• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চার দিন পর গতি পাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য

চার দিন পর গতি পাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য

সংরক্ষিত ছবি

বাণিজ্য

চার দিন পর গতি পাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ০২ জানুয়ারি ২০১৯

শেষ সোমবার ব্যাংক হলিডে মিলিয়ে চার দিন বন্ধ ছিল ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেন। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ভোটের ছুটি পেয়ে রাজধানী ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় ছুটে যান মানুষ। যারা রাজধানীতে ছিলেন তারাও ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে খুব একটা বের হননি। সবমিলিয়ে এ ক’দিন কার্যত গতিহীন হয়ে পড়ে নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্য। সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে গতকাল থেকে।

সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত রোববারও সাধারণ ছুটির মধ্যে ছিল দেশ। ব্যাংক হলিডে উপলক্ষে গত সোমবার ব্যাংকগুলোতে ছুটি ছিল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচনের পাশাপাশি টানা ব্যাংকে দেনদেন বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় বড় ধরনের কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। আবার এর মধ্যে পরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় পণ্যের পরিবহন ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। সারা দেশে পণ্য পৌঁছাতে পারেনি অনেক নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। আর চাহিদা কমায় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন কমিয়েছিল। সঙ্গে রফতানিকারকদের পণ্য পরিবহনে অসুবিধা হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত অধিকাংশ দোকানপাট, ব্যবসা কেন্দ্র বন্ধ রাখতে দেখা যায়। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বিশেষায়িত বাজারে পাইকারদের অনাগোনা ছিল না বললেই চলে, যা গতকাল থেকে আবারো স্বাভাবিক হচ্ছে। তারপরও রাজধানীতে জনসমাগম আগের মতো না থাকায় বেচাবিক্রি খুব কম। যা আর দুয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

শান্তিনগরে গতকাল দুপুর ২টায় প্যাসিফিক কার সেন্টারের পরিচালক ফয়সাল আহম্মেদের সঙ্গে বাংলাদেশের খবরের কথা হয়। তিনি জানান, শুক্র থেকে সোমবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল তার প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার খুললেও ক্রেতার দেখা মেলেনি সকাল থেকে।

এদিকে ফকিরাপুল এলাকায় নূর বেকারির মালিক বলছিলেন, চাহিদা না থাকায় তিনি উৎপাদন কমিয়েছেন। নূর মোহাম্মদ নামের ওই ব্যবসায়ী বলেন, গত শুক্রবারের পর থেকে খুবই সীমিত আকারে কয়েকটি আইটেম তৈরি করছি। আর ভোটের দিন সেটাও বন্ধ রেখেছিলাম। কারণ পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। বেকারির কাজ না থাকায় কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছি।

ছুটির মধ্যে কাঁচাবাজারগুলোতেও অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। সেসব গতকাল থেকে খুলতে শুরু করেছে। রামপুরা বাজারে শেষ কয়েক দিনও খোলা ছিল- এমন দোকানি ফরিদ মিয়া বলেন, ওই সময় দোকান খোলা থাকলেও কাস্টমার খুব কম ছিল। ব্যাচেলর মেস ও ফুটপাতে খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় সবজির চাহিদা কমেছিল। ফলে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা বেচাবিক্রি হলেও এ সময় গড়ে আট হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়নি।

ব্যবসা-বাণিজ্যে এমন স্থবিরতার এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এর প্রমাণ মেলে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের হালচাল দেখেও। দুই দিন আগে অফিস আদালত খুললেও মতিঝিলের ব্যস্ত এলাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম গতিহীন। বরং শাপলা চত্বর ও আশেপাশে পুলিশ-র্যাবের উপস্থিতিতে রয়ে গেছে নিরাপত্তাজনিত কারণে। রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি এখনো বেশ কম। অনেকটা ঈদের পরপর অফিস খোলার মতো পরিবেশ। ব্যাংকগুলোতে লেনদেন শুরু হলেও খুব একটা ভিড় চোখে পড়েনি।

মতিঝিলের অনেক হোটেলও গতকাল বন্ধ ছিল। ফুটপাতের দোকানিদের দেখা যায়নি। নির্বাচনে নিরাপত্তার স্বার্থে উঠিয়ে দেওয়ার পর দুয়েকটা চায়ের দোকান বসলেও সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা নিয়েই ব্যস্ত বেশিরভাগ মানুষ।

একটু এগিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এলাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোতেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা চার দিনের ছুটি শেষে মঙ্গলবার পুঁজিবাজার খুললেও বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি বেশ কম। নতুন বছর ও ভোটের আমেজে সকলে ব্যস্ত বলে তাদের ধারণা। আবার অনেকে এখনো গ্রাম থেকে ফেরেননি। টেলিফোনেই প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরেছেন বলে জানিয়েছেন ব্রোকারেজ হাউসের মালিকরা।

এদিকে রাজধানীর বিশেষায়িত পাইকারি বাজার গুলিস্তান, নবাবপুর, বঙ্গবাজার, বাবুবাজার, ইসলামপুর, মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, শ্যামবাজার, সদরঘাটসহ বিভিন্ন বাজারে ক্রেতার অনাগোনা মঙ্গলবার থেকে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও আগে কয়েক দিন এসব বাজারে অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। এসব বাজারে সাধারণত প্রতিদিন লাখো ক্রেতার সমাগম ঘটে। যাদের অধিকাংশ পাইকারি পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় নেন। তবে যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কয়েক দিন তারা আসতে পারেননি।

রাজধানীতে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার। ওই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, গত কয়েক দিনে এ বাজারের বেচাবিক্রি অর্ধেকের থেকেও বেশি কমেছিল। কারণ আমাদের ব্যবসা মফস্বলের পাইকারি ক্রেতাদের ওপর নির্ভর করে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। বিক্রি বাড়ছে।

এসবের বাইরেও বছরের এই সময়টা (শীত ও নতুন বছর) পর্যটনের ভরা মৌসুম। ফলে হোটেল-রিসোর্ট, পরিবহন, রেস্টুরেন্ট, বিনোদন পার্ক অর্থাৎ পর্যটন খাতে ব্যবসা কমেছিল বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে সবকিছুর পরেও দেশের অর্থনীতির স্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে নতুন বছরের শুরু হয়েছে এমন মনে করেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। ভোটের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় স্বস্তি পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও ভালো আগামীর জন্য সেটা মেনে নিতে হবে। আমরা আশা করছি এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করে যেতে পারব।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads