• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
অস্ট্রিয়ায় মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

অস্ট্রিয়ায় মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অস্ট্রিয়া সরকারের মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে দেশটির আদালত। আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে এসব মসজিদ তৈরি ও পরিচালিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মুখপাত্র এ কথা জানান। খবর আল জাজিরা।

ইসলামিক রিলিজিয়াস কম্যুনিটি অব অস্ট্রিয়ার (আইজিজিও) প্রধান উমিত ভুরাল এক বিবৃতিতে জানান, সরকার ছয়টি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ভিয়েনার আদালত সরকারের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য ইস্যুতে আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

গত বছর দেশটির চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জর ডানপন্থি সরকার সাতটি মসজিদ বন্ধ এবং অনেক ইমামকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এক সংবাদ সম্মেলনে কুর্জ জানান, রাজনৈতিক ইসলামকে ঠেকানোর অংশ হিসেবেই তার সরকার এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সে সময় তিনি আরো বলেন, স্বরাষ্ট্র ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দেখা গেছে, সাতটি মসজিদের কার্যক্রম বৈধ নয়।

অভিযুক্ত সাতটি মসজিদের মধ্যে একটি মসজিদ ছিল তুরস্কের সহায়তায় নির্মিত। গত জুনে রাষ্ট্রের নিয়মবিধি পূর্ণ করার পর সেটি আবারো খুলে দেওয়া হয়।

দেশ থেকে তুরস্কের অর্থায়নে পরিচালত ৬০ ইমাম ও তাদের পরিবারকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অস্ট্রিয়া। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হার্বাট কিকল এ কথা বলেছেন। অস্ট্রিয়া সরকরের এ ব্যবস্থা গ্রহণকে ‘রাজনৈতিক ইসলামের ওপর কঠোর পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রিয়া জোট সরকারের অংশীদার ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টির কিকল আরো বলেন, আমরা ৬০ ইমাম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে দেড়শ ব্যক্তি দেশটিতে বসবাসের অধিকার হারাতে চলেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষের তদন্তের পর সাতটি মসজিদও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সম্প্রতি একটি ছবি প্রকাশ হয়। ফল্টার উইকলিতে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ছদ্মবেশে কিছু যুবক কুচকাওয়াজ করছে, স্যালুট দিচ্ছে, তুরস্কের পতাকা নাড়ছে এবং মৃতদের নিয়ে খেলা করছে। লাশগুলো পরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয় এবং সেগুলো পতাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। দেশটির রক্ষণশীল পিপলস পার্টির চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ হুশিয়ার দিয়ে বলেন, সমান্তরাল সমাজ, রাজনৈতিক ইসলাম ও মৌলবাদের ঠাঁই এদেশে হবে না। কিকল জানান, বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইমামদের বিরুদ্ধে তার্কিশ ইসলামিক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের (এটিআইবি) যোগসাজশ রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক তিক্ত। গত সপ্তাহে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান কুর্জকে আক্রমণ করে বলেন, অসৎ চ্যান্সেলরের সঙ্গে আমাদের একটা সমস্যা রয়েছে। তিনি চার পাশে তার গুরুত্ব ছড়িয়ে রেখেছেন এবং নাটক করছেন।

অস্ট্রিয়ার এ পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে ২০১৫ সালের একটি আইন। এতে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর জন্য বিদেশি অর্থ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণের কথা বলা হয়েছে। দেশটিতে প্রায় ছয় লাখ মুসলিম বসবাস করে যাদের বেশির ভাগই তুর্কি বংশোদ্ভূত।

অস্ট্রিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী গারনট ব্লুমেল বলেছেন, তুর্কি মসজিদগুলো বন্ধ করা হচ্ছে এ জন্য যে, ডানপন্থি উগ্রবাদ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে এবং অস্ট্রিয়ার ইসলামিক ফেইথ কমিউনিটির লাইসেন্স নেই। তিনি আরো বলেন, আরব মসজিদগুলোর বিরুদ্ধে সালাফি মতবাদ প্রচারের অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য এগুলো বন্ধ করা হবে।

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হার্বাট কিকল বলেন, ৪০ ইমামের অবস্থান অনুমতিপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ ইমামদের নিয়োগ দিয়েছে এটিআইবি নামে একটি তুর্কি সংস্থা, যারা মসজিদগুলো দেখাশোনা করে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দুটি অনুতিপত্র বাতিল করা হয়েছে এবং পাঁচজন ইমামের অনুমতির আবেদন নাকচ করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ার এ পদক্ষেপকে ইসলামের প্রতি বৈরিতা ও বর্ণবাদী আখ্যায়িত করে এটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক সরকার।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইবরাহিম কালিন এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, খোঁড়া অজুহাতে অস্ট্রিয়া সরকারের সাতটি মসজিদ বন্ধ ও ইমামদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেশটিতে চলমান ইসলামবিরোধী, বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক জনতুষ্টিজনিত কার্যকলাপের প্রতিফলন। রাজনৈতিক সহজ ফায়দার জন্য এটি মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানানো।

অস্ট্রিয়া সরকারের নীতিগতভাবে বিতর্কমূলক এ আচরণ আন্তর্জাতিক আইনগত নীতিমালা, সামাজিক অভিন্নতা নীতি, সংখ্যালঘু অধিকার ও সহাবস্থান নীতির খেলাপ। তিনি আরো বলেন, সব পরিস্থিতিতেই ইসলামভীতি ও বর্ণবাদকে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পরিহার করা উচিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads