• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

অস্ত্র ও গোলা বারুদ

ফাইল ছবি

বিদেশ

বিশ্বের অস্ত্র বাণিজ্য পরিস্থিতি

শীর্ষ বিক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, ক্রেতা ভারত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৭ মার্চ ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিরোধ্য গতিতে অস্ত্র উৎপাদন করেই চলেছে। তাদের অস্ত্রে সৌদি আরব রক্তাক্ত করে তুলেছে ইয়েমেনকে। তাদের অস্ত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তা পাত্তাই দিচ্ছে না দেশটি। খবর ইন্টারনেট।  

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানিকারক এ দেশটি ভবিষ্যৎ অস্ত্র-বাজারেও নিরঙ্কুশ আধিপত্য অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে। সঙ্ঘাত ও সশস্ত্রীকরণসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরই) প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র বিক্রির ৫ শীর্ষ দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী বাকি ৪ সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। বিশ্বে অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জনে অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশটি।

এশিয়ার আরেক দেশ মিয়ানমারও রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চলমান থাকা অবস্থায় সব থেকে বেশি অস্ত্র কিনেছে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে। অস্ত্র আমদানিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ। ২০০৮ থেকে ২০১২-এর তুলনায় গত ৫ বছরে (২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত) ইউরোপ আর আফ্রিকায় অস্ত্র আমদানি কমেছে। তবে সামগ্রিক আমদানি-রফতানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক ও সমাজ বিশ্লেষকরা। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন তারা।

এসআইপিআরইর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জ্যান এলিয়াসন বলেন, অস্ত্র সরবরাহ এভাবে বাড়তে থাকলে তা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলবে। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে সমস্যাটির সমাধানে দরকার কার্যকর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ।

শীর্ষ ৫ বিক্রেতা দেশ

গত ৫ বছরে (২০১৩-২০১৭) বড় অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ৫টি অবস্থান নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্রের। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া দ্বিতীয়, ফ্রান্স তৃতীয়, জার্মানি চতুর্থ আর চীন রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে। গত ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী মোট রফতানির ৩৪ শতাংশই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। যা পূর্ববর্তী মেয়াদের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিক্রির পরিমাণ ৫৮ শতাংশ বেশি। ২০১৩-২০১৭ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ৯৮টি দেশে অস্ত্র রফতানি করে।

ওবামা প্রশাসনের ধারাবাহিকতায় অস্ত্র রফতানিকে আরো গতিশীল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিবর্তন এনেছেন বিক্রির ধরনেও। বিশ্লেষকদের মতে, অস্ত্র রফতানিতে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। ফলে এ ক্ষেত্রে তারা আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে।

আর্মস অ্যান্ড মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার প্রোগ্রামের পরিচালক ড. অডে ফ্লিউর্যান্ট বলেন, ১৯৯০ সালের পর ২০১৩-২০১৭ মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করে। আগের প্রশাসনের করা চুক্তি এবং ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া আরো কিছু বড় অস্ত্র চুক্তির কারণে সামনের বছরগুলোতেও অস্ত্র রফতানিতে শীর্ষে থাকবে দেশটি। ইতোমধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র-চুক্তি চূড়ান্ত করেছে তারা।

২০১৩-২০১৭ মেয়াদে অস্ত্র রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রাশিয়া। তবে আগের ৫ বছরের তুলনায় তাদের সরবরাহ কমেছে ৭.১ শতাংশ। ফ্রান্স তৃতীয় অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের রফতানি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চতুর্থ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ জার্মানি। তবে অস্ত্র রফতানি ২০০৮-২০১২ মেয়াদের তুলনায় ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে দেশটির। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অস্ত্র রফতানি বেড়েছে ১০৯ শতাংশ। পঞ্চম অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হলো চীন। ২০০৮-২০১২ সালের তুলনায় দেশটির অস্ত্র রফতানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ।

চীন সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করেছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সঙ্গে আলজেরিয়া ও বাংলাদেশেও চীনের সরবরাহ করা অস্ত্রের পরিমাণ বেড়েছে। গত ৫ বছরে ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের অস্ত্র রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে ৫৫ শতাংশ, ৬৫ শতাংশ এবং ১৪৫ শতাংশ।

শীর্ষ ৫ ক্রেতা দেশ

গত ৫ বছরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে ভারত। ওই মেয়াদে রফতানি হওয়া মোট অস্ত্রের ১২ শতাংশই কিনেছে দেশটি। এ ছাড়া দেশটিতে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ শতাংশ। ভারতকে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। আমদানিকৃত অস্ত্রের ৬২ শতাংশ কিনেছে মস্কোর কাছ থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আগের ৫ বছরের তুলনায় ভারতে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ৫৫৭ শতাংশ।

অন্যদিকে, ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান গত ৫ বছরে অস্ত্র আমদানি কমিয়েছে ৩৬ শতাংশ। তারপরও পাকিস্তানের আমদানি করা অস্ত্র ওই মেয়াদে বিশ্বের পুরো রফতানি হওয়া অস্ত্রের ২.৮ শতাংশ। সৌদি আরব পৃথিবীর দ্বিতীয় অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ওই মেয়াদে দেশটির অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ২২৫ শতাংশ। তৃতীয় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ মিসর। তাদের অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ২১৫ শতাংশ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত চতুর্থ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর ২১তম অবস্থান থেকে শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে ৫ম স্থানে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে ১৯৩ শতাংশ। ষষ্ঠ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়া।

আমদানি হ্রাস পেয়েছে ইউরোপ ও আফ্রিকায়

আফ্রিকার দেশগুলো অস্ত্র আমদানি কমিয়েছে ২২ শতাংশ। ওই মেয়াদে আফ্রিকায় যত অস্ত্র রফতানি হয়েছে তার ২২ শতাংশই গেছে আলজেরিয়ায়। তবে নাইজেরিয়ায় অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। ২০০৮-১২ মেয়াদের তুলনায় দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে অস্ত্র আমদানি কমেছে ২৯ শতাংশ। ভেনিজুয়েলা অস্ত্র আমদানি হ্রাস করেছে ৪০ শতাংশ। ইউরোপেও অস্ত্র আমদানি কমেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহ সম্পন্ন হলে আসছে বছরগুলোতে ইউরোপে অস্ত্র আমদানির পরিমাণ আবারো বাড়বে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads