• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

শোবিজ

তিন গুণী তারকার মৃত্যু, শোবিজে শোকের ছায়া

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের প্রতাপ। যার প্রভাব পড়েছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।

থেমে আছে শুটিং, বন্ধ হয়ে গেছে থিয়েটার, প্রাণহীন হয়ে গেছে শোবিজ অঙ্গন। শুধু এতেই থেমে থাকেনি ভাইরাসটি। করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন বহু তারকা। প্রাণ যাচ্ছে একের পর এক শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা নির্মাতাসহ শোবিজ অঙ্গনে জড়িত খ্যাতিমানদের।

শুধু করোনাতেই নয়, অন্যান্য রোগে ভুগেও এ বছর মারা গেছেন বহু গুণী ব্যক্তিত্ব। হারিয়েছি আমরা অনেককেই। বাংলাদেশেও হচ্ছে না ব্যতিক্রম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমরা হারিয়েছে তিন গুণী অভিনেতাকে।

এরমধ্যে গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছোট ও বড়পর্দার গুণী অভিনেতা কে এস ফিরোজ।

তার শোকের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার এক দিনেই মারা গেলেন দুই অভিনেতা। একজন চলচ্চিত্রের ডাকসাইটে অভিনেতা সাদেক বাচ্চু এবং অন্যজন মহিউদ্দিন বাহার। এর মধ্যে সাদেক বাচ্চু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাদেক বাচ্চুকে। পরদিন তার করোনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। ঢামেকে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে গেল শনিবার দুপুরে তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সোমবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক বাচ্চু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্রসন্তান রেখে গেছেন।

এদিকে সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে মহিউদ্দিন বাহার মারা গেছেন। তিনি অনেক দিন ধরে হার্ট, কিডনিসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দয়াগঞ্জের বাসা থেকে দ্রুত ইবরাহিম ডায়াবেটিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে এমন প্রবীণ তিন গুণী অভিনেতাকে হারিয়ে শোকার্ত অভিনয়জগৎ। ছোট ও বড় পর্দার তারকারাও তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে শোক প্রকাশ করছেন।

এর মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ লেখেন, ‘এ কেমন সময়! অভিনেতা সাদেক বাচ্চু এবং মহিউদ্দিন বাহার চিরবিদায় নিলেন। করোনার করাল গ্রাসে একে একে প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে বিপর্যস্ত আমরা। শোক ছাড়া কীই-বা করার আছে আমাদের।’

ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ অভিনেত্রী শাহনাজ খুশী লিখেছেন, ‘এক সপ্তাহে তিনজন গুণী অভিনেতার প্রস্থান! এমনিতেই আমাদের অভিনয়জগতে এমন প্রবীণ, অভিজ্ঞ অভিনয়শিল্পী তেমন নাই বললেই চলে! তার মধ্যে ভয়াবহ এই মৃত্যুর ছোবল, মাত্র সাত দিনের মধ্যে ছিনিয়ে নিল এমন বিজ্ঞজনদের! জানি না, সামনে আর কী কী অপেক্ষা করছে। আপনাদের এই প্রস্থান এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করল! গভীর শোক এবং সম্মান জানাই, আত্মার শান্তি কামনা করি।’

চিত্রনায়িকা পূর্ণিমাও বেদনাহত। চোখে ভাসছে সাদেক বাচ্চুর সঙ্গে ফেলে আসা নানা রঙের দিনগুলি। পূর্ণিমা এই অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘সম্ভবত ১৯৯৯ সালে ওনার সঙ্গে প্রথম ছবি করেছি। বা ২০০০ সাল হবে। প্রথম ছবিতেই আমার নানা ছিলেন তিনি। এরপর বাবা-মেয়ে হিসেবে কাজ করেছি আমরা। অনেক ছবিতে ভিলেন ছিলেন। তার সঙ্গে কাজের দিনগুলো অসাধারণ স্মৃতি হয়ে আছে। অভিনয়ের বাইরেও চমৎকার সম্পর্ক ছিল আমাদের। পরিবারের দায়িত্ব বইতে বইতে নিজে বিয়ে করেছেন দেরিতে। তিনি আমাকে সাহস দিতেন। গুণী অভিনেতা কে এস ফিরোজ ভাইয়ের কাছ থেকে অভিনয় সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়।’

চিত্রনায়িকা পপিও শোকাহত। সাদেক বাচ্চু ছিলেন তার মাথার ওপর অভিভাবকের ছায়া হয়ে। বোন বলে ডাকতেন। কিন্তু স্নেহ করতেন মেয়ে হিসেবে। সেই ‘লাল বাদশা’ ছবি দিয়ে সাদেক বাচ্চুর সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। এরপর বহু সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করা হয়েছে।

একটু ভালো কাজ করলে প্রেরণা জোগাতেন প্রশংসা করে। এমন প্রিয়জনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এই নায়িকা।

পপি বলেন, ‘একে একে আমরা অভিভাবকদের হারিয়ে ফেলছি। অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে ইন্ডাস্ট্রি। যাদের দেখে শিখেছি অভিনয় তারা চলে যাচ্ছেন। খুব কষ্ট হয়। বাচ্চু ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়াটা মানতেই পারছি না। কী দারুণ একজন ভালো মানুষ ছিলেন। ফিরোজ ভাইকে মনে থাকবে চিরকাল।’

নায়ক রিয়াজ বলেন, ‘সম্ভবত সিনেমার মানুষ হিসেবে আমার সঙ্গেই সর্বশেষ বাচ্চু ভাই নিয়মিত কথা বলেছেন। ওনার কাছে আমরা অভিনয় শিখেছি। আমার খুব ভালো লাগত এই বয়সেও বাচ্চু ভাই নিজের প্রতি, নিজের ক্যারিয়ার ও অভিনয়ের প্রতি সিরিয়াস ছিলেন। তার আত্মবিশ্বাসটাও ছিল দারুণ। উনি গুণী অভিনেতা।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads