• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সংকুচিত হতে পারে হুয়াওয়ের বাজার

ছবি : সংগৃহীত

টেলিযোগাযোগ

সংকুচিত হতে পারে হুয়াওয়ের বাজার

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৪ মে ২০১৯

গুগলের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্থায়ীভাবে বাতিল হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ব্যবসা। নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমের কথা বলা হলেও সেটিও কতটা সফলতার মুখ দেখবে তা নিয়েও শঙ্কা আছে বাজার বিশ্লেষকদের মাঝে।

এর আগে অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেও ব্যর্থ হয়েছে, এমন বড় উদাহরণ স্যামসাং। টাইজেন নামক একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। টাইজেন চালিত একাধিক স্মার্টফোনও বাজারে এনেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কোনোটিই গ্রাহকপ্রিয় হতে পারেনি। এছাড়া মাইক্রোসফট, ব্ল্যাকবেরি, নকিয়া নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম এবং সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। তবে গুগলের আগ্রাসী পরিকল্পনার সঙ্গে পেরে ওঠেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক বাজার অংশীদারত্ব ধরে রাখার ক্ষেত্রে হুয়াওয়েকে রক্ষা করতে পারবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।

গুগল কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ায় অ্যান্ড্রয়েডের ইকোসিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবে না চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কী নতুন বিকল্প আসতে পারে? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। হুয়াওয়ে গুগলের ওপেন সোর্স লাইসেন্সের আওতায় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম পাবে; কিন্তু সার্চ জায়ান্টটির স্বত্ব-সংবলিত কোনো সেবা পাবে না। অর্থাৎ নিয়মিত হালনাগাদ, গুগল প্লে, জিমেইল, ইউটিউব, ক্রোম ব্রাউজার ইত্যাদি জনপ্রিয় অ্যাপগুলো আর হুয়াওয়ের নতুন কোনো ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে না।

ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম পেতে হুয়াওয়েকে কোনো বাধার মুখে পড়তে হবে না। কিন্তু মূল সমস্যাটা গুগলের স্বত্ব-সংবলিত সেবা না পাওয়া। এ কারণেই শুধু অপারেটিং সিস্টেম হুয়াওয়ের তেমন কাজে আসবে না। আর বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও হুয়াওয়েকে সাহায্য করতে পারবে না।

এর প্রধান কারণ স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে মানুষ দুটি বিষয় সবসময় গুরুত্ব দেয়। প্রথমত বৃহৎ বাজারগুলোয় ডিজিটাল ইকোসিস্টেম এতটা ব্যাপক বিস্তৃত যে, ক্রেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রথমেই বিবেচনায় থাকে তিনি অ্যাপল নাকি গুগল ব্যবহার করবেন। এ সিদ্ধান্তই ক্রেতাকে আইওএস অথবা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কিনতে প্ররোচিত করে। কারণ আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড শুধু অপারেটিং সিস্টেম নয়, এ দুটি আলাদা ইকোসিস্টেম। এ ইকোসিস্টেমে অসংখ্য ফিচার ও অ্যাপ ব্যবহারকারীর হাতের নাগালে থাকে, তৈরি হয়েছে বিশাল এক কমিউনিটি। এক্ষেত্রে হুয়াওয়ের তেমন কিছু করার নেই।

দ্বিতীয়ত, কেউ যখন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, এর পরই তিনি সেই ইকোসিস্টেমের বিবেচনায় দাম, স্ক্রিন, ক্যামেরা ইত্যাদি ফিচারগুলো তুলনামূলক বিচার করতে থাকেন। এসব ফিচারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় দাম বাদে তেমন একটা পার্থক্য তৈরি করা যায় না। অর্থাৎ একই ইকোসিস্টেমে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে দাম ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ কম। এ কারণেই গুগল মূলত স্মার্টফোন থেকে অর্থ আয় করে এবং অ্যান্ড্রয়েড হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের বিনামূল্যে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে দেয়।

হুয়াওয়ে বর্তমানে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশই সরবরাহ করে চীনের বাইরের বাজারে। এখন ক্রেতাদের মধ্যে বিদ্যমান প্রবণতা অনুযায়ী ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে সবার আগে বিবেচনায় থাকবে অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেম বা গুগলের সার্ভিস। ডিভাইসে এটি না থাকা মানে ক্রেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপেই পিছিয়ে পড়বে হুয়াওয়ে। ফলে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম থাকলেও গুগলের ইকোসিস্টেমের সঙ্গে পেরে ওঠা হুয়াওয়ের জন্য প্রায় অসম্ভব হবে।

এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা হুয়াওয়ে নিতে পারে। অ্যাপটয়েডের মতো কোনো অ্যাপ স্টোর ডিভাইসে রাখা। এ ধরনের অ্যাপ স্টোরে গুগলের সার্ভিসও পাওয়া যায়। ডিভাইস কেনার পর অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপগুলো ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হয়। অ্যাপটয়েড পর্তুগালভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং এটি ব্যবহার করতে হুয়াওয়েকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। কিন্তু একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো অ্যাপ যখন একেবারে কারখানায় ডিভাইসে ইনস্টল করা হয়, তখন সেটি ভালো কাজ করে। পাশাপাশি সেটির সেটআপও অনেক সহজ হয়।

এখানে আরেকটি ঝুঁকি আছে- অন্য অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করা ব্যবহারকারীর কাছে অস্বস্তিকর হতে পারে। অথবা অভ্যস্ততার কারণে গুগলের সার্ভিস না থাকায় হতাশ বা বিরক্ত হতে পারেন ক্রেতা।

ফলে কোনো বিকল্পই হুয়াওয়ের জন্য সুবিধাজনক হবে না। তাছাড়া বাজারে হুয়াওয়ের বিকল্প বিভিন্ন কোম্পানির হ্যান্ডসেট রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে লাভবান হতে পারে দক্ষিণ কোরীয় স্যামসাং। ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে স্যামসাং হুয়াওয়ের শূন্যস্থানের অনেকখানি পূরণ করে ফেলতে পারে।

তার মানে, গুগলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ছাড়া চীনা কোম্পানিটির ৫০ শতাংশ বাজার হারানোর সমূহ আশংকা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads