সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জন উন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি যৌথ ঘোষণায় সই করেছেন। তবে কোন কোন বিষয়ে তারা একমত তা নিয়ে রহস্য রয়েছে গেছে। তবে বৈঠকের পর বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুদেশের মধ্যে নতুনভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী ট্রাম্প ও কিম।
সিঙ্গাপুরের স্যান্টোস দ্বীপের বিলাসবহুল কাপেলা হোটেলে মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে কিম বলেছেন, ‘বিশ্ব ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাবে’। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম এএফপি'র তথ্য অনুযায়ী, মি. কিম কোরিয় উপদ্বীপে 'পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ'এর অঙ্গীকার করেছেন।
বৈঠক শুরুর প্রাক্কালে এই দুই নেতা ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দেন। তা হলো ‘ঐতিহাসিক করমর্দন’।
বিবিসি'র লওরা বিকারে'র মতে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের প্রধান চারটি পয়েন্ট:
যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া নতুনভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হবে, যাতে দুই দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও উন্নতির বিষয়টি প্রতিফলিত হবে।
কোরিয় উপদ্বীপে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে যৌথভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।
২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল পানমুনজাম বিবৃতিতে কোরিয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার রক্ষা করবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া যুদ্ধবন্দীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভূমিকা রাখবে এবং এরই মধ্যে যেসব যুদ্ধবন্দী চিহ্নিত হয়েছেন তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অতিস্বত্তর শুরু করবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিক সাক্ষাতের শুরুর পর্বে হোটেলের দুই পাশ থেকে দুই নেতা হেঁটে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার পতাকা দিয়ে সজ্জিত একটি দৃশ্যপটের সামনে প্রথমবারের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে দৃঢ়ভাবে করমর্দন করেন। এর মাধ্যমে এই দু’জনের মধ্যে এতোদিনের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের অবসান ঘটলো বলেই বিশ্বাস করছেন বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষকরা।
উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সত্যি গর্ব অনুভব করছি। আমরা মহৎ একটি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি এবং তা ব্যাপকভাবে সফল হবে বলে আশা করছি। আমার ধারণা এটি সত্যিই সফল হতে যাচ্ছে এবং আমাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক হবে, আমার কোনো সন্দেহ নেই।’
উত্তরে কিম বলেন, ‘খুব ভালো, এ পর্যন্ত আসাটা সহজ ছিল না। অতীতে আমাদের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা বসানো ছিল, কিন্তু আমরা সেগুলো সব অতিক্রম করেছি এবং আজ আমরা এখানে।’
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা হাসি দিয়ে করমর্দন করে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য বিনিময় করে বৈঠকের পরিবেশে একটি আশাবাদের আবহ তৈরি করেন।
এরপর কিমকে পথ দেখিয়ে কাপেলা হোটেলের পাঠাগারের দিকে নিয়ে যান ট্রাম্প, সেখানে শুধু দোষাভীদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেন তারা।প্রায় আধ ঘন্টা ধরে কথাবার্তা বলার পর ট্রাম্প ও কিম আবার দেখা দেন। হোটেলের বারান্দা দিয়ে পাশাপাশি হাঁটেন, তারপর আবার বৈঠক কক্ষে ঢুকে যান। সেখানে তারা তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন।
বারান্দায় হাঁটার সময় দোভাষীর মাধ্যমে কিম ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমার ধারণা পুরো বিশ্ব এই মূহুর্তটি দেখছে। বিশ্বের অনেক মানুষ এই দৃশ্যকে উদ্ভট কল্পনা, সায়েন্স ফিকশন মুভি বলে মনে করবে।‘
দুই নেতার ঐতিহাসিক মুখোমুখি বৈঠক ৪০ মিনিটেরও কম সময় স্থায়ী হয়। স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় কিম সিঙ্গাপুর ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউসের তথ্য মতে, ট্রাম্প ও কিমের বৈঠকের ব্যাপ্তি ছিল ৩৮ মিনিট।