• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বাণিজ্য অসমতায় ঝিমিয়ে পড়েছে বিবির বাজার স্থলবন্দর

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাণিজ্য

বাণিজ্য অসমতায় ঝিমিয়ে পড়েছে বিবির বাজার স্থলবন্দর

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর ২০২০

ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য অসমতায় ঝিমিয়ে পড়েছে কুমিল্লা বিবির বাজার স্থলবন্দর। এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সবগুলো বৈধ পণ্য ভারতে প্রবেশের অনুমতি থাকলেও মাত্র দুই থেকে তিনটি পণ্য আমদানি করছে ভারত সরকার। অন্যদিকে ভারত থেকে ৪২টি পণ্য বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি থাকলেও মাসে মাত্র তিন থেকে পাঁচটি চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কমসংখ্যক চালান এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করায় শুল্ক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতে রপ্তানিকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে শুল্কমুক্ত পণ্যের চেয়ে শুল্কযুক্ত পণ্যের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং দুই দেশে আরও বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা থাকলেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার কারণে আমদানি-রপ্তানিতে গতি আসছে না বলে জানান বাংলাদেশের সিএন্ডএফ এজেন্টরা।

ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ৮৩ জন এজেন্টের লাইসেন্স আছে কুমিল্লায়। কুমিল্লায় আছে কোয়ারেন্টিন সেন্টারও। অথচ ভারতে কোনো স্থায়ী কোয়ারেন্টিন সেন্টার নেই। বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত তিনটি পণ্য প্রবেশের বাইরেও অন্যান্য কাঁচামাল প্রবেশ করলে তারা ইচ্ছামতো ভ্যাট বসিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট বসিয়ে দিচ্ছে তারা। সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) বিনা ভ্যাটে যেসব পণ্য ভারতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, ওইসব পণ্যেও ভ্যাট বসিয়ে দিচ্ছে ভারত সরকার। এছাড়া কস্ট ব্রেক-আপ দেখিয়ে পণ্যের মান নির্ধারণ করাতেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ত্রিপুরায় মাছ, পাটের সুতা, পোল্ট্রি ফিড ও গ্লাসের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লার সভাপতি জামাল আহমেদ বলেন,‘পণ্য আমদানি-রপ্তানির সমস্যার বিষয়ে আমরা একাধিকবার ত্রিপুরার বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করেছি, কিন্তু কোনো সমাধান তারা করেনি। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার কারণে আমরা ঠিকভাবে পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। কারণ, ওরা কখনো স্বাধীনভাবে পণ্য নিতে চায় না।’

বিবির বাজার দিয়ে সিমেন্ট, বালি ও কয়লা ত্রিপুরায় প্রবেশ করে। করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পূর্বে দৈনিক ১২০০টন পণ্য এ বন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করতো। এপ্রিল থেকে গড়ে ৫০০টন পণ্য যাচ্ছে ভারতে। প্রতিমাসে ৩৬ হাজার টন পণ্য প্রবেশ করলেও এখন গড়ে মাত্র ১৫হাজার টন পণ্য আমদানি করছে তারা। এদিকে ভারত পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, আদা, এলাচ, দারচিনি, গবাদিপশু, বেল, তেঁতুল, আগরবাতি ও ঋতুগতফলসহ ৪২টি পণ্য রপ্তানি করছে। করোনার পূর্বে চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিমাসে সাত থেকে আটটি চালান (প্রতি চালানে ৪০-৫০টন পণ্য থাকে) বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে কুমিল্লায় প্রবেশ করতো। এতে শুল্ক আদায় হতো প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখে। দুই দেশ থেকে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার মানুষ চিকিৎসা, ভ্রমণ ও অন্যান্য কাজে আসা-যাওয়া করলেও এপ্রিল থেকে এ বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

সরেজমিন বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, করোনার আগে কিছু ব্যস্ততা থাকলেও এখন বন্দর ঝিমুচ্ছে। বন্দর এলাকায় পিনপতন নীরবতা। অলস ঘুমাচ্ছে বন্দরের সড়ক। গাড়ির সারি তেমন নেই। পরিবহন শ্রমিক আর ব্যবসায়ীদের হাঁক-ডাক নেই। অদূরের চা-দোকানেও খদ্দের নেই। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টুকটাক হিসাব নিকাশ করছেন।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত সরকারের অনীহার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও কিছুটা ব্যর্থতা আছে। কুমিল্লায় প্রচুর ব্যবসায়ী থাকলেও এ বন্দর দিয়ে রপ্তানির তেমন কোনো আগ্রহ নেই তাদের। এ বন্দরকে চাঙা করতে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কুমিল্লার ব্যবসায়ীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

চেম্বার অব কমার্স কুমিল্লার সভাপিত ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান জানান,‘ বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাণিজ্যে গতি আনার জন্য ইদানিংকালে সিএন্ডএফ ও বেক্সিমকো ফার্মা কর্তৃপক্ষ আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আশা করি এর একটা সমাধান হবে।’

কুমিল্লার বিবির বাজার স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আহমেদ ছালাউদ্দিন বলেন,‘বন্দরে বাণিজ্য গতি বাড়াতে বেশিসংখ্যক ব্যবসায়ীকে এখানে যুক্ত হতে হবে। আমরা সে লক্ষে কাজ করছি। বন্দরে এখন কিছু স্থবিরতা আছে সত্য, তবে তা শীঘ্রই কেটে যাবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় বিবির বাজার স্থলবন্দরে। দুই দশমিক ৮৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এ বন্দরের মাত্র ১০ শতাংশ জায়গাজুড়ে অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। মাত্র পাঁচজন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে এ বন্দরের কার্যক্রম। লোকবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণ ও ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে এ বন্দরে খুলে যাবে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার দ্বার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads