• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাংক ঋণের বাধায় আটকে আছে জমি

সংগৃহীত ছবি

বাণিজ্য

রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

ব্যাংক ঋণের বাধায় আটকে আছে জমি

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

খুলনার খালিশপুরে ‘রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নির্মাণ প্রকল্পটি গত ২২ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের (কেএনএমএল) ৫০ একর জায়গার ওপর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। তবে মিলের জমি হস্তান্তরের বিষয়টি এখনো ঝুলে রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের এক মাসের মধ্যে মিলের জমি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (নওপাজেকো) নিকট হস্তান্তরের বিষয়ে একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হলেও ৪ মাসেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। মিলটির প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি দায়-দেনা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের নিকট। দেনার বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় নওপাজেকোর নিকট জমি হস্তান্তর করতে পারছে না বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া বিসিআইসির আওতাধীন খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ৫০ একর জমি স্থাপনা ও গাছপালাসহ ৫৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকায় নওপাজেকোর নিকট হস্তান্তরের বিষয়ে  সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু নওপাজেকোর পক্ষ থেকে একত্রে এ পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। কয়েক দফায় এ অর্থ পরিশোধ করতে চায় তারা। পুরো অর্থ পরিশোধের আগেই জমি হস্তান্তরে বিসিআইসিকে অনুরোধ জানিয়েছে নওপাজেকো। কিন্তু ব্যাংকের দেনা পরিশোধ না করে জমি হস্তান্তর করতে গেলে আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিসিআইসি।

এ বিষয়ে বিসিআইসির পরিচালক (বাণিজ্য) হাইয়ূল কাইয়ুম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ব্যাংকের দেনা পরিশোধ না করে জমি হস্তান্তর করতে গেলে আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হবে। দেনার বিষয়টি সুরাহা না করে জমি হস্তান্তর করাটা সমীচীন হবে না। শিগগিরই ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সুদ মওকুফ করে শুধু মূল ঋণ পরিশোধে প্রস্তাব করব। বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের অব্যবহূত জমিতে নতুন শিল্প স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ৫০ একর জায়গার ওপর রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন নওপাজেকো। মিলের জমি বরাদ্দের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্মতিও প্রদান করা হয়। তবে জটিলতা দেখা দেয় জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটি জমির মূল্য হিসেবে ২৫৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু মিলের জমি হস্তান্তরে বিভিন্ন ব্যাংকের নিকট মিলের দায়-দেনার বিষয়টি তুলে ধরে বিসিআইসি। ব্যাংকের দায়দেনা হিসেবে আরো ৩৩২ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট দাবি জানায় তারা। এ হিসাবে মিলের জমির জন্য মোট ৫৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানায় বিসিআইসি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধের বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে আপত্তি জানানো হয়। এ নিয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। বেশ কয়েকদফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়। কিন্তু জমির মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি এক প্রকার ঝুলেই থাকে। এরই মধ্যে রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের পর মিলের ৫০ একর জমি ৫৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট হস্তান্তরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়ে গত জুলাই মাসে সারসংক্ষেপ পাঠায় শিল্পমন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব অনুমোদন প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর অর্থ পরিশোধে বিসিআইসির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ ও নওপাজেকোকে চিঠি দেয় বিসিআইসি। কিন্তু একসঙ্গে টাকা পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে কয়েকটি কিস্তিতে তা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে চিঠির জবাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ করা হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংকের নিকট তার দায়দেনার পরিমাণ রয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেনা রয়েছে সোনালী ব্যাংক খুলনা শাখার নিকট। ১৯৯৯ সালে মিলের দলিল বন্ধক রেখে ব্যাংকটি থেকে ঋণ নেয় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, সুদে-আসলে ব্যাংকের দেনার পরিমাণ ৩১৮ কোটি ১৮ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে এ দেনার পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিলের দলিল হস্তগত না হলে নওপাজেকোর নিকট জমি হস্তান্তর সম্ভব নয় বিধায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।   

উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে ভৈরব নদীর তীরে প্রায় ৮৮ একর জায়গার ওপর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল চালু করা হয়। চালুর পর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই লাভজনক ছিল মিলটি। তবে কাঁচামাল সঙ্কটসহ অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে লোকসানের কবলে পড়ে এ মিলটি। লোকসান কমাতে বন্ধ করে দেওয়া এ মিলটির অব্যবহূত ৫০ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

অপরদিকে মিলের অবশিষ্ট জায়গা ও খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের জমি একীভূত করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় একটি আধুনিক পেপার মিল স্থাপন এবং নিজস্ব অর্থায়নে ১৫ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন সারের গোডাউন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বিসিআইসির।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads