• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
মাঝারি বাজেটের আপগ্রেডেড ফোন

ছবি : সংগৃহীত

টেলিযোগাযোগ

স্মার্টফোন রিভিউ

মাঝারি বাজেটের আপগ্রেডেড ফোন

  • এম রেজাউল করিম
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০১৯

বর্তমান সময়টিকে চাইলেই অনায়াসে তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি স্মার্টফোনের যুগও বলা যায়। কারণ, প্রায় প্রতিদিনই স্মার্টফোনে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন ফিচার অথবা বাজারে উন্মুক্ত নিত্যনতুন প্রযুক্তির স্মার্টফোন। আর তাই স্মার্টফোনের বাজার ধরতেও মরিয়া মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই হয়তো আপগ্রেডেড সব প্রযুক্তি দিয়ে কে কত কম দামে গ্রাহকের হাতে ফোন তুলে দিতে পারে সেই প্রচেষ্টা করে কোম্পানিগুলো। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সাধ্যের মধ্যে প্রযুক্তি দুনিয়ায় নিজেকে আপগ্রেড রাখতে নতুন প্রযুক্তির ফোন লুফে নেয় গ্রাহকরা।

আজ এমনই একটি ফোনের হ্যান্ডস অন রিভিউ প্রকাশ করা হচ্ছে, যা মূলত মিড রেঞ্জের ফোন হিসেবেই ধরা যায়। ২২ হাজার ৯৯০ টাকার এই ফোনটিতে থাকছে নচসহ ৬.৫ ইঞ্চি ফুলভিউ ডিসপ্লে, চার জিবি র্যামের সঙ্গে আছে ৬৪ জিবি রম, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি সুবিধা। থ্রিডি কার্ভড বা বাঁকানো ডিজাইনের বডির মোবাইলটিতে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট চার ক্যামেরা। ফোনটির পেছনে ১৩ ও ২ মেগাপিক্সেলের ডুয়েল রিয়ার ক্যামেরা এবং সামনে ১৬ ও ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা রয়েছে। এতসব ফিচার সমৃদ্ধ ফোনটির নাম জানতে নিশ্চয়ই মন আনচান করছে? এই ফোনটি হচ্ছে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওয়াই সিরিজের ফোনগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা ওয়াই নাইনের দ্বিতীয় ভার্সন হলো ওয়াই নাইন (২০১৯)। চলুন জেনে নেওয়া যাক হ্যান্ডসেটটির রিভিউ সম্পর্কে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এম রেজাউল করিম-

ডিজাইন

হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৯ মডেলের হ্যান্ডসেটটির ডিজাইন খুবই সাধারণ, তবে আকৃষ্ট করার মতো। থ্রিডি কার্ভড বা বাঁকানো ডিজাইনের বডির ডিভাইসটির বেজেল খুবই সংকীর্ণ। তবে হ্যান্ডসেটটির বডি স্লিম হওয়ায় এবং এর ওজন মাত্র ১৭৩ গ্রাম হওয়ায় খুব আরামেই ডিভাইসটি হাতে নিয়ে বা পকেটে বহন করা যায়।

ডিভাইসটির সামনে থাকছে নচসহ ৬.৫ ইঞ্চি ফুলভিউ ডিসপ্লে, নচের মাঝে রয়েছে লাইট সেন্সর ও দুটি সেলফি ক্যামেরা। তবে ডিভাইসটিতে একটি মজার বিষয় হচ্ছে নচ যাদের খুব একটা পছন্দ নয় তারা চাইলে নচ বন্ধ করেও হ্যান্ডসেটটি ব্যবহার করতে পারবেন। ওপরের মধ্য বেজেলে দেওয়া হয়েছে স্ট্যাটাস ইন্ডিকেটর ও এয়ারপিচ। এর পেছনে রয়েছে দুটি ক্যামেরা, ফ্ল্যাশ লাইট ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।

হ্যান্ডসেটটির ওপরের দিকে রয়েছে সেকেন্ডারি মাইক্রোফোন এবং নিচের দিকে রয়েছে, প্রাইমারি মাইক্রোফোন, হেডফোনের জ্যাক, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট এবং স্পিকার। ডান দিকে রয়েছে ভলিউম বাটন, তার ঠিক নিচেই রয়েছে পাওয়ার বাটন। বাম পাশে একটি স্লট যেখানে দুটি সিম কার্ডের পাশাপাশি একটি ডেডিকেটেড মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট রয়েছে, যেখানে ৪০০ জিবি পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরি ব্যবহার করা যাবে।

ডিসপ্লে

ওয়াই নাইন ২০১৯ মডেলের হ্যান্ডসেটটি হাতে নিলেই এর ৬ দশমিক ৫ ইঞ্চির লম্বা ফুলভিউ ডিসপ্লে যে কারো নজরে চলে আসে অনায়াসেই। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এই ডিসপ্লে রেশিও ১৯.৫ : ৯ এবং স্ক্রিন টু বডি রেশিও ৮২.৮ শতাংশ। এ ছাড়া এর রঙ বৈচিত্র্যের অনুপাত ১৫০০ : ১। ফুল ভিউ ডিসপ্লেটির রেজ্যুলেশন ২৩৪০ বাই ১০৮০ পিক্সেল এবং হাই ডেফিনেশন (এইচডি) ডিসপ্লেটির রেজ্যুলেশন ১৫৬০ বাই ৭২০ পিক্সেল। ডিসপ্লে খুবই উজ্জ্বল হওয়ায় ফোনটিতে টেক্সট পড়া অথবা ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে আরাম পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ডিভাইসটির কালার ব্যালেন্স অত্যন্ত নিখুঁত, যা হ্যান্ডসেটের ক্যামেরার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রিন রেজ্যুলেশন অটো রাখতে না চাইলে এইচডি প্লাস কিংবা ফুল এইচডি প্লাস; এর যেকোনো একটিতে রাখা যায়। রাতে আরামদায়কভাবে ব্যবহারের জন্য আই কমফোর্ট ম্যুড অন করে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সূর্যের আলোতে হ্যান্ডসেটটি ব্যবহারে কোনো সমস্যাই হয় না। এ ছাড়াও হোম স্ক্রিনে অ্যাপ ড্রয়ারও নিজের পছন্দমতো মোডে সিলেক্ট করে নিতে পারবেন।

ক্যামেরা

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের ফিচার হচ্ছে ক্যামেরা। আর এই দিকটিতে হুয়াওয়ে বেশ ভালোভাবেই নজর দিচ্ছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বের করা হ্যান্ডসেটগুলোর বেশিরভাগেই চারটি করে ক্যামেরা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়াই নাইন ২০১৯-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। হ্যান্ডসেটটির পেছনে প্রাইমারি ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল এবং সেকেন্ডারি ক্যামেরাটি ২ মেগাপিক্সেলের। এই ক্যামেরা ব্যবহার করে চমৎকার ছবি তোলা সম্ভব। স্বল্প আলোয় ছবি তোলার কাজও বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। ক্যামেরার প্রো মুড ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছে মতো ক্যামেরাকে কন্ট্রোল করা যায়। পোর্টেট মুডে ছবি তোলার অপশনও আছে এটিতে। এই ক্যামেরা ব্যবহার করে ফুল এইচডি ভিডিও করার সুযোগও রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে সেলফি ক্যামেরার একটি ১৬ মেগাপিক্সেল এবং সেকেন্ডারিটি দুই মেগাপিক্সেলের। ক্যামেরার রেজ্যুলেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সেলফিপ্রেমীদের প্রতি বেশি নজর দিয়েছে হুয়াওয়ে। ফ্রন্ট ক্যামেরার মানও অসাধারণ। হ্যান্ডসেটটিতে এআর লেন্স নামের একটি অপশন রয়েছে যেটি ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ফিল্টার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। মজার ছবি তুলতে এই ফিল্টার বেশ নজর কাড়ার মতো।

চার ক্যামেরার এই স্মার্টফোনটির প্রত্যেকটি ক্যামেরা ব্যবহার করেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মুডে ছবি তোলা যায়। এআই মুডে ছবি তুললে সেটা অনেকের কাছেই ন্যাচারাল মনে নাও হতে পারে। তবে এআই মুড অপছন্দ হলে এটি অন করে ছবি তোলার পরও তা ডিজঅ্যাবল করা সম্ভব। এ ছাড়া এই হ্যান্ডসেটটিতে মুভিং পিকচার নামের একটি ফিচার যুক্ত করেছে হুয়াওয়ে। এই ফিচারটি অন করে সাবজেক্ট কিংবা ক্যামেরার অবস্থান পরিবর্তনের সময় ছবি তোলা সম্ভব। যেটা পরবর্তীতে অ্যানিমেটেড পিকচারের ফিল দেয়।

পারফরম্যান্স

চার জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি ইন্টারনাল মেমোরির এই ফোনটিতে প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাসহ হুয়াওয়ের নিজস্ব হিসিলিকন কিরিন ৭১০। গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মালি-জি৫১। এতে করে এই হ্যান্ডসেটে একাধিক অ্যাপ চালাতে কিংবা ভারী অ্যাপ চালাতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বলে আশা করা যায়।

তবে গেম খেলার বিষয়ে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হতে পারে। কারণ, প্রফেশনাল গেমারদের জন্য হ্যান্ডসেটটি খুব উপযুক্ত না হলেও পাবজি কিংবা অ্যাশফ্যাল্ট এক্সট্রিমের মতো অন্যান্য গেম খেলার জন্য হ্যান্ডসেট কিনতে চান তারা এটির ওপর ভরসা রাখতেই পারেন। তবে মনে রাখতে হবে টানা গেমস খেললে হ্যান্ডসেটটি একটু গরম অনুভূত হতে পারে।

সফটওয়্যার

অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিওর ওপরের লেয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে ইউজার ইন্টারফেস ইএমইউআই ৮.২। স্মার্ট এই ডিভাইসটির লক স্ক্রিন, হোম স্ক্রিন এবং নোটিফিকেশন প্যানেলকে রাখা হয়েছে যথাসম্ভব সিম্পল। ডিভাইসটির স্টক লঞ্চারে কোনো আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার নেই, ব্যবহারকারীদের বাড়তি হোম স্ক্রিন থেকেই সকল অ্যাপলিকেশন এক্সেস করতে হবে। তবে ব্যবহারকারী চাইলে সেটিংস থেকে অ্যাপ ড্রয়ার মোড ওন করার মাধ্যমে অ্যাপ ড্রয়ার সুবিধাটি ব্যবহার করতে পারবেন।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর

স্মার্টফোনটির রিয়ার ক্যামেরার নিচে আছে একটি ফাস্ট বায়োমেট্রিক সেন্সর। বায়োমেট্রিক এই সেন্সরটি ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করতে সক্ষম যা আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে বদলে দেবে। এর মাধ্যমে আপনি ফোন আনলক করার, অ্যাপলিকেশন লক করার এবং ছবি তোলার সুবিধাও পাবেন।

বেঞ্চমার্ক

অনেকেই একটি স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স বিবেচনা করে থাকেন বিভিন্ন ধরনের বেঞ্চমার্কিং টুলের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে হুয়াওয়ের এই ডিভাইসটির থ্রিডি মার্কের স্লিং শট এক্সট্রিম ওপেন জিএলইএসের ফলাফল হচ্ছে ৯৪০, স্লিং শট এক্সট্রিম আনলিমিটেডের ফলাফল ৯৪৫ এবং স্লিং শট এক্সট্রিম ভুল্কানের ফলাফল হচ্ছে ১০৬৯। এ ছাড়া আনটুটুতে স্কোর করেছে এক লাখ ৯ হজার ৩৫৮ এবং নেনামার্ক ২-তে এর স্কোর ছিল ৬০.১।

অন্যান্য ফিচার

ডিভাইসটিতে ব্যবহূত ফেস আনলক পদ্ধতি বেশ চমকে দেওয়ার মতো। অল্প আলোতেও চেহারা ঠিকই চিনে নিতে সক্ষম এই সেন্সর। এ ছাড়া পিন ও স্ক্রিন আনলক পদ্ধতি তো রয়েছেই। এই ডিভাইসটির ফিচারের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সোশ্যাল অ্যাপ ক্লোন যা দিয়ে আপনি চাইলেই আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ যেমন ফেসবুক, মেসেঞ্জারগুলোর দুটি অ্যাপ মানে এক ডিভাইসে একই সঙ্গে দুটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। এ ছাড়া ডিভাইসটিতে থাকা পার্টি মুড নামের অ্যাপসটির ফিচারও অনেকটা ভালো লাগার মতো, যা ব্যবহার করে একই সঙ্গে সাতটি হ্যান্ডসেট যুক্ত করে গান শোনা সম্ভব। আরো আছে ডুয়াল ব্যান্ড ওয়াইফাই, ব্লু-টুথ ৫.০, মাইক্রো ইউএসবি ২.০। সেন্সরের মধ্যে এই ফোনটিতে আছে এক্সেলেরো মিটার সেন্সর, হিউমিডিটি সেন্সর, গ্র্যাভিটি সেন্সর, লাইট সেন্সর, ম্যাগনেটিক ফিল্ড সেন্সর, স্টেপ ডিটেক্টর সেন্সর, প্রেসার সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সরসহ আরো কিছু সেন্সর।

ব্যাটারি লাইফ

ডিভাইসটিতে ৪ হাজার মিলি-অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের (এমএইচ) শক্তিশালী ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে টানা ৯ ঘণ্টা ভিডিও দেখা বা গেম খেলা কিংবা টানা ৬৫ ঘণ্টা গান শোনা অথবা ফোরজি নেটওয়ার্কে ১৪ ঘণ্টা ওয়েব ব্রাউজিং সম্ভব। তবে হ্যান্ডসেটটি চার্জে বসালে সেটি একটু বেশি সময় নিচ্ছে বলে মনে হতে পারে। কারণ হ্যান্ডসেটটি একবার ফুল চার্জ হতে চার ঘণ্টারও বেশি সময় নেয়। আর তাই তো এই ডিভাইসটি নিয়ে বের হলে আপনাকে সারাদিনের জন্য পাওয়ার ব্যাংকের কথা ভাবতে হবে না।

যেখানে পাওয়া যাবে ফোনটি এবং মূল্য

মিডনাইট ব্ল্যাক, সাফায়ার ব্লু এবং অরোরা পার্পেল; এই তিনটি রঙের ডিভাইসটি দেশের সকল হুয়াওয়ে স্টোরে পাওয়া যাবে। চমৎকার ফ্যাবলেট ফর্ম ফ্যাক্টরের এই ডিভাইসটির দাম পড়বে মাত্র ২২ হাজার ৯০০ টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads