ইরাকে সাধারণ নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্যের পর নতুন সরকার গঠনে কাজ শুরু করেছে মোকতাদা আল-সদরের নেতৃত্বাধীন জোট। গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণায় সদরের সাইরুন জোটকে বিজয়ী ঘোষণা করে। খবর বিবিসি।
ভোটের অনুপাত অনুযায়ী পার্লামেন্টের ৩২৯ আসনের মধ্যে সাইরুন জোট পেয়েছে ৫৪টি আসন। ইরান সমর্থিত হাদি আল আমিরির আল-ফাতিহ জোট ৪৭ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ৪২ আসন নিয়ে এরপরই আছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির ভিক্টরি অ্যালায়েন্স। সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করতে হলে কোনো দল বা জোটকে সংসদের অর্ধেকের বেশি আসনে জয়ী হতে হবে। এই নির্বাচনে কোনো জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন করতে হলে হবে কমিউনিস্ট ও ধর্মনিরপেক্ষদের নিয়ে গঠিত সাইরুন জোটকে অন্যান্য জোটের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হবে।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এক টুইট বার্তায় সদর বলেন, সংস্কার জয়ী হয়েছে, দুর্নীতি পরাজিত। নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সদর নিজে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে তার জোটই সরকার গড়লে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নির্ধারণে বড় ভূমিকা থাকবে এ ধর্মীয় নেতার। নিজেকে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচয় দেওয়া শিয়া নেতা সদরের সঙ্গে ইরানের দূরত্ব আছে বলেই মনে করে কোনো কোনো গণমাধ্যম।
নির্বাচনের আগে ইরান ঘোষণা দিয়েছিল, ইরাকে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থিদের সরকার গঠন করতে দেওয়া হবে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও সরকারের অকার্যকর শাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের কারণেই এবারের নির্বাচনে তরুণ ও দরিদ্ররা সাইরুন জোটের পক্ষ নিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় তেলের কম দামের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে যুদ্ধে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোয় স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গড়তে অন্যদেরও বড় সমর্থন লাগবে সাইরুন জোটের। সংবিধান অনুযায়ী ফল ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যেই নতুন সরকার দায়িত্ব নেবে।
নির্বাচনে খারাপ ফল করলেও দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয় দেশেরই বিরল মিত্রদের একজন হায়দার আল আবাদি। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নেওয়া আবাদি জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে মোকাবেলায় ইরান সমর্থিত শিয়া আধাসামরিক বাহিনীগুলোকে দেশজুড়ে অবাধে বিচরণেরও সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইরাকে সবচেয়ে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত হাদি আল-আমিরিও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। নির্বাচনে তার জোট ফাতিহ দ্বিতীয় হলেও অন্যদের সঙ্গে দেনদরবার করে সরকার গড়ার সুযোগ পেতে পারেন তিনি।
তবে যেই দল বা জোটই ক্ষমতায় আসুক, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে মোকাবেলা করে এগোতে হবে। ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে হওয়া ছয় বিশ্বশক্তির ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তেহরান ও ওয়াশিংটনের সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে ইরাক মঞ্চে পরিণত হতে পারে বলেও শঙ্কা অনেক ইরাকির।