• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

বিদেশ

দৌমার ধ্বংসস্তূপে সত্যের সন্ধান

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০১৮

একটি বিধ্বস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত অ্যাপার্টমেন্টের সারি আর ভূগর্ভস্থ ক্লিনিকের শহর দৌমা। গত সপ্তাহে পশ্চিমা তিনটি শক্তিশালী দেশের কল্যাণে এই যন্ত্রণাকাতর দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। শহরে সবুজ আচ্ছাদন পরিহিত এক পরিচিত ডাক্তারকে সেখানকার একটি ক্লিনিকে পেয়েছিলাম। তিনি আনন্দের সঙ্গে আমাকে জানিয়েছিলেন যে, বিশ্বকে ভয়ঙ্কর অস্বস্তিতে ফেলা ‘গ্যাস’ ভিডিওগুলো নানান সন্দেহ সত্ত্বেও পুরোপুরি সত্য। যদিও যুদ্ধের গল্পের অন্ধকার দিক আছেই। ৫৮ বছর বয়সী ওই একই ডাক্তার এরপর তার বক্তব্যে যা যোগ করলেন তা রীতিমতো অস্বস্তিকর। তিনি বললেন, রোগীদের নিঃশ্বাস নিতে কোনো গ্যাসের জন্য কষ্ট হচ্ছিল না, কষ্ট হচ্ছিল অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে। ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ধুলাবালির মধ্যে টানা এক রাত থাকার ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।

ডা. অসিম রাহিবানি যখন এমন উপসংহার টানেন, তখন দেখতে হয় তিনি দায়িত্ব নিয়েই বলছেন। তিনি পরিষ্কার ইংরেজিতে কথা বলেন এবং কথার মধ্যে দুবার দৌমার জইশ আল ইসলামের দুই জিহাদিকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দেন। সাধারণত সিরিয়ার শাসকযন্ত্র এই শব্দ ছাড়াও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলেই এই শব্দটি ব্যবহূত হয়। আমি কি ঠিক শুনছি? ঘটনার কোন সংস্করণ আমরা বিশ্বাস করব?

দুর্ভাগ্যবশত ৭ এপ্রিলের রাতে দামেস্কে যে ডাক্তাররা কর্তব্যরত ছিলেন তারাই রাসায়নিক অস্ত্র তদন্তে প্রমাণ দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহগুলোতে তাদের দেওয়া প্রমাণ নিশ্চয়ই একটি নির্দিষ্ট উত্তর দেবে। দৌমায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের ‘প্রমাণ’ আছে এমন দাবি করেছে ফ্রান্স। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলো মৃতদের প্রসাব এবং রক্তের নমুনার বরাত দিয়েও একই দাবি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন সংস্থাগুলো পাঁচ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে- যাদের শরীরে ‘বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র’ প্রয়োগের সঙ্গতিপূর্ণ লক্ষণ এবং উপসর্গ উপস্থিত আছে। আমি ধ্বংস্তূপের বহু বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তারা গ্যাস হামলার কথা বিশ্বাস করে না। বিভিন্ন ইসলামিস্ট গ্রুপগুলো এমন কথা প্রায়ই ছড়ায় বলে তাদের দাবি। দৌমার গল্পটা শুধু গ্যাসের নয়। যে কয়েক হাজার বাসিন্দা শহর ছাড়েনি গল্পটা তাদের। সেখানে বসবাসরতরা আমার মতো একজন বিদেশিকে দেখে অনায়াসে হেসেছিল। অবশ্যই তারা সুখী এই ভেবে যে, শেষমেশ এই অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হয়েছে।

ডা. রাহিবানি বলেন, ‘রাতে আমাদের বাড়ি থেকে তিনশ’ মিটার দূরের বেজমেন্টে পরিবারের সঙ্গেই ছিলাম আমি। কী ঘটছে তা সব ডাক্তারই জানতেন। সারারাত দৌমার আকাশে সরকারি বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। বাতাস এবং প্রচুর ধুলা আসতে থাকে বেজমেন্টে এবং সেলারগুলোতে। আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা হায়পক্সিয়া এবং অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগতে শুরু করে। হঠাৎ এক ‘সাদা হেলমেটধারী’ বেজমেন্টের সামনে এসে ‘গ্যাস’ বলে চিৎকার করলে আতঙ্ক ছড়ায়। মানুষ একে অপরের দিকে পানি ছুড়তে থাকে। হ্যাঁ, ভিডিওটা এখানেই করা হয়েছিল- এটা সত্যি। কিন্তু এখানকার মানুষ হায়পক্সিয়ায় কষ্ট পাচ্ছিল, বিষাক্ত গ্যাসের কারণে নয়।’

দৌমার বাসিন্দা হুসাম এবং নাজির আবু আইশাকে যখন বললাম ওই রাতের হামলায় ৪৩ মানুষ মারা গিয়েছিল। এ কথা শুনে তারা হেসে দেন। যুদ্ধের সময়ও এই সাদা হেলমেট ব্যবহার করা হয়। বিদেশি সংস্থাগুলো সাদা হেলমেটধারী চিকিৎসা সহায়তাকারীদের অর্থায়ন করে। রাহিবানির ক্লিনিকের কাছেই এমন একটি অফিসের রুমে গ্যাস মাস্ক, খাবারের কন্টেইনার এবং অনেক সেনা পোশাক দেখতে পাই। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করছিলাম, এগুলো সব সাজিয়ে রাখা হয়নি তো?

-রবার্ট ফিস্ক, মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাংবাদিক।

ঈষৎ সংক্ষেপিত

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads