• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

কিম-মুন বৈঠক

আশার আলো দেখছেন বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যরা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০১৮

দুই কোরিয়ার ১০ হাজারের অধিক বাসিন্দা কিম জং উন এবং মুন জায়ে ইনের মধ্যকার আসন্ন সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছেন। আগামী শুক্রবারের এই সম্মেলন সফল হলে ১৯৫৩ সালের পর আবারো দুই কোরিয়ার বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যরা মিলিত হতে পারবেন বলে আশা জেগেছে। কোরীয় যুদ্ধের সময় পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশেরই বয়স এখন আশি এবং নব্বই বছরের মধ্যে। এই বয়সে এসে শেষবারের মতো পরিবারের সদ্যদের একবার দেখতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নই এখন সম্মেলনকে ঘিরে আসছে বারবার। সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে দুই কোরিয়ার পক্ষ থেকে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

সর্বশেষ গত সোমবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের সীমান্ত থেকে উত্তর কোরিয়াকে বিরক্ত করার কাজে ব্যবহূত বিপুলসংখ্যক মাইক বন্ধ করে দিয়েছে। ওই মাইক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন ব্যান্ডের গান থেকে শুরু করে অনেক সংবাদও প্রচার করা হতো। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ মনে করছে, মাইক বন্ধ করার ফলে আগামী শুক্রবারের সম্মেলনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাংবাদিকদের দক্ষিণ কোরীয় মুখপাত্র চই হই হুয়ান জানান, ‘আমরা আশা করছি এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই কোরিয়া একে অপরের সমালোচনা ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ করবে এবং শান্তি ও এক নতুন দিগন্তের সূচনায় এগিয়ে আসবে।’

বর্তমানে দক্ষিণ কোরীয় মুন কুকের বয়স ৮৭। ১৯৫০ সালের দিকে মাত্র ১৯ বছর বয়সে পিতা-মাতা ও দুই ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি। সেই থেকে তিনি আজ পর্যন্ত তার পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখতে পাননি। সিএনএনকে নিজের অনুভূতি প্রকাশে বলেন, ‘আগে উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যে যোগাযোগ হতো। উত্তর কোরিয়ায় আমার ভাইদের জন্য আমি পুরনো কাপড় সংগ্রহ করতাম দেওয়ার জন্য, কিন্তু শেষমেষ সেই কাপড় ফেলে দিতে হয় আমাকে।’

সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩১ হাজার ৪৪৭ জন দক্ষিণ কোরীয় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন বলে নথিভুক্ত আছে। এই নথিভুক্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৭৩ হাজার ৬১১ জন মারা গেছেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিকরা দুই দেশের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারবর্গের মধ্যে পুনর্মিলনের কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট যিনি নিজেও এমন বিচ্ছিন্ন পরিবার থেকে আসা, তার আমলেই এই পুনর্মিলন বিষয়টি ত্বরান্বিত হচ্ছে।

কয়েক সপ্তাহ আগেই উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন তার দেশের সমান্তরাল উন্নয়ন নীতিমালা থেকে সরে আসেন। পরমাণু প্রকল্প বন্ধ ঘোষণা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকেও জোর দেন তিনি। কিমের এমন ঘোষণাকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন কোরিয়ান উপদ্বীপের জন্য ইতিবাচক বলে আখ্যা দিয়েছেন। ফলে আগামী শুক্রবার পানমুনজমে গত এক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম দুই দেশের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনের সফলতার ওপর নির্ভর করছে নিকট ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া সম্মেলন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জুন মাস নাগাদ ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

মুন কুকের মতো অনেক বৃদ্ধই গুগল আর্থের স্যাটেলাইট ইমেজ দিয়ে নিজেদের ফেলে আসা গ্রাম, শহর দেখে মনকে সান্ত্বনা দেন। অনেক ক্ষেত্রেই তারা সেই আগের মানচিত্র খুঁজে পান না, হয়তো ফেলে আসা স্কুলের মাঠ এখন সেনাছাউনি। প্রত্যেকদিন ফেলে আসা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মৃত্যুর আগে একবার দেখা করার আশা নিয়ে বেঁচে আছেন তারা। সবাই তাই আগামী শুক্রবারের সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads