• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
শৈত্যপ্রবাহে সারা দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাস্তার পাশে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন বৃদ্ধ

ছবি: মিজানুর রহমান খান

আবহাওয়া

শৈত্যপ্রবাহে সারা দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত

  • এ এইচ এম ফারুক
  • প্রকাশিত ২০ ডিসেম্বর ২০১৯

পৌষের শুরুতে হঠাৎ বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালটা ছিল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি কোথাও। বুধবার বেলা গড়িয়ে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। তাপমাত্রা কমেছে তিন থেকে সাত ডিগ্রি পর্যন্ত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী দেশের কোথাও কোথাও আগামী দুদিনে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এদিকে মঙ্গলবার থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট শুরু হলেও বুধবার দুপুর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। বুধবার দুপুরের দিকে কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আর সূর্যের দেখা মেলেনি। বরং ছিল হাড়কাঁপানো শীত। বুধবার থেকেই কুয়াশার সঙ্গে বয়ে যাওয়া বাতাসে ছিল শীতের দাপট। ঘর থেকে বেরোলেই শরীরে কাঁপন ধরায়। শীত ও ঘন কুয়াশায় কাবু হয়ে পড়ে জনজীবন। মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহে দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাভ্যান চালক, খেটে খাওয়া মানুষ আর ফুটপাতে থাকা ছিন্নমূল মানুষ। কৃষি শ্রমিকরাও ক্ষেতে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।

দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশকিছু জেলায় মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত রোগে শিশু ও বয়স্ক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

শীতের আক্রমণে নাগরিকরা রীতিমতো জবুথবু। গায়ে গরম কাপড় ও টুপি পরে তারা শীতের দাপট থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে। রাজধানীর বস্তিগুলোর সামনে ছিন্নমূল মানুষ কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে একটু উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করেন। রাজধানীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর ছেড়ে কম বের হতে লক্ষ করা গেছে। ফলে সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যাও তুলনামূলক কম দেখা গেছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায়। যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে এবং আরো বেশি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সব এলাকার তাপমাত্রা কমেছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। এই সময়ে আরো কিছু অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তিনি জানান, শনিবারের পর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা আবার বাড়তে থাকবে। ২৭ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা আবার কমতে পারে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ছাড়াও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চট্টগ্রামে ১৬, সিলেটে ১৫.৮, রাজশাহীতে ৯.৪, রংপুরে ১১, খুলনায় ১২, ময়মনসিংহে ১২.৫ এবং বরিশালে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

পূর্বাভাসে বলা হয়, শৈত্যপ্রবাহের কারণে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

বাংলাদেশের খবরের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে জানানো হয়, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম থেকে রাশিদুল ইসলাম জানান, শীতে ও হিমেল হাওয়ায় জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে ভারতের আসাম সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রাম জেলায়। বিপাকে পড়েছে জেলার শ্রমজীবী মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট বেড়ছে এখানকার হতদরিদ্র মানুষের। কাবু হয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে ভারী যানবাহন চলাচলে।

কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, চলতি মাসের ১৮-২২ তারিখ পর্যন্ত আবহাওয়ার অবস্থা এমনটাই চলার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে কুড়িগ্রামে ক্রমাগত বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সন্ধ্যা হতেই কুয়াশার চাদরে ছেয়ে আসছে গোটা জেলা। সারাদিন সূর্যের দেখা মিলছে না। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি কমে যাওয়ায় রাত ও সকাল বেলা শীতের তীব্রতা তুলনামূলক বেশি।

অপরদিকে, নদীবিধৌত চরাঞ্চলে শীতের প্রকোপে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। নদনদীর অববাহিকায় ঘন কুয়াশাসহ শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। ফলে সীমান্ত ঘেঁষা এ জেলার চরাঞ্চলের মানুষ বেশি কষ্টে পড়েছে। এ অবস্থায় শীত আক্রান্ত মানুষের পাশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে মো. ইমদাদুল হক জানান, গত তিনদিন থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে সুন্দরগঞ্জবাসী। গরম কাপড়ের দোকানে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পৌষ মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শীত জেঁকে বসেছে। এতে সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। তাপমাত্রা নেমে আসার পাশাপাশি প্রচণ্ড হিমেল হাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া যুক্ত হয়ে জনজীবন নাকাল করে তুলেছে। গত তিন দিন থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। কনকনে ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আল মামুন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতের আমেজ পাওয়া গেছে আরো বেশ কয়েকদিন আগ থেকেই। কিন্তু গত দুদিনের প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কনকনে শীতে রাস্তাঘাটে কমে গেছে সাধারণ মানুষের চলাচল। বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার কোথাও রোদের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে লোকজন শীত নিবারণের জন্য চেষ্টা করছে। সবচেয়ে কাতর হয়ে পড়েছে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। আশুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আরো অন্তত দুই থেকে তিনদিন থাকতে পারে শীতের এই প্রকোপ।

এদিকে শীতের তীব্রতার কারণে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের পণ্য ওঠানামার কাজে নেমে এসেছে ধীরগতি। প্রতিদিনের মতো এখানে নেই কর্মব্যস্ততা। শ্রমিকের সংখ্যাও নেই আগের মতো। এখানে কর্মরত শ্রমিকরা জানায়, শীতের প্রকোপের কারনে অনেক শ্রমিক কাজে আসেনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads