ হয়। নাটকের মান খারাপ হলে মানুষ দেখতো না। বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বলে নাটকে মান খারাপ হবে বলে বিশ্বাস করি না।

অভিনয়শিল্পীদের সম্মানী নির্দিষ্ট থাকার ব্যাপারে অভিনয় শিল্পীরা সম্মত নন।  তাদের দাবি একজন শিল্পীর সম্মানী কত হওয়া উচিত তা অন্যরা কেন ঠিক করে দেবে। এটা শিল্পীর ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। সব দেশেই এমন হয়। শিল্পীর সম্মানী নির্ধারণ করার উপায় নেই।

খুব বেশিদিন আগের নয়, যখন নাটক ছিল আমাদের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। এমনকি বিটিভিতে যখন নাটক শুরু হতো, পরিবারের সবাই মিলে বসে যেত নাটক দেখতে। ধারাবাহিক নাটকের সময় পরের দিন কী হবে, তা-ই নিয়ে পরিবারের ছোট থেকে শুরু করে বড়দের মধ্যে থাকত জোর আলোচনা। নাটকের মূল চরিত্রগুলো এক একটি মহাতারকা হিসেবে আবির্ভূত হতো আমাদের কাছে। সেই নাটকের স্বর্ণালি সময় আজ প্রায় হারাতে বসেছে। নাটক বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। এই নাটকের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এক অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে নাটকের মান কীভাবে বাড়ানো যায়, তার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নাটকের বাজেট বৃদ্ধিসহ গল্প, চিত্রনাট্যে বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব আনার পাশাপাশি নতুনদের অভিনয়ে আরো দক্ষ হওয়া জরুরি বলে মত দেন নাট্যবিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads