• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
উদ্বোধনের ৯ বছরেও চালু হয়নি

চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স

ছবি সংগৃহীত

বাণিজ্য

চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স

উদ্বোধনের ৯ বছরেও চালু হয়নি

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৮

উদ্বোধনের ৯ বছরেও চালু হয়নি চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স (সিসিসি)। ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সিসিসি পুনরায় উদ্বোধন করে ৬ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ৯ বছর পার হয়ে গেলেও তা চালু হয়নি।

তবে চলতি বছরের মধ্যেই বন্ধ কারখানাটি চালু হবে- এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারখানাটি চালু করতে কারিগরি কিছু ত্রুটি রয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ত্রুটি সারিয়ে চলতি বছরের মধ্যেই উৎপাদন শুরু সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

বিসিআইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হাইয়ুল কাইয়ুম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সটি চালুর জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটি যেন সহসাই চালু করা যায়, সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই সিসিসি চালু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল করপোরেশনের (বিসিআইসি) আওতাধীন সিসিসি ২০০২ সালে সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়ার সময় কারখানাটিতে বছরে ৬ হাজার ৭০০ টন কস্টিক সোডা, সাড়ে ৪ হাজার টন তরল ক্লোরিন, ৬ হাজার ৭০০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ৩০০ টন হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপাদন হতো। প্রায় ৫০০ শ্রমিক কারখানাটিতে কাজ করত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে প্রায় ৯১.১৯ একর জমির ওপর ১৯৬৫ সালে ডিডিটি ফ্যাক্টরি ও কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ অব পাকিস্তান নামে দুটি কারখানা নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে কারখানা দুটি জাতীয়করণ করা হয় এবং উৎপাদন, বিপণন ও পরিচালনার সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠান দুটিকে একত্রিত করে চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স বা সিসিসি নামকরণ করা হয়। অবশ্য পরিবেশের দূষণ বিবেচনা করে ১৯৯১ সালে ডিডিটি ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই ইউনিটটিতে পোকামাকড়ের কীটনাশক হিসেবে ডিডিটি পাউডার উৎপাদন হতো।   

২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই সময় তিনি সিসিসি চালুর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের ১২ দিনের মাথায় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া সিসিসি উদ্বোধন করেন এবং ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা চালুর ঘোষণা দেন।

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে সিসিসির অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অপরদিকে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে অনেকটা নতুন করেই কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নিতে হয় বিসিআইসিকে। আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় ব্লিচিং পাউডার উৎপাদন, লিকুয়েড কস্টিক সোডাকে সলিড কস্টিক সোডায় রূপান্তরে ইলেকট্রোলাইজার স্থাপনসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করে কারখানাটি চালুতে ঠিকাদার নিয়োগে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিসিআইসি। দরপত্রের মাধ্যমে ২০১৩ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান ওয়াং এনিয়ং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড (ডব্লিউএএসটিসিএল) কারখানাটি চালুতে কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানটির কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো যন্ত্রপাতি আমদানি করতে না পারায় এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ জটিলতায় কারখানাটি চালু করা যাচ্ছিল না।  

এসব সমস্যার সমাধান করে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সিসিসি চালুর জন্য প্রায় প্রস্তুত ছিল। পরীক্ষামূলকভাবে কারখানাটির উৎপাদনও শুরু হয়েছিল। কিন্তু পারফরম্যান্স গ্যারান্টি টেস্ট রান (পিজিটিআর) করতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধে। পিজিআরটিতে একটানা ৭২ ঘণ্টা কারখানার উৎপাদন চালিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েও সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি তারা। অবশেষে চুক্তির নিয়মানুযায়ী চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কার্যাদেশ বাতিল করে বিসিআইসি। চীনা প্রতিষ্ঠানটি ১১৪ কোটি টাকায় কার্যাদেশটি পেয়েছিল। বিসিআইসির কাছে তাদের ৪৫ কোটি টাকা পাওনা ছিল। কিন্তু কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় সে টাকা বিসিআইসির কাছেই রয়ে গেছে।

এখন বিসিআইসি নিজস্ব অর্থায়নে কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানা চালুতে কি ধরনের সংস্কার ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে-তা নির্ধারণে সিসিসিতে কর্মরতদের নিয়ে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কারখানাটি চালু করা হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে-এমনটিই জানিয়েছেন বিসিআইসির কর্মকর্তারা। আর চলতি বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাওয়া সিসিসিতে ফের উৎপাদন শুরু হবে বলে আশাবাদী তারা। 

এদিকে সিসিসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকটি রাসায়নিক কারখানা গড়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, নতুন এসব কারখানা ও নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী বর্তমানে সব ধরনের রাসায়নিক সামগ্রীর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এর ফলে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে রাসায়নিক সামগ্রীর বাজার। সিসিসির উৎপাদনে প্রক্রিয়াগত নানা জটিলতার পেছনে এসব সিন্ডিকেটের যোগ থাকতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন।

সিসিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেন সুখেন চন্দ্রের সঙ্গে কয়েকদফা যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads