• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

কিউবার গেরিলা প্রজন্ম পরবর্তী উত্তরসূরি দিয়াজ-কানেল

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৮

কিউবার বিপ্লব পরবর্তী ক্যাস্ত্রো যুগের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মিগেল দিয়াজ-কানেল। গত বুধবারের অধিবেশনে দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যরা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দিয়াজ-কানেলকেই বেছে নিয়েছেন। মনোনয়ন প্রশ্নে ভোটাভুটি শেষে স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার কথা বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে।

গত মাসে নির্বাচিত ৬০৫ সাংসদ গত বুধবার হাভানার কনভেনশন সেন্টারের অধিবেশনে নতুন প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ৩০ স্টেট কাউন্সিলরও নির্বাচিত করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এ কাউন্সিলররাই দেশটির প্রতিনিধিত্ব করবেন।

প্রেসিডেন্ট পদে দিয়াজ-কানেল বসলেও আগামী ২০২১ সালের পরবর্তী কংগ্রেস পর্যন্ত পলিটব্যুরোর প্রধান থাকবেন রাউল ক্যাস্ত্রো। পলিটব্যুরোই ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিকে নীতিগত দিকনির্দেশনা দেয়। এর দ্বিতীয় প্রধান হলেন গেরিলা যুগের আরেক বিপ্লবী ভেনচুরা। আর তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হবেন প্রেসিডেন্ট। ফলে ক্যাস্ত্রো যুগের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাবে এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

প্রায় চার দশক পর কিউবার প্রেসিডেন্ট পদে ক্যাস্ত্রো পরিবারের বাইরের কেউ ক্ষমতায় বসছেন। তবে এর মানে এই নয়, দেশটির জনগণ ক্যাস্ত্রো শাসনকে অপছন্দ করেছেন। আন্তর্জাতিক অবরোধের কারণে ভয়াবহ রকমের অর্থনৈতিক সঙ্কটে থাকা কিউবায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী আমদানি করতে হয়। এ অবস্থার মধ্যেও কিউবা চিকিৎসা খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। দেশটিতে ধনকুবেরের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় পৌঁছলেও মাথাপিছু গড় আয়, শিক্ষার হার, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নাগরিক জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়নের সত্যতা কিউবার শত্রুরাও স্বীকার করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা উত্তরণে ২০০৮ সালে ফিদেলের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নসহ অভ্যন্তরীণ খাতে বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম করেছিলেন রাউল। তার সময়েই কিউবার পর্যটন খাত নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো হয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে হ্যারিকেন ইরমার আঘাতে কিউবার পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অর্থনীতি আরো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে; বাজেট ঘাটতি জিডিপির ১২ শতাংশে নেমে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৫ সালের তুলনায় কিউবার গড় আয় এক-তৃতীয়াংশ ছোট হয়েছে। বর্তমানে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের মাসিক গড় আয় ৩০ ডলার। চাকরির বাজার ছোট হয়ে আসার কারণে তরুণদের একাংশ দেশ ছেড়ে বাইরে বের হয়ে যেতে চাইছে।

তুলনামূলক তরুণ এ নেতাকে রাউলের শুরু করা অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াসহ প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এটা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কিউবানদের ওপর নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করেন। ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে রাউল ক্যাস্ত্রো সরকারের বেশকিছু চুক্তির আওতায় পর্যটনের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা এবং বাণিজ্য খাত সম্প্রসারিত হয়েছে। এ সময় ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে কিউবার গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত হন মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকরা। বিপুলসংখ্যক মার্কিন পর্যটক বেড়াতে যান দ্বীপ দেশটিতে। কিন্তু এসব কিছুই আবারো নতুন করে হুমকির মুখে পড়ে ট্রাম্পের নতুন নীতির ফলে। যদিও কিউবার দূতাবাস বন্ধ করা হয়নি।

এ অবস্থায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক কীভাবে বাড়াবেন সেটা নতুন প্রেসিডেন্টের কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সংস্কারের ক্ষেত্রে দিয়াস-কানেল চীন ও ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির শাসনব্যবস্থাকে অনুসরণ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়েও বাজার মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং নাগরিকদের নিজেদের সমৃদ্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে কিউবার রাজনীতিকরা মনে করেন, এ ব্যবস্থা তাদের দেশকে ধনী মার্কিনিদের জন্য সস্তায় পণ্য তৈরির দেশে পরিণত করতে পারে।

দিয়াস-কানেলের পরিচয়

১৯৬০ সালে জন্ম মিগেল তরুণ বয়সেই যোগ দেন সান্তা ক্লারার ইয়ং কমিউনিস্ট লিগে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল পড়ানোর সময় থেকে তার বিকাশ দৃশ্যমান হতে থাকে। ৩৩ বছর বয়সে তিনি ইয়ং কমিউনিস্ট লিগের দ্বিতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন। মিগেলের ‘মতাদর্শগত দৃঢ়তা’র প্রশংসা শোনা গেছে রাউলের কণ্ঠেও। উদার ও সাদাসিধে জীবন-যাপনের জন্য ক্যাস্ত্রোদের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে সবারই বেশ পছন্দ। নিজ এলাকা কিউবার কেন্দ্রীয় প্রদেশ ভিল্লা ক্লারায় তিনি অফিসের গাড়ির পরিবর্তে বাইসাইকেলে চলাচল করতেন। গতবারও দেশটির একদলীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি অন্য ভোটারের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছিলেন। উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত এই নেতা সমকামীদের অধিকার দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন চালিয়েছেন। ২০১৩ সালে কিছু শিক্ষার্থী ব্লগে সরকারের সমালোচনা করায় ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ওই সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে সমর্থন জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads