• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
স্পেন-ইতালিতে করোনা আক্রান্তের হার কমছে

প্রতীকী ছবি

যুক্তরাজ্য

লকডাউনে মিলছে সুফল

স্পেন-ইতালিতে করোনা আক্রান্তের হার কমছে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০১ এপ্রিল ২০২০

করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার করণে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা। বিশ্বের প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ ঘরে বন্দি। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে বিভিন্ন দেশের সরকার আংশিক অথবা পুরো দেশ লকডাউন করেছে। এতে অসংখ্য মানুষের সমস্যা দেখা দিলেও ক্রমশ লকডাউনের সুফল মিলতে শুরু করেছে। করোনায়  বিপর্যস্ত ইতালি ও স্পেনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। সোমবার স্পেনে নতুন ৬ হাজার ৪০০ জন শনাক্ত হয়েছে, যা গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে কম। এতে আশাবাদী হয়ে ওঠা স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঞ্চা গনজালেস বলেছেন, এ তথ্য এটাই নির্দেশ করছে যে ভাইরাস সংক্রমণের যে গতিচিত্র, তা নিচে নেমেছে।

গোটা দেশে লকডাউন অবস্থা ঘোষণা দেওয়ার পর স্পেনে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। এখন দেশটিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুই সপ্তাহ কারও ঘর থেকে বের না হওয়ার কড়া নির্দেশনা রয়েছে। স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৯৫৬। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ঘটেছে ৮১২ জনের, যা মৃতের সংখ্যাকে ৭ হাজার ৭১৬ জনে উন্নীত করেছে। মহামারীতে স্পেনের চেয়েও বিপর্যস্ত ইতালিতে সোমবার ১ হাজার ৬৪৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে রোগী বৃদ্ধির এই সংখ্যাও গত কয়েকদিনে সর্বনিম্ন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৯১।

পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে ১ হাজার ৫৯০ জন রোগমুক্ত হয়েছেন, যা এক দিনের হিসাবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা। দেশটিতে মোট সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬২০ জন। অন্যদিকে স্পেনে মোট সেরে উঠেছেন ১৬ হাজারের বেশি রোগী। তবে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৯১ জনে। আক্রান্তে সংখ্যায় এখন ইতালির ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৯ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ১৭৩ জনের। মৃতের হিসাবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা সাত হাজার ৭১৬। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৯৫৬। স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চীনে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৫১৮ জন।

বিশ্বে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। ৩১ মার্চ সোমবার বিকালে আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোওমিটার এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে বিশ্বের ২০০টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ৮৯ হাজার ২৪০। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৪৮ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে ভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ মহামারী ঘোষণা করে হু।

যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের আওতা বাড়ছে : মহামারী নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের আরো কয়েকটি অঙ্গরাজ্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এতে করে দেশটির প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে প্রায় তিন জনই একরকম লকডাউনের আওতায় পড়তে যাচ্ছে। সর্বশেষ  মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, অ্যারিজোনা ও টেনেসি অঙ্গরাজ্য নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩২টিই এ পদক্ষেপ নিয়েছে।  বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে উপদ্রুত এলাকায় পরিণত হয়েছে নিউইয়র্ক। সেখানে ৯১৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। দেশটিতে ইতোমধ্যেই প্রায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্য নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশনা জারি করেছে। আর বাকি অঙ্গরাজ্যগুলো স্থানীয় পর্যায়ে এই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ফ্লোরিডা জুড়ে লকডাউন কার্যকরে অনিচ্ছুক গভর্নর রন ডেস্যান্টিস। ভাইরাস কবলিত চারটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর থাকতে পারে।

ইরানকে জার্মানি ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সহায়তা : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থায় ইরানকে মেডিকেল সহায়তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন দেশ। মঙ্গলবার জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, প্রথম ধাপের এ মেডিকেল সহায়তা ইরানে সরবরাহ করা হয়েছে। ইন্সট্রুমেন্ট ইন সাপোর্ট অব ট্রেড এক্সচেঞ্জের (আইএনএসটিইএক্স) আওতায় ইরানকে মেডিকেল সহায়তার তথ্য নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেন। এই তিন দেশ বলছে, ইউরোপ থেকে ইরানে প্রথম ধাপের মেডিকেল সামগ্রী রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিকে টিকিয়ে রাখতে এক বছর আগে আইএনএসটিইএক্স গঠনের ঘোষণা দেয় ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেন। এ ঘোষণার এক বছর ইরানে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় সামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি হলো। সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে করোনা চিকিৎসার সামগ্রী আমদানি করতে পারছে না তারা। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, প্রথম ধাপের সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। আইএনএসটিইএক্স এবং এর ইরানি অংশীদার এসটিএফআই আরো সরবরাহ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য কাজ করবে।

খোঁজ মিলল প্রথম আক্রান্তের : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। বিজনেস ইনসাইডারের খবরে বলা হয়েছে, প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির নাম ওয়েই গুইশিয়ান (৫৭)। তিনি চীনের উহান শহরে চিংড়ি মাছ বিক্রি করতেন। ওয়েই গুইশিয়ান গত বছরের ১০ ডিসেম্বর হুনান সি ফুড মার্কেটে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু দিনের পর দিন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকেন তিনি। এরপর উহানের ইলেভন্থ হাসপাতালে যান গুইশিয়ান। সেখানেও ধরা পড়েনি এ ভাইরাস। ১৬ ডিসেম্বর উহান ইউনিয়ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান গুইশিয়ান। এখানেই তাকে বলা হয়, তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত। এরপরই ওই হাসপাতালে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা, যাদের সবার শরীরেই একই ধরনের উপসর্গ। গুইশিয়ানের দেখাদেখি ওই হাসপাতালে ছোটেন হুনান মার্কেটের আরও অনেক মানুষ। এমনকি অনেক ক্রেতাও আক্রান্ত হয়ে পড়েন ওই রোগে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ওয়েই গুইশিয়ানকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তার শরীরে করোনার উপস্থিতি মেলে। উহান মিউনিসিপ্যাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত প্রথম ২৭ জনের মধ্যে প্রথমেই ছিলেন ওয়েই গুইশিয়ান।

কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যু : ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মধ্য-আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অব কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকস জোয়াকিম ইয়োমবি-ওপানগো। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ওপানগোর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দেন তিনি। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেনিস স্যাসু এনগুয়েসু ১৯৭৯ সালে ওপানগোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৯১ সালে দেশটিতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হয়। তার আগে বেশ কয়েক বছর কারাগারেই কাটাতে হয় ওপানগোকে। ১৯৯৭ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে নির্বাসনে যান ওপানগো। সেখানেই কয়েকদিন আগে তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads