• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এবার পাওনা চেয়ে ভারতের নালিশ

প্রতীকী ছবি

বাণিজ্য

এবার পাওনা চেয়ে ভারতের নালিশ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১২ জানুয়ারি ২০২০

এবার রপ্তানির পাওয়া চেয়ে সরকারের কাছে নালিশ ঠুকেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির ভাষ্য, তাদের রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করে তার পাওনা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। এতে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব তৈরির শঙ্কার কথা জানিয়েছে বন্ধুপ্রতিম দেশটি। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এমন তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, ভারতের ব্যবসায়ীরা এই অভিযোগ জানিয়েছেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সেখান থেকে এই তথ্যগুলো ঢাকায় ভারতের দূতাবাসে পাঠানো হয়। দূতাবাসের প্রতিনিধিদল গত ডিসেম্বর মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বৈঠক করে। সেখানে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য প্রসাররের নানা বাধা নিয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারের সম্ভাবনাগুলোও পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে ভারতের পক্ষে সরকারকে রপ্তানির অর্থ ঠিকমতো পরিশোধ করা হয় না বলে জানানো হয়। জবাবে বাংলাদেশ বিষয়টি যাচাইবাছাই করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের অভিযোগটি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এর সুরাহার পরামর্শ দিয়ে প্রকৃত চিত্র জানাতে বলা হয়েছে।

আলাপকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগটি ঢালাওভাবে করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও খুবই গভীর। দু-একটি ঘটনায় এমন হতে পারে। মোদ্দা কথা, রপ্তানির অর্থ পরিশোধ না করলে কোনো ব্যবসায়ীই ব্যবসা করবেন না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানির পাওনা পরিশোধ অনেক সময় বৈধপথে হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পরিশোধ করছেন। ভারতের ব্যবসায়ীরাও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করছেন। বাণিজ্যের আড়ালে হুন্ডি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটি অর্থ পাচার। তবে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভারতের যে অভিযোগ সেটি একটি-দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। সব ক্ষেত্রে এমনটি নয়। তবে আমাদের রপ্তানিকারকদেরও অনেকে একই ধরনের সমস্যায় পড়েন। কিন্তু ভারত যেভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নিয়ে আসে আমাদের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি সেভাবে সামনে আনেন না। 

জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেক বড় আকারের হলেও বাণিজ্য ঘাটতি এখনো অনেক বেশি। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। পাঁচ বছর আগের চেয়ে এই আয় দ্বিগুণের বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ রপ্তানি বেড়ে হয় ১২৫ কোটি ডলার।

সরকারি হিসাব বলছে, রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়লেও ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানিতে বাণিজ্য ঘাটতির ফারাক এখনো বেশ বড়। ভারত থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে ৫৮৩ কোটি ডলার। আর সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৮-১৯) আমদানি করে ৭৬৫ কোটি ডলার। ভারতের ভোগ্যপণ্যে বাংলাদেশের বড় নির্ভরশীলতা রয়েছে। যেমন সম্প্রতি ভারত সাময়িক পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশে এ পণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এক ধাক্কায় ৪০-৫০ টাকা দাম বেড়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ গিয়ে দাঁড়ায় ১২০ টাকায়।

প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে ভারতে পোশাক রপ্তানি হয় ২৮ কোটি ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য ১৭ কোটি ডলার, প্রকৌশল পণ্য ১০ কোটি ডলার এবং অন্যান্য খাতে ৩২ কোটি ডলার। একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি হয় বস্ত্রখাতে ১৯৮ কোটি ডলার, ভোগ্য পণ্য ১৯৬ কোটি ডলার, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ৯৩ কোটি ডলার এবং অন্যান্য খাতে ৩৭৫ কোটি ডলার।

ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজীকরণে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদেরও পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।

চীনের পরেই বাংলাদেশ ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। দেশটি থেকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের বড় অংশই হলো শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করত। তবে এখন ভারতকে পেছনে ফেলে সে স্থান দখলে নিয়েছে চীন। বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যঘাটতি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে নানারকম মত রয়েছে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, যেহেতু বাংলাদেশ ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছে, তাই এই বাণিজ্য ঘাটতিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

অন্যপক্ষ মনে করে, ভারত বাংলাদেশের ২৫টি পণ্য বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিলেও নানা অশুল্ক বাধা আরোপ করে রেখেছে। ফলে বাংলাদেশের পাটপণ্য, পাট ও তৈরি পোশাকের বিপুল চাহিদা সত্ত্বেও দেশটিতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ৪৭ কোটি ডলারের, ভুটানের সঙ্গে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারের, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এক কোটি ৬২ লাখ ডলারের, মালদ্বীপের সঙ্গে এক কোটি ২৯ লাখ ডলারের ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ২০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে আমদানির পরিমাণ তার চেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads