• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

শোবিজ

সালতামামি ঢালিউড-২০২০

চরম হতাশার বছর

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

গত বছর ঢালিউডে পুরোটাই ছিল হতাশার বছর। সে কারণে ২০২০ সাল নিয়ে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন যে, এবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে ঢালিউড। ২০১৯-এর শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অনেকেই বলেছিলেন ২০২০ সাল হবে ঢালিউডের সফলতার বছর। কিন্তু বছরের শুরুতেই ছবি-শূন্যতার মধ্য দিয়ে সফলতার পরিবর্তে হতাশার যাত্রা শুরু হয়। কারণ চলতি বছরের শুরুটা হয় আলোচনার বাইরে থাকা একটি ছবির মাধ্যমে। বছরের প্রথম ছবি হিসেবে মুক্তি পায় ‘জয়নগরের জমিদার’ নামের একটি সিনেমা। নাট্যনির্মাতা এম শাখাওয়াৎ হোসেন পরিচালিত এ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইতালি প্রবাসী আবু সাঈদ খান। তিনি এই সিনেমার গল্পকার-প্রযোজকও বটে। ছবিতে তার বিপরীতে রানির ভূমিকায় ছিলেন টিভি অভিনেত্রী ফারজনা ছবি। এতে আরো অভিনয় করেছেন আরমান পারভেজ মুরাদ, কাজল মজুমদার, শ্যামল জাকারিয়া, ম আ সালাম, কানিজ লিয়া প্রমুখ। ছবিটি শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ইতিহাস-সমৃদ্ধ এ সিনেমায় নারীদের প্রতি জমিদারদের যে অসম্মানবোধ ছিল কিংবা তার বিপরীতে নারীরা যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। যেখানে একঝাঁক পরীক্ষিত অভিনয়শিল্পী কাজ করেছেন। এরপর আর জানুয়ারিতে নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি।

তবে পুরো ফেব্রুয়ারিজুড়ে মুক্তি পায় অনেকগুলো ছবি। কিন্তু কোনো ছবিই ব্যবসা করতে পারেনি। তবে কিছুটা আলোচনা তৈরি করে ৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘গন্ডি’ সিনেমাটি। ফখরুল আরেফিন পরিচালিত এ সিনেমার মূল আকর্ষণ ছিল দুই বাংলার শক্তিমান দুই তারকার অভিনয়। একজন বাংলাদেশের সুবর্ণা মুস্তাফা অন্যজন ভারতের সব্যসাচী চক্রবর্তী। তবে তাতেও দর্শক টানতে পারেনি সিনেমাটি। সিনেমায় আরও দুই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাজনুন মিজান ও অপর্ণা ঘোষ। পরের সপ্তাহ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে মুক্তি পায় বহুল আলোচিত ‘বীর’ সিনেমাটি। শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত এ সিনেমা পরিচালনা করেছেন কাজী হায়াত। ধারণা ছিল বছরের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা হবে ‘বীর’। কিন্তু প্রথম সপ্তাহে কিছুটা আশার আলো জ্বললেও পরের সপ্তাহেই দর্শক খরায় পড়ে সিনেমাটি। মাসের শেষ সপ্তাহে (২৮ ফেব্রুয়ারি) মুক্তি পায় হূদয়জুড়ে নামের একটি সিনেমা। এটি পরিচালনা করেছেন রফিক শিকদার। অভিনয়ে ছিলেন নিরব, প্রিয়াঙ্কা ও নুসরাত জাহান পাপিয়া। এ সিনেমাও মুক্তির প্রথম দিকেই মুখ থুবড়ে পড়ে। দর্শকের অভিযোগ ছিল, এ সিনেমায় না আছে ভালো কোনো গল্প, না আছে অভিনয়। গান এবং নির্মাণশৈলী নিয়েও অভিযোগ ছিল দর্শকের।

৬ মার্চ মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ‘শাহেন শাহ’ সিনেমাটি। এ সিনেমা এর আগে অনেকবার মুক্তির তারিখ ঘোষিত হলেও বারবার পিছিয়ে যায়। ফলে সিনেমাটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে দর্শক। একই মাসে মুক্তি পায় ‘হলুদবনি’ এবং ‘চল যাই’ নামের আরো দুটি এলেবেলে ঘরানার সিনেমা। এরপর মহামারী করোনার প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সবকটি সিনেমা হল। পরপর দুই ঈদেও মুক্তি পায়নি কোনো ছবি। ঈদের পর করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সিনেমা হল খুলে দেওয়া হলেও সিনেমা মুক্তি দিতে সাহস পাননি কোনো নির্মাতা। শেষমেশ সাহস করে এগিয়ে আসেন হিরো আলম। ৬ অক্টোবর মুক্তি পায় সাহসী হিরো আলম। শুরুতে ৪০ সিনেমা হল পেয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন হিরো আলম। কিন্তু মুক্তির প্রথম দিনেই ফ্লপের খাতায় নাম লেখায় সিনেমাটি। দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেমাটি আর কোনো হলে মুক্তি পায়নি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মুকুল নেত্রবাদী। গত ২৩ অক্টোবর মাত্র ৫টি হলে মুক্তি পায় বারবার পিছিয়ে যাওয়া ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমাটি। ব্যতিক্রমী ছবি হলেও এটি দর্শক গ্রহণ করেননি। দর্শক খড়ার কারণে সিনেমাটি এক সপ্তাহের বেশি স্থান পায়নি প্রেক্ষাগৃহে। এ ছবির পরিচালনা, কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা ও সংগীত পরিচালনা করেছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। এতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও শার্লিন ফারজানা।

নভেম্বরে মুক্তি পায়নি কোনো নতুন সিনেমা। এরপর ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় আরেক আলোচিত সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’। সিয়াম-পরীমনি অভিনীত এ সিনেমার মাধ্যমে চিত্র পরিচালকের খাতায় নাম লেখান টিভি নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। মাত্র ২৬টি হলে মুক্তি পায় সিনেমাটি। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি নিয়ে ঢাকঢোল পেটালেও নতুন ছবির সংকটে দ্বিতীয় সপ্তাহে নীরবে চলছে কয়েকটি হলে। একই দিনে মুক্তি পায় তানভীর মোকাম্মেলের ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র ‘রূপসা নদীর বাঁকে’। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ ছবি ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত তিনটি মাল্টিপ্লেক্স ও শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে দেখার সুযোগ পায় দর্শক। আগের ছবিগুলোর মতো এটিও দর্শকসাড়া পায়নি। গল্পের মূল চরিত্র মানবরতন মুখোপাধ্যায়। বয়স অনুযায়ী অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান শোভন, খায়রুল আলম সবুজ ও তাওসিফ সাদমান তূর্য।

বছরের শেষ সিনেমা হিসেবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পাচ্ছে দেশের প্রথম ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবি ‘দি গ্রেভ’। বাংলায় ছবিটির নাম রাখা হয়েছে ‘গোর’। সরকারি অনুদান পাওয়া গাজী রাকায়েত পরিচালিত ও অভিনীত এই ছবিটি সিলভার স্ক্রিনে একযোগে দুটি হলে দুই ভাষাতেই প্রদর্শিত হবে বলে পরিচালক-অভিনেতা জানিয়েছেন। ছবিটির নাম বাংলায় ‘গোর’ রাখা হয়েছে কেন জানতে চাওয়া হলে গাজী রাকায়েত বলেন, প্রথমত গোর সর্বজন পরিচিত একটি আঞ্চলিক শব্দ। দ্বিতীয়ত গল্পটি একজন গোরখোদকের। ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রায় সাড়ে তিন মিনিট দৈর্েঘ্যর একটি ট্রেলার প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রেলারটি তার নিজের ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। গোর খোদকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিজ্ঞ নির্মাতা রাকায়েত নিজেই। সঙ্গে আছেন মৌসুমী হামিদ। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সহ-প্রযোজনায় এতে আরো অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, আশিউল ইসলাম, সুষমা সরকার, এ কে আজাদ সেতু, দীপান্বিতা, ওমর ফারুক প্রমুখ। তবে এ সিনেমা নিয়েও কোনো আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না সিনেপ্রেমীদের মনে। ফলে হতাশাতেই শেষ হচ্ছে চলচ্চিত্রের চলতি বছর। সবদিক থেকে হিসেব করলে ঢালিউডকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে নতুন করে শুরু করতে হবে। সেই ভালোভাবে শুরুটা কবে হয় এখন সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads