• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

রাসায়নিক হামলা হলে আবারো অভিযানের হুমকি ট্রাম্পের

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০১৮

সিরিয়ায় আবারো রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটলে পুরোমাত্রায় হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। গত শনিবার সিরিয়ার দামেস্ক এবং হোমস শহরের সরকারি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র জোটের বিমানবাহিনীর হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই এমন মন্তব্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবারের টুইটবার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘গত রাতে পুরোপুরি সফল হামলা চালানো হয়েছে। ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যকে তাদের সেনাশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এ ছাড়া ভালো ফলাফল সম্ভব ছিল না। মিশন সম্পন্ন হয়েছে।’

আলজাজিরা সূত্রে জানা যায়, ওই দুই শহরের সরকারি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী শতাধিক বোমা হামলা চালিয়েছে। গত শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরি অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিক্কি হ্যালি বলেন, ‘সিরিয়ার প্রশাসন বিষাক্ত গ্যাস আবারো ব্যবহার করলে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় হামলা চালাবে।’ বিমান হামলায় দামেস্কের সিরিয়ান সায়েন্টিফিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, হোমসের হিম শিনসার কেমিক্যাল ওয়েপনস স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি এবং শিনসার কেমিক্যাল ওয়েপনস বাঙ্কার ফ্যাসিলিটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিশোধ হিসেবে নয় সিরিয়া যেন ভবিষ্যতে আর কেমিক্যাল হামলা চালাতে না পারে তাই এই হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানান নিক্কি হ্যালি।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ওই হামলার সমর্থন দানে জর্ডান, সৌদি আরব, সাইপ্রাস, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার প্রতি অহ্বান জানান। তবে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে ফোনালাপ হয়েছে। খুব জলদিই যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিপরীতে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভোটে শুধু রাশিয়া, চীন এবং বলিভিয়া সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র জোটের হামলার বিরোধিতা করে একটি প্রস্তাবনা আনে। আটটি দেশ ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং চারটি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘আজ আর দায়িত্ব এড়ানোর উপায় নেই। গোটা বিশ্ব আপনাদের দিকে তাকিয়ে। একটা নীতিগত অবস্থান নিন আপনারা।’

অরগানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপনস (ওপিসিডব্লিউ) দলের পরিদর্শক দল গত শনিবার কেমিক্যাল হামলা তদন্তে সিরিয়া পৌঁছেছে। সিরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একই দিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় বৈঠকে বসে ওই পরিদর্শক দল। এখন পর্যন্ত পরিদর্শক দল কেমিক্যাল হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু সিনিয়র কর্মকর্তা ক্লোরিন এবং সারিন গ্যাস হামলার জন্য আসাদ সরকারকেই দায়ী করেন। নিরাপত্তা পরিষদে ফ্রান্সের প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালায় জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই ওপিসিডব্লিউর পরিদর্শক দলকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হতে পারে।

ওপিসিডব্লিউর তদন্ত দল প্রশ্নবিদ্ধ

দামেস্কে অবস্থানরত ওপিসিডব্লিউর পরিদর্শক দলের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র জোটের সিরিয়া হামলা। দৌমায় গত ৭ এপ্রিলের কেমিক্যাল হামলা তদন্ত করতে সংস্থাটির সদস্যরা যখন দামেস্ক সফর করছেন ঠিক তখনই হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র জোট। অথচ এখনো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিশ্চিত হতে পারেনি ওই হামলার পেছনে কোন পক্ষ জড়িত। এমনকি হামলায় নির্দিষ্ট কোন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে তাও এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। যদিও শুরু থেকেই ফ্রান্স প্রশাসন বলে আসছে তাদের কাছে হামলায় আসাদ সরকারের জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্য এখনো দেখাতে পারেনি দেশটি। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া গোড়া থেকেই এই কেমিক্যাল হামলাকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের সাজানো নাটক বলে অভিহিত করে।

১৯২টি জাতির সমন্বয়ে ১৯৯২ সালে গঠিত হয়েছিল ওপিসিডব্লিউ। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সংস্থাটি ২০১৪ সালে সিরিয়ায় ব্যাপক কেমিক্যাল অস্ত্র ধ্বংস প্রকল্পের তদারকি করেছিল। সে সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে সিরিয়াকে কেমিক্যাল অস্ত্রমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে সিরিয়ার খান শেখুনে অপর এক কেমিক্যাল হামলার তদন্তও করেছিল সংস্থাটি, যদিও সেই তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু খান শেখুনের ওই হামলার পরেই ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছিল। এত অস্পষ্টতার মাঝেও সাম্প্রতিক হামলার জন্য বাশার প্রশাসনকে দায়ী করার ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ওপিসিডব্লিউর কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads