• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের নিরাপদ রুট এখন ইন্দোনেশিয়া!

মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের নিরাপদ রুট এখন ইন্দোনেশিয়া

ছবি : সংগৃহীত

প্রবাস

মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের নিরাপদ রুট এখন ইন্দোনেশিয়া!

  • আশরাফুল মামুন
  • প্রকাশিত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশ সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্দোনেশিয়াতে চালু হয় অন অ্যারাইভাল ভিসা। ভ্রমণ পিপাসু বাংলাদেশীদের নির্বিঘ্নে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করার সুযোগ তৈরি হয় দেশটিতে। আর সেই অন অ্যারাইভাল ভিসা কে পুঁজি করে গড়ে উঠছে মানব পাচারকারীদের নিরাপদ রুট।

ইন্দোনেশিয়ার বালি ও মেদান দীপ কে ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে নৌকা এবং ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানে জাকার্তায় নেমে চলে যাচ্ছে সোরাবাইয়া,বালি,বাতাম এবং মেদানে। ইন্দোনেশিয়ার মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার পর তাদেরকে জোড়ো করা হয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়। সুযোগ বুঝে পাচারের অপেক্ষায় থাকা হয় দীর্ঘদিন। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হয়।

অতি সম্প্রতি সময়ে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপকভাবে মেরিন ফোর্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কারণে দীর্ঘদিন আটকে থেকেও ইন্দোনেশিয়ার মেদান শহর থেকে গ্রেফতার হতে হলো মালয়েশিয়ায় পাচারের অপেক্ষায় থাকা প্রায় দুই শতাধিক বাংলাদেশিকে । এর আগেও পাচারের অপেক্ষায় থাকা বহু বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয় বালি থাকে। অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টাকালে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ৩০ বাংলাদেশিকে আটক করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ও মেরিন পুলিশ।

যাদের বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ৫১ বছর। মেরিন পুলিশের কমান্ডার (পিপিএম) সহকারী কমিশনার রোজমান ইসমাইল বলেন, সাগরপথে ইন্দোনেশিয়া থেকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় একটি ট্রলারসহ এ ৩২ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের মামলা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮সালের ২৪ মার্চ থাইল্যান্ড হযে মালয়েশিয়া অনুপ্রবেশকালে ১০ জন বাংলাদেশিসহ ২১ জন মিয়ানমার নাগরিককে আটক করে মালয়েশিযা ইমিগ্রেশন পুলিশ।

ইন্দোনেশিয়া পুলিশ মেদান শহরের পাশ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী এসব বাংলাদেশিকে সন্দেহভাজন বাসিন্দা হিসেবে আটক করে। গত মঙ্গলবার ওই দোতলা ভবনে অভিযান চালিয়ে ১৯২ ব্যক্তিকে খুঁজে পায় তারা। আটককৃতদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স বিশের কোঠায়।

দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি মেদান শহরের দোতলা একটি ভবনে অবস্থিত ছোট ছোট দোকান ঘরে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়া ওই সব মানুষের বেশিরভাগই অভুক্ত। তাদের ধারণা, বাংলাদেশ থেকে এসে গত কয়েক মাস ধরে এখানে বসবাস করছে তারা। কাজের আশায় পার্শ্ববতী দেশ মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা।

মেদান শহরের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থার প্রধান মোনাং শিহিতি জানায়, ‘আমরা ধারণা করছি তারা নৌকায় করে এখানে এসেছে। তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। আমরা এ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

দুই দিন যেতে না যেতেই ৮ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৫৯ বাংলাদেশিকে। আর এতে করেই নড়েচড়ে বসেছে ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসন বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বাংলাদেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন এ্যারাইভাল' ভিসা চালু কে পুঁজি করে মানব পাচারকারীরা। সাম্প্রতিককালের ঘটনার জেরে এখন শুধু ইন্দোনেশিয়াই নয় নড়েচড়ে বসেছে মালয়েশিযা সরকারও।
দু‘দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে করে কোন প্রকার নৌকায় ভেসে অভিবাসীরা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পারে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের কারণে ইতোমধ্যে মালয়েশিযা আরো নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছ ইন্দোনেশিয়াকে।

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি এবং ভাগ্যন্বেষণে দালালের প্ররোচনায় পড়ে বিদেশ যেতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিচ্ছে শ্রমিকরা। বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ এ ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেঁছে নিচ্ছে। এতে অপহরণ ও অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে দেশের এই জনশক্তি, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মানব পাচারকারীরা থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী ওই এলাকা ব্যবহার করে থাকে। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য এসব অভিবাসীদের সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় তারা।

নানা বিধিবিধান ও নজরদারি সত্ত্বেও মানবতাবিরোধী এই অপরাধ যেন কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাাপ্ত টহল ও নজরদারি না থাকায় বরাবরই সক্রিয় থাকছে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দালাল চক্র। তবে মাঝে মধ্যে আটক হলেও ফের দেখা যায় সেই পুরনো চিত্র। এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। ফলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারীরা।

মানবপাচার বন্ধে নিতে হবে নানান উদ্যোগ। বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। মানবপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সক্রিয় করতে হবে মাঠ পর্যায়ের কর্যক্রম। আর অবৈধ মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন কোন রকম ছাড়া দেওয়া যাবে না। কঠোর হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। মোদ্দাকথা অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানোর এই পথ বন্ধে নিতে হবে যুগান্তকারী ভুমিকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads