• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

প্রতীকী ছবি

বিদেশ

আলজাজিরার বিশেষ প্রতিবেদন

যেভাবে গুপ্তহত্যা চালায় মোসাদ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০১৮

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ফিলিস্তিনি শিক্ষাবিদ ফাদি আল বাতসের হত্যাকাণ্ডের পর সন্দেহের তীর এখন ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দিকে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে এনেছে আরব বিশ্বে মোসাদের গুপ্তহত্যার বিস্তারিত প্রক্রিয়া।

গত শনিবার কুয়ালালামপুরের বাসা থেকে ফজরের নামাজ পড়তে বের হলে দুই মোটরসাইকেল আরোহীর ছোড়া গুলিতে নিহত হন আল বাতস। ইসরাইলের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার অন্যতম বিশেষজ্ঞ রনেন বার্গম্যান আলজাজিরার কাছে দাবি করেছেন, আল বাতসের হত্যাকাণ্ড মোসাদের অভিযানের যাবতীয় চিহ্ন বহন করছে। বার্গম্যান টেলিফোনে আলজাজিরাকে বলেন, হত্যাকারীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে তাদের লক্ষ্যবস্তুকে হত্যা করেছে। একই রকমভাবে আগেও মোসাদ বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছে। তার মতে, হত্যার পর সাধারণের মধ্যে মিশে যাওয়া, ইসরাইল থেকে বহু দূরে পেশাদার হত্যাকাণ্ড ঘটানো মোসাদের জড়িত থাকারই ইঙ্গিত দেয়।

আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, মোসাদ প্রথমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইসরাইলের বৃহত্তম গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং ইসরাইলি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে হত্যার টার্গেট নির্ধারণ করে। কখনো কখনো ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ ও সামরিক বাহিনীও লক্ষ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে আল বাতসকে হয়তো লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে হামাসকে অনুসরণকারী ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা সংগঠনের মাধ্যমে। এ ছাড়া বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ইসরাইলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও ইসরাইলি গোয়েন্দা অপারেশনের মধ্য দিয়েও তাকে লক্ষ্য হিসেবে নির্বাচন করা হয়ে থাকতে পারে। সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলছে, গাজা থেকে হামাসের সঙ্গে তুরস্কের ইস্তাম্বুল এবং লেবাননের বৈরুতে হওয়া যোগাযোগ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখে ইসরাইলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক।

এরপর টার্গেটকৃত ব্যক্তির যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্য মূল্যায়ন করে। কাউকে হত্যা করা হবে কি না, হত্যা করলে লাভ কী হবে আর এটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী এসব দিক খতিয়ে দেখা হয় সেই মূল্যায়নে। মোসাদের বিশেষজ্ঞ ইউনিট তৈরি করা ফাইলের কাজ শেষ করে ফলাফল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস কমিটির প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরাইলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানকে নিয়ে গঠিত এই কমিটির নাম ভারাস।

তবে অভিযান অনুমতি দেওয়ার আইনগত ক্ষমতা নেই এই কমিটির। একমাত্র ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীরই এই ক্ষমতা রয়েছে। বার্গম্যান আলজাজিরাকে বলেন, সাধারণত রাজনৈতিক কারণে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ওই কমিটিকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন দেন না। প্রায়শই প্রধানমন্ত্রী এক বা দু’জন মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। প্রায়ই এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে থাকেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অভিযান অনুমোদন পেয়ে গেলে এর দায়িত্ব আবারো মোসাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। পরিকল্পনা সফল করতে কখনো কখনো সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।

মোসাদের অভ্যন্তরীণ একটি ইউনিট ক্যাসেরিয়াই বাকি কাজ সম্পন্ন করে। প্রধানত গুপ্ত অভিযান পরিচালনার স্বার্থে ’৭০-এর দশকে গঠিত এই ইউনিট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গোয়েন্দা মোতায়েন ও পরিচালনা করে থাকে। ক্যাসেরিয়া তার গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্ভাব্য লক্ষ্য সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এরপর গুপ্তহত্যা ও আত্মঘাতী অভিযানের বিশেষজ্ঞ পেশাদার হত্যাকারী নিয়োগ করা হয়। হত্যার কাজগুলো করে কিডোন ইউনিটের সদস্যরা। সাধারণত ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখা থেকে কিডোনের সদস্যদের নির্বাচন করা হয়। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, কুয়ালালামপুরে যারা আল বাতসকে হত্যা করেছে তাদের কিডোনের সদস্য বলে মনে হয়েছে।

মোসাদের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বার্গম্যানের সাড়া জাগানো বই রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে অধিকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনি জাতিমুক্তি আন্দোলন দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল ৫ শতাধিক গুপ্তহত্যার অভিযান চালিয়ে এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। আর দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়ে ইসরাইল এক হাজারের বেশি অভিযান চালিয়েছে তার মধ্যে ১৬৮টি সফল। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল গাজা উপত্যকার ভেতর বাইরে হামাসের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বকে হত্যা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads