• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রথম মামলায় জিতে দেখালেন রূপান্তরকামী আইনজীবী!

ক্লায়েন্টর সঙ্গে রূপান্তরকামী আইনজীবী সায়ন্তনী

ছবি : ইন্টারনেট

বিদেশ

প্রথম মামলায় জিতে দেখালেন রূপান্তরকামী আইনজীবী!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

একেই বলে কামব্যাক! রোজ অপমানিত হয়ে একটা সময় লড়াইয়ের ময়দান থেকে বাধ্য হয়ে সরে গিয়েছিলেন তিনি। তিন বছর পর ফের আদালতে এসেই চমক দিলেন। তার প্রথম মামলা জিতে দেখালেন রাজ্যের প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী। জন্ম সোনারপুরে। ছোটবেলা থেকেই বাড়ির একমাত্র ছেলের শরীরে ছিল মেয়েলি ভাব। ব্যাপারটা যেমন নিতে পারেননি তার অনেক পরিজন, তেমন পাড়ার লোকেও তাকে দেখত বাঁকা চোখে। বয়ঃসন্ধিতে পা দিয়ে সায়ন্তন বুঝতে পারেন, তার শরীর পুরুষের হলেও মনটা নারীর। স্কুল শেষ করে হাজরা ল' কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। কলেজে পড়তে পড়তে অনেক লড়াই করে লিঙ্গ পরিবর্তন করে নেন। সায়ন্তন থেকে হয়ে ওঠেন সায়ন্তনী। তার কথায়, 'ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেবন্ধু কম। মেয়েদের সঙ্গে মিশতে বেশি ভালো লাগত। তাদের সঙ্গে রান্নাবাটি, পুতুল খেলা করতাম। পুতুলের বিয়ে দিতাম। লুকিয়ে মায়ের শাড়ি, কাজল পরতাম। ক্রিকেট-ফুটবলেও আগ্রহ ছিল না।'

এলএলবি এন্ট্রান্সে রাজ্যে তৃতীয় র‍্যাঙ্কে স্থান ছিল তার। তাতে অবশ্য অপমানের ভার কিছু কম হয়নি তার। আইন নিয়ে পড়ার সময়ও সহপাঠীরা রোজ তাকে ব্যঙ্গ করতেন। পোশাক-পরিচ্ছদ, হাঁটাচলা নিয়ে টিটকিরি দেওয়া হত নিত্যদিন। তবু, দাঁতে দাঁত চেপে পড়াশোনা শেষ করে আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। দু'বছর আলিপুর আদালতে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিসও করেন। কিন্তু সেখানে অভিজ্ঞতা সুখের ছিল না একদমই। সায়ন্তনী জানাচ্ছেন, 'কিছু সিনিয়র আইনজীবী রোজ অপমান করতেন। আদালতে এলেই শুরু হত টোন-টিটকিরি।' বাধ্য হয়ে আদালতে আসা বন্ধ করে দেন তিনি। সেটা ২০১৫ সাল।

এর পর টানা তিন বছর আদালতে আসেননি সায়ন্তনী। নাচ শেখানোর কাজে মন দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘোর দুঃসময়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন মাকে। মা আবার প্র্যাকটিস শুরু করার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। তিনি চেয়েছিলেন, সমাজকে অপমানের যোগ্য জবাব দিক মেয়ে। চলতি বছরে আলিপুর আদালতের আইনজীবী বিকাশ গুছাইত তার এজলাসে জুনিয়র হিসেবে নিয়োগ করেন সায়ন্তনীকে। এ মাসে সায়ন্তনী একটি বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা জিতেও যান। তার পরই আইনজীবী মহলে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি। বিকাশ বলেন, 'রূপান্তরকামী বলে কাউকে সমাজে ব্রাত্য করা যায় না। মামলা জিতে ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দিয়েছে।'

আর জয়ী আইনজীবী নিজে কী বলছেন? সায়ন্তনীর কথায়, 'অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়িনি কখনো।' আজও হাল ছাড়ছেন না তিনি। রাজি নন থামতেও। শপথ নিয়েছেন, সমাজের বাঁকা চোখের বিরুদ্ধে রূপান্তরকামীদের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads