• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
দুই পদাতিক ডিভিশনের অভিযানে  দেশছাড়া ৭ লাখ রোহিঙ্গা

রাখাইনে তাদের নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছে যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ

ছবি : ইন্টারনেট

বিদেশ

দুই পদাতিক ডিভিশনের অভিযানে দেশছাড়া ৭ লাখ রোহিঙ্গা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৮ জুন ২০১৮

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন ও ৭ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে সেনাবাহিনীর দুটি পতাদিক ডিভিশন। রাখাইনে তাদের নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছে যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ। রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল বুধবার চ্যানেল নিউজ এশিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক ডিভিশন রোহিঙ্গাবিরোধী ওই অভিযানটি চালায়।  পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী, রাখাইনের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী, নিরাপত্তারক্ষী ও সেনাসদস্যদের  সাক্ষাৎকারে এই দুই ডিভিশনের হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের কথা উঠে এসেছে। ওই দুই বাহিনী যা করেছে, তার সার্বিক নির্দেশনা এসেছে সেখানকার শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে থেকে। তাকেই নিধনযজ্ঞের নেপথ্য কারিগর আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

মিয়ানমারের এই দুই লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর নির্মম বিচ্ছিন্নতা দমন অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডা সর্বশেষ যে ৭ জন জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার মধ্যে ডিভিশন দুটির প্রধানরাও রয়েছেন। মিয়ানমারের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশ সক্রিয় দেশটির সেনাবাহিনী এমনিতেই তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে চরম গোপনীয়তা বজায় রাখে। আরসার হামলা পরবর্তী অভিযান নিয়েও তারা বেশ গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বিষয় দাবি করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদেরও রাখাইনে যেতে দেয়নি তারা।

রয়টার্স এ প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ওপরও নির্ভর করেছে। গত বছর আরসার হামলার আগে-পরে পদাতিক ডিভিশন দুটির সদস্যদের বিভিন্ন পোস্টে অভিযানের নানা অংশ এবং রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে তাদের মনোভাবের ছবিও ফুটে ওঠে। এদেরই একজন লেফটেন্যান্ট কেয়ি নিয়ান লিন। আগস্টের শুরুতেই আরো শতাধিক সৈন্যের সঙ্গে রাখাইনে যান ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এ তরুণ কর্মকর্তা।

১০ অগাস্টে দেওয়া পোস্টে ২৪ বছর বয়সী লিন লেখেন, বিমানের ভেতরে খাওয়ার জন্য কেক পেয়েছি আমরা। তোমরা কি বাঙালিদের মাংস খেতে যাচ্ছ? ওই পোস্টেই মন্তব্য করেন এক বন্ধু। (মিয়ানমারের অনেকেই রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বা আরো নিন্দাসূচক অভিধা ‘কালার’ বলে ডাকে)। ওই লেফটেন্যান্ট জবাব দেন, হোয়াটএভার ম্যান। কালারদের গুঁড়িয়ে দাও দোস্ত, আর্জি জানায় আরেক বন্ধু। লিনের জবাব ছিল ‘অবশ্যই’।  ফেসবুকে তিনি মাই নুয়াং লিন নামে পরিচিত।

দুই সপ্তাহ পর লিনদের ইউনিটের ধারাবাহিক অভিযান লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করে। ঠেলে দেয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। জাতিসংঘ এ ঘটনাকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে সেনাবাহিনীর ওই পদক্ষেপ ছিল রোহিঙ্গা নির্মূলে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। যদিও বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। লিনও বলেন, আরসার হামলার শিকার হওয়ার পরই তারা পাল্টা অভিযানে নামে। তারাই প্রথমে আমাদের আতঙ্কিত করেছিল। এর পর তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। যখন অভিযানে নামি, তখন গ্রামের সবাই পালিয়ে যায়। কোনো হত্যাযজ্ঞ বা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলেও জানান এ লেফটেন্যান্ট।

জাতিগত সহিংসতার কারণে রাখাইন আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল। রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনের বৌদ্ধদের মধ্যে প্রায়ই নানা রকম দ্বন্দ্ব-সংঘাত হচ্ছিল। ২০১৬ সাল থেকে সেখানে তৎপরতা বেড়েছিল নিরাপত্তারক্ষীদেরও। এরই ধারাবাহিকতায়ই ২০১৭ সালের আগস্টের শুরুতে রাখাইনে মোতায়েন করা হয় ৩৩ ও ৯৯ পদাতিক বাহিনীর সদস্যদের। সেসময় ফেসবুকে দেওয়া সৈন্যদের ছবিগুলোয় তাদের রাখাইনের সিটুই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে ও নৌকা বোঝাই হতে দেখা গেছে।

যদিও নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সুচির সরকার তখন জানিয়েছিল, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, মানবাধিকার লঙ্ঘনে দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত ডিভিশন দুটির সদস্যদের উপস্থিতি সেখানে উল্টো ঘটনা ঘটিয়েছিল। তারা উত্তপ্ত অঞ্চলটিকে আরো অসহিষ্ণু করে তুলেছিল, বাড়াচ্ছিল উত্তেজনা। ফেসবুকে দেওয়া ছবিতে যেসব এয়ারক্রাফট ও নৌকা দেখা গেছে তাতে মিয়ানমারের বিমান, নৌ ও সামরিকবাহিনীর যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন মিলিটারি কমান্ড স্ট্রাকচার বিষয়ক তিন বিশেষজ্ঞ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads