ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার আর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে থেরেসা মে ইইউকে ব্রেক্সিট চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার আপিল করলে এ কথা জানান তারা। তাই আগের করা ব্রেক্সিটের খসড়া চুক্তি নিয়েই থেরেসা মে’কে হাউজ অব কমন্সের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিবিসি ও সিএনএনের খবর।
ব্রেক্সিট চুক্তিতে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে সে বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের কাছ থেকে আইনি নিশ্চয়তা চান থেরেসা মে। কিন্তু এ ব্যাপারে আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই বলে তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনে ইইউ নেতাদের কাছ থেকে আরো আশ্বাসের প্রয়োজন ছিল মে’র। তা না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে এখন আগের চুক্তি নিয়েই নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইইউ নেতাদের বলেন, যদি সংসদ সদস্যদের উদ্বেগকে বিবেচনায় নেওয়া না হয় তাহলে চুক্তিটি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লাউড জাঙ্কার বলেন, এ সংক্রান্ত নানারকম ব্যাখ্যা থাকতে পারে কিন্তু আবারো আলোচনার বিষয়ে আগ্রহী নই। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা আসলে কি চায় সেটা স্পষ্ট করতে হবে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ প্রস্তুতি হিসেবে কমিশন তথ্য প্রকাশ করবে বলেও জানান তিনি।
নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নিজ দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়লেও শেষমেশ উতরে যান তিনি। গত বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ওই ভোটাভুটিতে থেরেসা মে’র দল কনজারভেটিভ পার্টির মোট ৩১৭ জন এমপির মধ্যে ২০০ জন তার নেতৃত্বের পক্ষে ভোট দেন। বাকি ১১৭ জন ভোট দেন বিপক্ষে। অনাস্থা ভোটে টিকে যাওয়ায় পর দিনই ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলনের উদ্দেশে রওনা দেন মে। সেখানে ইইউ নেতাদের ব্রেক্সিট চুক্তি নতুন করে পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নবায়ন ইইউ নেতাদের : এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরো ছয় মাসের জন্য নবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই একই বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তারা বলেছেন, ইউক্রেন সঙ্কট সমাধান সংক্রান্ত মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নবায়ন করা হলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, ওই ইউনিয়নের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সর্বসম্মতভাবে নবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউরোপের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য রাশিয়াকে মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়ন শর্ত বেঁধে দিয়েছিল। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের মধ্যে আলোচনার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘর্ষরত দেশটির সেনাবাহিনী ও রুশপন্থি অস্ত্রধারীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেবে এবং পরিপূর্ণভাবে যুদ্ধবিরত পালন করবে। কিন্তু ইউক্রেনের সমর্থক ইইউ দাবি করছে, রাশিয়া ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তারপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা নবায়ন করে আসছে ইইউ।