• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শুভ জন্মদিন নায়করাজ

সংগৃহীত ছবি

শোবিজ

শুভ জন্মদিন নায়করাজ

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২১

বাংলার নায়করাজ তিনি। সেলুলয়েডের ফিতায় নায়করাজ রাজ্জাকের অসংখ্য চরিত্র অমর হয়ে আছে দর্শক হূদয়ে। আজ ২৩ জানুয়ারি-বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মদিন।

নায়করাজের জন্মদিন ঘিরে চলচ্চিত্রাঙ্গনসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের মানুষ তাকে স্মরণ করবেন শ্রদ্ধায়। ব্যক্তিগতভাবে তো বটেই নানা সাংস্কৃতিক-চলচ্চিত্রবিষয়ক সংগঠনগুলোও ভালোবাসায় সিক্ত করবেন প্রয়াত প্রিয় নায়ককে। দেশের রেডিও-টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলোতেও চোখে পড়বে নানা আয়োজন।

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। যার পুরো নাম আবদুর রাজ্জাক। কলকাতার থিয়েটারে অভিনয় করার মাধ্যমে রাজ্জাক তার অভিনয়জীবন শুরু করেন। সিনেমার নায়ক হওয়ার অদম্য স্বপ্ন ও ইচ্ছা নিয়ে রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়ে সিনেমার ওপর পড়াশোনা ও ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন।

এর পর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরো একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে রাজ্জাক তার পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে রাজ্জাক ‘উজালা’ সিনেমায় পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ষাটের দশকে সালাউদ্দিন পরিচালিত হাসির সিনেমা ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেনে’ একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রাজ্জাক ঢাকায় তার অভিনয়জীবনের সূচনা করেন। এরপর নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে নায়করাজের যাত্রা শুরু হয় জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে। ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তর ও আশির দশকে জনপ্রিয়তার চূড়ায় ওঠেন রাজ্জাক। একে একে নায়ক হয়েছেন তিন শরও বেশি চলচ্চিত্রে। রাজ্জাক অভিনীত দর্শকনন্দিত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে ‘নীল আকাশের নিচে, ময়নামতি, মধুমিলন, পিচঢালা পথ, যে আগুনে পুড়ি, জীবন থেকে নেয়া, কী যে করি, অবুঝ মন, রংবাজ, বেঈমান, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, অনন্ত প্রেম, বাদী থেকে বেগম প্রভৃতি। সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক। প্রযোজক হিসেবে নায়করাজের যাত্রা শুরু ‘রংবাজ’ ছবিটি প্রযোজনার মধ্য দিয়ে। এটি পরিচালনা করেছিলেন জহিরুল হক। রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন কবরী। ববিতার সঙ্গে জুটি বেধে নায়করাজ প্রথম নির্দেশনায় আসেন ‘অনন্ত প্রেম’ চলচ্চিত্র দিয়ে। এই ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। নায়ক হিসেবে এ অভিনেতার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘মালামতি’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন।

নায়করাজ রাজ্জাক সর্বশেষ তার বড় ছেলে নায়ক বাপ্পারাজের নির্দেশনায় ‘কার্তুজ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চলচ্চিত্রে তার ঘনিষ্ঠবন্ধু প্রয়াত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামও অভিনয় করেছিলেন। চাষী নজরুল ইসলামের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমায়ও রাজ্জাক অভিনয় করেছিলেন।

অন্যদিকে নায়করাজ সর্বশেষ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘আয়না কাহিনী’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছিলেন সম্রাট ও কেয়া। এরপর আর নতুন কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণে তাকে দেখা যায়নি।

সুচন্দা: নায়করাজ রাজ্জাকের নায়ক হিসেবে অভিষেক জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ‘বেহুলা’য় রাজ্জাকের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন সেসময়ের হার্টথ্রব অভিনেত্রী সুচন্দা। সে অর্থে সুচন্দা নায়করাজের প্রথম নায়িকা। তিনি বলেন, রাজ্জাক ছিলেন এক পূর্ণাঙ্গ শিল্পী। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার শূন্যতা আমরা বহন করছি। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

‘বেহুলা’ দিয়ে শুরু করে আনোয়ারা, জুলেখা, দুইভাই, সংসার, প্রতিশোধ, অশ্রু দিয়ে লেখা, রাজবন্দী, জীবনতৃষ্ণাসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন বলে জানিয়েছেন সুচন্দা। তিনি বলেন, রাজ্জাক শিল্পী হিসেবে যেমন ছিলেন কাজের প্রতি আন্তরিক, তেমন মানুষ হিসেবে ছিলেন বিনয়ী এবং সজ্জন। সহশিল্পীদের সহযোগিতায় তিনি সব সময় এগিয়ে আসতেন।

কবরী: ‘নায়করাজ রাজ্জাক আমাকে একটু ভয় পেতেন। কারণ আমি মুখে মুখে কথা বলতাম। কিন্তু উনি একটু চুপ থাকত। আর আমাদের মধ্যে খুনসুটি ও ঝগড়া লাগত।’ নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন উপলক্ষে এসব কথা বলে স্মৃতিচারণ করছিলেন ঢাকাই ছবির মিষ্টিমেয়ে খ্যাত অভিনেত্রী কবরী। তিনি বলেন, নায়করাজের সাথে আমার ভীষণ প্রতিযোগিতা হতো, হিংসা হতো। তবে এসবটাই কাজ নিয়ে। কাজের বাইরে আমাদের আমাদের নিজেদের বিদ্বেষ ছিল না। মাঝে রাজ্জাক সাহেব আর আমার মধ্যে গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। দূরত্ব ছিল, পরে কিন্তু সব ঠিক হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেমিস্ট্রিটা ছিল অনেক ভালো, একজন আরেকজনকে ভালো বুঝতাম। যে কারণে পর্দায় আমাদের দেখে দর্শক পছন্দ করতেন। আমাদের মধ্যে রসায়ন ভালো থাকলেও কাজের বিষয়ে আমাদের এক ধরনের হিংসা কাজ করত। তবে এই হিংসা ছিল পজিটিভ।

ববিতা: বাংলাদেশের কিংবদন্তি নায়িকা ববিতা বলেন, ‘রাজ্জাক ভাই তো একটা ইনস্টিটিউশন। তার হাত ধরেই তো চলচ্চিত্রে আসা। উনার কাছ থেকেই আমি সব শিখেছি। রাজ্জাক ভাই চলচ্চিত্রে আসেন জহির রায়হানের হাত ধরে, আমিও চলচ্চিত্রে আসি জহির ভাইয়ের সিনেমার মাধ্যমেই। প্রথম চলচ্চিত্র ‘সংসার’-এ রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার বাবা। আর সুচন্দা আপু ছিলেন আমার মা চরিত্রে। এর পরের চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় আমি ছিলাম রাজ্জাক ভাইয়ের নায়িকা। তাই রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার অভিভাবক। তিনি ছিলেন সব সময় ছায়া হিসেবে।’ সত্তরের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি ছিল রাজ্জাক-ববিতা। পিচঢালা পথ, টাকা আনা পাই, মানুষের মন, বাদী থেকে বেগম, আলোর মিছিল, অনন্ত প্রেম, আকাঙ্ক্ষাসহ অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে দর্শক পেয়েছে রাজ্জাক-ববিতাকে একসঙ্গে। এই দীর্ঘ পথ চলায় ববিতার চলচ্চিত্র জীবনের একটা পিলারের নাম ‘রাজ্জাক’ এমনটাই বলছিলেন তিনি। ববিতা বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ‘রাজ্জাক’ যেমন একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, আমার জীবনেও রাজ্জাক ভাই তেমন। ছিলেন সবচেয়ে প্রিয় অভিভাবক।

ফারুক: চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ অভিনেতা ফারুক বলেন, ‘আমি আর রাজ্জাক ভাই খুব কাছাকাছি সময়ে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছিলাম। স্বাভাবিকভাবে সবার ধারণা, আমাদের মধ্যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেটা ছাপিয়ে আমাদের মধ্যে একটা দারুণ আন্তরিকতাপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর।’

ফারুক বলেন, ‘রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় এফডিসিতে। তখন এফডিসিতে যেতে আমি খুব ভয় পেতাম। রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আমার এক বন্ধু চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিল। ছবির নাম আর মনে নেই। রাজ্জাক ভাই ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু ছবিটি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তখন আমিসহ কয়েকজন গিয়েছিলাম ঝামেলা মেটাতে। ওই সময় রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। পরে তো একসঙ্গে ছবিও করেছি। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত এরাও মানুষ ছবিতে বাবার দুই ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম আমরা দুজন। রাজ্জাক ভাই বড় আর আমি ছোট। তখন থেকেই ওনার সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হয়।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads