• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
‘যথাযথ’ ভিসা ছিল না কার্লাইলের: ভারত

ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড আলেক্সান্ডার কার্লাইল

ছবি: ইন্টারনেট

বিদেশ

‘যথাযথ’ ভিসা ছিল না কার্লাইলের: ভারত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড আলেক্সান্ডার কার্লাইলকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ব্যাখ্যায় নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তার ভিসার সঙ্গে তৎপরতা সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। তাই তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে লন্ডন থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান কার্লাইল। দিল্লি বিমানবন্দর থেকেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আজ শুক্রবার নয়া দিল্লিতে ‘ফরেন করেসপন্ডেন্ট ক্লাবে’ খালেদার দ- নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা ছিল কার্লাইলের।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যথাযথ ভিসা না থাকায়’ বিমানবন্দর থেকে ব্রিটিশ এমপিকে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, যে কারণ দেখিয়ে তিনি ভিসার আবেদন করেছিলেন তার সঙ্গে তার তৎপরতা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণে বিমানবন্দরে পৌঁছানের পর তাকে ভারতে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্লাইল ভারতে ঢুকতে না পেরে লন্ডনে ফিরে ভিডিও কনফারেন্সে দিল্লির সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে এ ব্যাপারে তাদের তীব্র আপত্তির কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন। কার্লাইলের ভাষ্য, ‘আমি যখন দিল্লিতে নেমে আমার ফোন অন করলাম, দেখি আমার ভিসা বাতিল করা হচ্ছে বলে আমাকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আমাকে জানানো হলো আমাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কী, ইমিগ্রেশনের কর্মীরা খুবই ভদ্র ও বিনীত ছিলেন, তারা আমার সঙ্গে এমনিতে খুবই সুন্দর আচরণ করেছেন। কিন্তু তাদের কাছে কোনো জবাবই ছিল না যে কেন আমাকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
লর্ড কার্লাইলের ভিডিও বক্তব্যের পর পরই ভারতও ব্যাখ্যা দেয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানান, লর্ড কার্লাইল যে কারণ দেখিয়ে ভিসার আবেদন করেছিলেন - আর তার সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য-এসবের মধ্যে কোনো সাযুজ্য নেই বলেই আমরা তার ভিসা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে তিনি আরো বলেন, লর্ড কার্লাইল ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন- এমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। এমনকি তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধী দলের (বিএনপি) সম্পর্কেও সন্দেহ সৃষ্টি করতে চাইছেন বলে রবীশ কুমার দাবি করেন। ওই মুখপাত্র আরো জানান, লর্ড কার্লাইল খুব ভালো করেই জানতেন তাকে ফিরে যেতে হবে- সে কারণেই তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানের 'রিটার্ন বোর্ডিং পাস' নিয়েই এসেছিলেন।
যদিও এই যুক্তির সঙ্গে ব্রিটিশ আইনসভার প্রবীণ সদস্য কার্লাইল একেবারেই একমত নন। লন্ডন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বলছিলেন, হিথরোতে তার ভারতীয় ভিসা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অন্তত দুবার চেক করা হয়েছিল- কিন্তু তাতে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি। ভারত সরকারকে রাজি করিয়ে দিল্লিতে ঢোকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সে জন্য লর্ড কার্লাইল দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনারকেও ফোন করেছিলেন। কিন্তু লর্ড কার্লাইলের দাবি অনুযায়ী, তিনিও এ ব্যাপারে তার অসহায়তা ব্যক্ত করেন এবং পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ভারতের সিদ্ধান্ত নড়চড় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের লন্ডনগামী ফিরতি বিমানে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
লন্ডনে নামার মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যেই স্কাইপ কলে তিনি দিল্লির মিডিয়ার সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হন। লর্ড কার্লাইল সেখানে বলেন, ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আমার শ্রদ্ধা চুরমার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক চাপের মুখে তারা যেভাবে নতি স্বীকার করলো এবং সত্তর বছর বয়সী একজন পার্লামেন্টারিয়ানের সঙ্গে যে আচরণ করল তাতে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত, কৈফিয়ত দেওয়া উচিত। তিনি পুরো বিষয়টি শিগগির লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন বলেও জানান।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, লর্ড কার্লাইলকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হলো কি হলো না, সেটা কথা নয়। তিনি বলেন, কিন্তু তাকে কেন বাংলাদেশের ভিসা দেওয়া হলো না? তাকে তো খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে লর্ড কার্লাইলকে ভারতে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, লর্ড কার্লাইলের উদ্দেশ্য ছিল ষড়যন্ত্র। ভারত সরকার তা বুঝতে সমর্থ হয়েছে। আমরা যেমন আমাদের ভূখ- ব্যবহার করে কাউকে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেই না, তেমনি ভারতও তাদের ভূখ- ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেয়নি কার্লাইলকে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার আপিল চলাকালে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইল যদি কোনো বিরূপ মন্তব্য করেন, তবে তা আদালতের নজরে আনা হবে। তারপরও তিনি যদি সংবাদ সম্মেলন করেন অবশ্যই আদালতের নজরে আনবো। খুরশীদ আলম আরো বলেন, তিনি (কার্লাইল) একজন হাইপ্রোফাইল ল’ইয়ার। কিন্তু তিনি যে কাজটা করতে যাচ্ছেন, সেটা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক। তিনি ভারতে গিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের (বাংলাদেশের) বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করবেন, সমালোচনা করবেন, এটা কোনো সুস্থ-বিবেকবান মানুষ গ্রহণ করবে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads